বৃষ্টির কবিতা -Rain Poem in Bengali

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে জানি নে, জানি নে কিছুতেই কেন যে মন লাগে না ।। ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে, আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে।  হ্যা বৃষ্টির দিনে এরকম গান গাইতে বা নানান রকমের বৃষ্টির কবিতা পাঠ করতে কার না ভালো লাগে বলো। বৃষ্টির মনসুন আসলেই শুরু হয় ফেসবুক আর হোয়াটস্যাপ এর কবিতার আর গানের ছড়াছড়ি তাই আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি এক গাছ কবিতা। আশা করি অনেকটা ভালো লাগবে।

বৃষ্টির রোমান্টিক কবিতা – Rain Poem in Bengali

1.বৃষ্টি এসে জানালার শার্শিতে
নুপুর বাজায় !
বৃষ্টি এসে চোখের পাপড়িতে নাচে
বৃষ্টি নামায়!
ভিঁজে ঘাস, ভিঁজে মাটি,
ভেঁজা কবুতর গুঁটি শুটি
নাচের মুদ্রায় দোলে গাছ
গাছের পাতায় বৃষ্টির নাচ,
উৎসব! উৎসব!
বৃষ্টি নেমেছে! বৃষ্টি!
বৃষ্টি ভেঁজাবে সব!

2. আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে–
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।

রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের ‘পরে
নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে।
এসেছে এসেছে এই কথা বলে প্রাণ,
এসেছে এসেছে উঠিতেছে এই গান,
নয়নে এসেছে, হৃদয়ে এসেছে ধেয়ে।
আবার আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে।

 

3. কত বৃষ্টির রীম্ঝিম শব্দ বুকে নেয়া স্তব্ধ মেঘ!
কতো ঘুমন্ত বৃষ্টির ফোটা বুকে নেয়া ক্লান্ত মেঘ!
কত তৃষ্ণার্তের তীব্র চাওয়া বুকে নেয়া মৌন মেঘ!
একটু একটু করে জমানো কথার মত তারা তবু,
হাতে হাত ধরা বৃষ্টির ফোটা সব
মেঘ ভেঙ্গে যখন পৃথিবীতে নামে,
আমরা হাতে হাত ধরে পথে নামি,
আমরা দল বেঁধে গান গাই,
আমরা পবিত্র হই সেই বৃষ্টির স্নানে,
প্রাণ ফিরে আসে সব মৃত প্রায় ফসলের প্রানে,
চাতক পাখির ঠোঁটে হীরকের মত বৃষ্টির জল,
প্রানবন্ত পৃথিবী! দেখি ঘুম ভাঙ্গা রিমঝিম সব বৃষ্টির ফল।

4. বলেছে সে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে দুহাত মেলে,
নাজুক কলমি লতার মতো মেঘের সরবোরে।
আমি তো মেঘের গোপন খবর আগাম জানতে পারি,
হিংসায় জ্বলে পুরে মরি; কতো দীর্ঘ হবে এবার আষাঢ় মাস?

5. কি জানি কতো যুগ আগের প্রেমিক তার বৃষ্টি হয়ে আসে,
ষড়যন্ত্রের মতো সুবিন্যস্ত অভিসন্ধি নিয়ে তির্যক তীরের মতো ,
চুলের গোঁড়া থেকে নাভির গভীরে ছুড়ে দেয়া সুদীর্ঘ চুম্বন
চোখের পাতা ও ঠোঁটের ডগা বেয়ে বাতাবী লেবুর মতো বুকে!
হিমালয়ের শীত পেটে নিয়ে সরসর সাপের মতো একেবেকে,
কোথায় না ছুঁয়ে যায় তার চঞ্চল প্রেমিকের গোপন অসভ্য আঙ্গুল !

6. শরীরের তাহার প্রশ্রয়ের আলিঙ্গন, আহ্লাদে গলে বৃষ্টির ফোঁটা,
ষড়যন্ত্রের মতো সুবিন্যস্ত অভিসন্ধি, সে কি বুঝেও বোঝেনা তা!
আবেশে তাহার চোখ কাঁপে তির তির, তৃপ্তির শিহরণ ভেজা সারা গায়ে।
আমি হিংসায় দাউ দাউ করি আগুনের মতো, জিঘাংসার ব্রত বুকে নিয়ে।

7. হয়তো সহস্র জনম পরে পবিত্র বৃষ্টি হয়ে জন্ম নেবো এই ঘোর আষাঢ়ে: শত তপস্যার ফলে,
ভালবাসার চাবুক চালাবো তার সমস্ত শরীরে, প্রতিশোধের মতো নির্দয়ে, ভিজাবো সে জলে।
অধর নিংড়ে তাহার নিতম্ব ছুঁয়ে দেবো নিশ্চয়, অবাধে নির্ভয়ে; আমাকে নিও চিনে,
আষাঢ়ের সুবিন্যস্ত বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায়, কামুক বর্ষা ঋতুর বৃষ্টিময় প্রতিটি দীর্ঘ দিনে।

8. নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন, ধবলীরে আনো গোহালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,
রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।।

শোনো শোনো ওই পারে যাবে বলে কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।
পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল ছলছল উঠে বাজি রে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।।

ওগো, আজ তোরা যাস নে গো, তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।
ঝরঝর ধারে ভিজিবে নিচোল,
ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল,
ওই বেণুবন দুলে ঘনঘন পথপাশে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

9. বৃষ্টি এলো কাশবনে
জাগলো সাড়া ঘাসবনে
বকের সারি কোথায় রে
লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে।

নদীতে নাই খেয়া যে
ডাকলো দূরে দেয়া যে
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটলো আবার কেয়া যে।

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা
বৃষ্টি-বাদল দেয় দোলা
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে
যায় দাঁড়িয়ে পথ ভোলা।

মেঘের আধার মন টানে
যায় সে ছুটে কোনখানে
আউস ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের মাঠ পানে।

10. কিছুটা আলো কালো মেঘের

রেলিঙে ছিল ঝুঁকে।
কিছুটা ছিল আড়ালে, আর
কিছুটা সম্মুখে।
ছবিটা তবু পূর্ণ নয়,
খানিক ছিল বাকি,
পৃথিবী থেকে আকাশে তাই
উড়াল দেয় পাখি।
 
সারাটা দিন বৃষ্টি আর
বাতাসি আস্ফোটে
ছিল না যার চেতনা, যেন
ধীরে সে জেগে ওঠে।
দিনাবসানে মাঠকোঠার
দরজা ধরে ঠায়
দ্যাখো সে ওই দাঁড়িয়ে আছে
শ্রাবণ-সন্ধ্যায়।
11.পরিত্যক্ত বিকেলে একটি ঝাঁক বৃষ্টি
হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়লো এসে।
সাত তাড়াতাড়ি গোধূলি রঙবাহার
পাহাড়ি আলখাল্লায় লুকিয়ে পড়লো,
পাহাড় জবুথবু যেন জানে না কিছু।
এবার বৃষ্টি কেবল বৃষ্টি ঝমাঝম —
বঙ্গোপসাগরী অকাল বায়ুর ডানা
বৃষ্টি ঝরায় মত্ত উল্লাসে অবিরাম।
একাকী নির্জনে এক দুঃখী কণ্ঠস্বর
কান্না ঝরায় মাতাল বৃষ্টির সঙ্গমে,
চুল্লির জ্বলন্ত কার্বন কখন শেষ
ভিজে যায় ঐতিহাসিক আলমারিটা,
জবজবে স্মৃতিরা সব হারিয়ে যায়
গরান সেগুন শালের ঘন ছায়ায় —
আজ বৃষ্টি শুধু ঐকান্তিকেই কাঁদায়।
12. বৃষ্টি বৃষ্টিজলে জলে জোনাকি
আমি সুখ যার মনে
তার নাম জানো কী ?
মেঘ মেঘ চুল তার
অভ্রের গয়না
নদী পাতা জল চোখ
ফুলসাজ আয়না।
বৃষ্টি বৃষ্টি
কঁচুপাতা কাঁচ নথ
মন ভার জানালায়
রাতদিন দিনরাত।
ঘুম নেই ঘুম নেই
ছাপজল বালিশে
হাঁটুভাঙা নোনা ঝিল
দুচোখের নালিশে।বৃষ্টি বৃষ্টি
জলেদের চাঁদনি
দে সোনা এনে দে
মন সুখ রোশনি।
13. নিঃশব্দতায় আছে নিঃসঙ্গ প্রাণ এক
শব্দহীনতায় পরিপূর্ণ বাড়ি এক
তার মাঝখানে পুরোনো একটি প্রাণ।
শব্দহীনতাও যে মুখর হতে পারে
জানা ছিলো না তো, সেই শুধু জানে
বিশ্রস্ত বেহালার বিশ্রম্ভালাপে শোক।
আজ ঘরের ভেতরে আর এক ঘর
এই বৃষ্টির দাপটে ঠাণ্ডা হয়ে গেলো,
বৃষ্টির ঝাপটা আনে স্মৃতির দঙ্গল
রুদ্ধ দরজায় কড়া নেড়ে ক্লান্ত ওরা
প্রাঙ্গণে নেমে শুয়ে পড়ে ঝুম বর্ষণে
মৃত সৈনিকের মত সারিবদ্ধ হয়ে।
শুধু সারাকাল বৃষ্টিধারা ঝুম ঝুম
বহুকাল জমে থাকা বহু মানুষের
অশ্রু ধারার মতন ঝরে ঝরে কাঁদে।
তাই ভেতর ঘরে একা মানুষেরই
একাকী বিষণ্ণ উৎসবে শেষ কান্নায়
শেষ মোমবাতিটিও পুড়ে নিভে যায়।
14.কলরব মুখর জনপদ নিঃস্তব্ধ
আজ শুধু হঠাৎ বৃষ্টির আন্দোলন,
রক্তের রক্তিম আবহে নিয়েই যায়।
বহু সাম্প্রদায়িক জন জনপদে ছিল
মিলেমিশে সুগন্ধিত মশলার মত।
বিভ্রান্ত চোখ দেখে আজ রক্তিম ধারা
এ বৃষ্টি তো বৃষ্টি নয় শোণিত বর্ষণ।
আর একা এক ঘরে একা এক লোক
দাঙ্গায় নিহত স্বজন নিয়ে একেলা
বাকি দিনগুলি গুনে গুনে হয়রান।
একদিন এই ঘর বসত ভরন্ত
গমগমে ছিল, সুখ দুঃখ হাসি কান্না
নানা কিছু গায়ে গা মিশিয়ে থেকেছিলো,
বিবাদ রহস্য প্রেম এতো সব ছিলো —
আজ আর কোন কিছু নেই শূন্য সব,
সময়ের কঠোর ডানায় চেপে আসে
আগুন বৃষ্টির স্রোতের মতন আসে
হালকা ডানায় সব কিছু উড়ে গেলো
ফেরেনি তো আর কোনদিন কোনকালে।

15.পৃথিবী যেন পৃথিবী নয়,

আলোর সরোবর;
আলোয় ভাসে বৃক্ষলতা
সমূহ বাড়িঘর।
অবাক হয়ে আকাশে চেয়ে
দাঁড়িয়ে আছে একা,
বোঝে না কেন এমন ছবি
হঠাৎ দিল দেখা।
 
আকাশে আলো ছড়িয়ে যায়,
বাতাস মধুময়।
নিরুচ্চার কে যেন বলে
চলছে : জয়, জয়!
যেখানে যায়, যেদিকে চায়,
আলোয় মাখামাখি।
সাঁজবেলায় আলোর জলে
সাঁতার কাটে পাখি।