প্রেমের উপন্যাস – Love Novel

উপন্যাস লেখার নির্দিষ্ট নিয়ম বা কাঠামো নেই। তবে সচরাচর এগুলো ছোটগল্পের তুলনায় বৃহদাকার হয়ে থাকে। অধিকন্তু উপন্যাসের আখ্যানভাগ ও চরিত্রের বিস্তার লক্ষিত হয়। হ্রস্ব দৈর্ঘ্যের উপন্যাসকে অনু-উপন্যাস বলা হয়ে থাকে। উপন্যাসে পরিবেশ, বর্ণনা, রূপরেখা, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনের কাহিনীকে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে তার মধ্যে জীবনের কোনো অর্থ বা ভাষ্য প্রকাশ করা হয়। জীবনের এই রূপায়ণ উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের কাছে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। নাটক, রাজাবলি (ধারাবিবরণী), কাব্য ইত্যাদি থেকে উপাদান গ্রহণ করে উপন্যাস রচনারও প্রথা রয়েছে। বস্তুত: উপন্যাসের রূপ অত্যন্ত নমনীয় ও মিশ্র। তাই এর নানা রূপভেদ চোখে পড়ে।

একঝলকে দেখে নেওয়া যাক hide

উপন্যাস কাকে বলে

উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘাবয়ব বর্ণনাত্মক কথাসাহিত্য। কবিতানাটক ও ছোটগল্পের ন্যায় উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। আধুনিক সাহিত্যে এটি তুলনামূলকভাবে নতুন আঙ্গিক। যিনি উপন্যাস রচনা করেন তিনি ঔপন্যাসিক।

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে উপন্যাস সর্বাধুনিক এবং সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় শাখা। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে প্রথম আধুনিক উপন্যাস রচিত হয়।ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিভাগে বাংলা ভাষায় প্রথম উপন্যাসের প্রবর্তন হয়। ইংরেজি ভাষায় ড্যানিয়েল ডিফো ও বাংলা ভাষায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস ধারার প্রথম সার্থক রূপকার। তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশে এই ধারার বিচিত্র ও বহুমুখী বিস্তার লক্ষ্য করা যায়।

প্রেমের উপন্যাসের কথা বলার আগেই আমাদের জানতে হবে উপন্যাস এর ব্যাপারে যেটা ওপরে আলোচনা করা হলো। আমরা সরাসরি জেনে নেবো এমন বেশ কিছু

1.’শেষের কবিতা’ ও ‘গোড়া’ – রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর 

লেখা ও প্রকাশের দিক থেকে শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি লেখেন ১৯২৮ সালে ব্যাঙ্গালোরে, স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রয়াসে সেখানে থাকবার সময়ে। শেষের কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসী’তে, ধারাবাহিকভাবে ভাদ্র থেকে চৈত্র পর্যন্ত। অনেকে একে কবিতার বই ভেবে ভুল করে। আদতে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাস । 

2.’প্রদোষে প্রাকৃতজন’ – শওকত আলী 

প্রদোষে প্রাকৃতজন বাংলাদেশের স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক শওকত আলী রচিত একটি বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে।১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় প্রদোষে প্রাকৃতজন প্রকাশিত হয়েছিল এবং ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল দুষ্কালের দিবানিশি । ১৯৮৪ সালেই প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএল দুখন্ড একত্রিত করে প্রদোষে প্রাকৃতজন নামে প্রকাশ করে।[৩] তুর্কিদের আক্রমণ ও সেন রাজাদের সময়য়ে বঙ্গদেশের প্রাকৃতজনদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ উপন্যাসে।

3.’লৌহকপাট’ – জরাসন্ধ (ছদ্দনাম) আসল নাম চারুচন্দ্র চক্রবর্তী 

চাকরির কারণে জেল জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে লেখকের। কয়েদীদের কাছ থেকে শুনেছেন তাদের অপরাধের কাহিনী। সেসব কাহিনীর আলোকে লেখা ‘লৌহকপাট’। প্রথম তিনখন্ড চাকরিজীবনে প্রকাশিত। শেষখন্ডটি অবসরের পর প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখার বৃহত্তর অংশ জেলের বন্দীদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত ।এছাড়া ছোটগল্প এবং ছোটদের জন্য লেখা গল্পও তার বেশ কিছু আছে। তার শিশুদের জন্য নিবেদিত কিছু বই এ প্রথমদিকে তার মূল নাম প্রকাশিত হয়েছিল । তাঁর প্রথম উপন্যাস “লৌহ- কপাট”১৯৫৩ সালে ১লা মে প্রকাশিত হয়।

4.’অন্তর্লীনা’ – নারায়ণ সান্যাল 

আধুনিক লেখকদের মধ্যে নারায়ণ সান্যাল এক গোষ্ঠীর পাঠকের কাছে বিপুল ভাবে জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার কারণ তাঁর অনবদ্য লেখার টান, বিষয়ের বৈচিত্র্য এবং সময়বিশেষে নিখুঁতভাবে পাঠকের আবেগকে ছুঁতে পারার ক্ষমতা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পাঠকেরা প্রথম নারায়ণ সান্যালের ভক্ত হয়ে পড়েন “বিশ্বাসঘাতক” বা “প্রবঞ্চক” পড়ে। আমারও নারায়ণ সান্যালের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় এই দুটি বইয়ের মধ্যে দিয়েই। ভাল লেগেছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু সত্যিকারের ভক্ত হয়ে পড়ি যে দুটি বই পড়ে সেগুলো হল “হে হংসবলাকা” আর “অন্তর্লীনা”

5.’শুন বরনারী’ – সুবোধ ঘোষ 

শুন বরনারী‘ সহজ সরল একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসকে সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাসও মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। উদাহরণ, সুবোধ ঘোষের শুন বরনারী। উপন্যাসের কাহিনী এই রকম- হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হোমিও হিমু। পেশায় হোমিও চিকিৎসক। যদিও কেউ তাকে ডাক্তারি করতে দেখেনা। লোকের ছেলেপেলে পড়িয়ে রোজগার চলে।

6.’কবি’- তারাশঙ্কর 

কবি প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা সামাজিক উপন্যাস। কবিয়াল, ঝুমুরদল সহ ঐ সময়ের জীবনযাত্রার প্রেক্ষিতে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। নিচু বংশে জন্মানো নিতাইচরণ গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়ে কবি হয়ে ওঠে। সে কবিয়ালদের দোহার হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু গ্রামের পালাগানের আসরে এক প্রতিষ্ঠিত কবিয়ালের অনুপুস্থিতিতে তার সামনে সুযোগ খুলে যায় নিজের কবিয়াল পরিচয় গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয়ার। অভিজ্ঞ কবিয়াল মহাদেবের কাছে সেই দফায় হেরে গেলেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়। বাবুরা রীতিমত অবাক- ‘ডোমের ছেলে পোয়েট!’ নিতাইচরণের পারিবারিক পেশা ছিল ডাকাতি; কিন্তু সে হল অন্যরকম। এমনকি মায়ের অনুরোধ বা মামার শাসনের পরেও সে পড়াশুনো ছেড়ে ডাকাতির দলে নাম লেখায়নি। ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় স্টেশনের মুটে রাজার সাথে। নিতাইয়ের ওপর রাজা’র ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল অগাধ। নিতাইকে সে ডাকত ‘ওস্তাদ’ বলে। এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। মেয়েটার গায়ের রং কাল ছিল বলে গ্রামের লোকজন তো বটেই, রাজা-ও নানা কথা শোনাত। কিন্তু এই মেয়েটার জন্যই নিতাই এর মাথায় একটা পদ তৈরি হয়- ‘কাল যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?’ জীবনের সব জায়গায় অপমান পাওয়া ঠাকুরঝি এই পদ শুনে আন্দোলিত হয়। আর নিতাই এর মনে, অসম্ভব জেনেও, ঠাকুরঝির জন্য গভীর প্রেম জন্মায়। একপর্যায়ে বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়।

7.’তবুও একদিন’ – সুমন্ত আসলাম

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।সুমন্ত আসলাম জন্মেছেন সিরাজগঞ্জে। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে সুমর্মী। তাঁর বাবার নাম মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার এবং মায়ের নাম রওশনারা পারুল।তার বাড়িতে একটি পারিবারিক লাইব্রেরি ছিলো। সেই সূত্রেই ছেলেবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। প্রথম বই প্রকাশ হয়েছিলো সময় প্রকাশন থেকে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’।লেখালেখিই এখন তার পেশা। এক সময় জড়িয়ে পরেন সাংবাদিকতায়। দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদপত্রে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এখনও কাজ করছেন সংবাদপত্রেই।

       

8.’লাল সালু’ – সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ 

লালসালু সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রচিত একটি উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী সৃষ্টি। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ এই উপন্যাসের জন্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এর পটভূমি ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ হলেও এর প্রভাব বা বিস্তার কালোত্তীর্ণ । মূলত গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৪৮ সাল। এটি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রথম উপন্যাস। এটি পরে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

9.’হাজার বছর ধরে’ – জহির রায়হান 

হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে এ উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজী পুরষ্কারে সম্মানিত হন।

নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুল ফোটে। আকাশে পাখি উড়ে- আপন মনে গান গায়। হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে, তাতে আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়া-পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না, অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক, নারীর কোন অধিকার নাই। নারী হাতের পুতুল মাত্র। পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে। নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ, গুরুতর অপরাধ। অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন। পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় “কাশেম শিকদার” আর তার বউ “ছমিরন বিবি” বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাঁই নিয়েছিল এই জায়গায়। সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছে শিকদার বাড়ির।

10.’কাবিলের বোন’ ও ‘উপমহাদেশ’- আল মাহমুদ 

কবি আল মাহমুদ অত্যন্ত সাহসিকতর সঙ্গে এই পরীক্ষায় নিযুক্ত হয়ে সফলতার পদপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ এক অসাধারণ কৃতিত্ব। সংর্বাংশে দ্বিধামুক্ত হয়ে একটি সময়ের শাসনের মধ্যে দুটি ভিন্ন ভাষার জীবনকে তিনি পরস্পরের প্রতি মমতার আকর্ষণে একত্রিত করেছেন। ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা একটি বিপুল সংকটের সময় যখন বিভিন্ন ইচ্ছার সংঘর্ষে মানুষ সত্যকে চিহ্নিত করতে পারছে না। সেই সময় কয়েকটি মানুষ দুটি ভাষার উচ্চারণের পরিধির মধ্যে নিজেদের পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করছে।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 

অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। ২০১২ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইটি ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দী, তুর্কি ও স্প্যানিশ ভাষা অনূদিত হয়েছে।

11.’লোটা কম্বল’ – সঞ্জীব চট্টপাধ্যায়

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি ১৯৩৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং হুগলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহন করেন । তিনি অনেক উপন্যাস,ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন । তাঁর সবথেকে বিখ্যাত উপন্যাস লোটাকম্বল যা দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচনায় হাস্যরসের সাথে তীব্র শ্লেষ ও ব্যঙ্গ মেশানো থাকে ।ছোটদের জন্য তাঁর লেখাগুলিও খুবই জনপ্রিয় । তাঁর সৃষ্ট ছোটদের চরিত্রের মধ্যে বড়মামা ও ছোটমামা প্রধান ।

12.’কড়ি দিয়ে কিনলাম’ –  বিমল মিত্র 

ছোটবেলায় আমার প্রেয় গ্রন্থ ছিল রামায়ণ। বলতে গেলে গল্পে সেই আমার প্রথম পাঠ। গল্পের রস যে কত গভীর হতে পারে, তা সেদিন চোখের জলের সঙ্গে যেমন করে হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম, তারপরে আর কোনও গ্রন্থ পড়ে তা করিনি।“কড়ি দিয়ে কিনলাম হবে?” চশমা পরা এক সম্ভ্রান্ত মহিলা বসে আছেন। কিছু একটা লিখছিলেন। মুখ তুলে বললেন, “বিমল মিত্রের? হ্যাঁ হবে।” এরপর অ্যাসিস্টেন্টকে ডাকাডাকি করে বই বের করা হল। লাল রঙা দুইটা বই। উপরে হলুদের মধ্যে লেখকের নাম আর শিরোনাম লেখা। আর নীচে শাড়ির পাড়ের মত হলদে একটা পাড়।

13.’ন হন্যতে’ – মৈত্রেয়ী দেবী 

ন হন্যতে মৈত্রেয়ী দেবী লিখিত ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। এটির জন্য লেখিকা ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।  রোমানীয় দার্শনিক মিরচা এলিয়েড লিখিত তাদের সম্পর্ক ভিত্তিক উপন্যাস লা নুই বেঙ্গলীর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এই উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবী নিজের বিবৃতি তুলে ধরেছেন।এটি ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেখা হয়।[৩]

১৯৩০ সালে কলকাতায় মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা, প্রফেসর সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর কাছে পড়তে আসেন রোমানিয় মিরচা এলিয়েড। মৈত্রেয়ী দেবীর তখন ১৬ বছর বয়স। মেয়ের বুদ্ধিমত্তায় গর্বিত মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ওনাকে সেই সময় অপেক্ষা সংস্কারমুক্ত শিক্ষার পরিবেশে বড় করেছিলেন। নিজের প্রিয় ছাত্র মিরচা এলিয়েডের সাথে মেয়েকে অধ্যয়ন করতেও উৎসাহিত করেন উনি। মৈত্রেয়ী দেবীর কথায় উনি এবং মিরচা এলিয়েড ছিলেন যেন ওনার বাবার যাদুঘরের দুই প্রিয় নমুনা। এরই মধ্যে মিরচা এবং মৈত্রেয়ী একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাদের গুপ্ত ভালবাসা সম্পর্কে অবহিত হবার পর মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা মিরচাকে তাঁদের বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

14.’তিতাস একটি নদীর নাম’ – অদৈত্ব মল্লবর্মণ

তিতাস একটি নদীর নাম অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। এই একটি উপন্যাস লিখে লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মালো শ্রেণীর লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।

15.’ওদের জানিয়ে দাও’ – শাহরিয়ার কবির 

চুয়াত্তরের নভেম্বরের শেষের দিকে এই উপন্যাসটি সংক্ষিপ্ত আকারে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ের কিছু রাজনৈতিক চরিত্র ও ঘটনা এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। বলা যেতে পারে ঘটনার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে বসে লেখা। গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার সময় মনে হলো, সময়ের পরিধি না বাড়ালে কিছু চরিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই বর্তমান গ্রন্থে এই উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনার সময়সীমা চুয়াত্তরের নভেম্বর থেকে পঁচাত্তরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে।

একটি বিষয় বলা দরকার, বিচিত্রায় তখন বিশেষ কারণে উল্লেখ করতে হয়েছিলো ‘উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্রগুলো কাল্পনিক’ – আসলে তা নয়। তবে কারো প্রকৃত না উল্লেখ করা হয়নি।

16.’পার্থিব’ ও ‘দূরবীন’ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় 

শীর্ষেন্দুর তিনটি মহামূল্য সৃষ্টি – ‘যাও পাখি’, ‘মানবজমিন’ এবং ‘পার্থিব‘। এরমধ্যে … ১৯৮৫ সালে ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র জন্য বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রদান করা হয় তাঁকে, এছাড়া আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার, তারমধ্যে একবার ‘দূরবীন‘ উপন্যাসের জন্য।

17.’প্রথম আলো’ ‘সেই সময়’ এবং ‘পূর্ব পশ্চিম’ – সুনীল গঙ্গপাধ্যায়

 আলো বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের বিখ্যাত বাঙালি কবি ও কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস। দীর্ঘ এই উপন্যাসটি রচিত হয়েছে ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধের পটভূমিকায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আর এক বিখ্যাত উপন্যাস সেই সময়-এ যে কাল-পর্বের কথা আছে ঠিক তার পরের কাল-পরিধি এই উপন্যাসের উপজীব্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে জাতি হিসাবে বাঙালির আত্মসচেতনতা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া এ ঐতিহাসিক উপন্যাসের কেন্দ্রিয় সুর।

সেই সময় একটি বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাস যার উপজীব্য ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনামলের বিকাশমান কলকাতা নগরীর সমাজ এবং মানুষ। বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ উপন্যাসের রচয়িতা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালির নবজাগরণ উপন্যাসটির অন্যতম মূল বিষয়বস্তু। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব চন্দ্র সেন, ডেভিড হেয়ারএবং জন বেথুন এর মতো প্রখ্যাত চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ।

18.’মেমসাহেব’ – নিমাই ভট্টাচার্জ 

কলকাতার দে’জ পাবলিশিং থেকে ১৩৯২ বঙ্গাব্দের মহালয়ায় প্রথম দে’জ সংস্করণে প্রকাশিত হয় ‘মেমসাহেব‘। যুগযুগ ধরে যে প্রেমকে বাঙালি অন্তরে লালন করে এসেছে তারই আরেকটি অনুপম প্রেমের ইতিহাস নিয়ে সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাস। বাঙ্গালীর আবেগ নদীতে নতুনভাবে দোলা দিয়ে পাঠক মহলের কাছে প্রিয় হয়ে আছে ‘মেমসাহেব

19.’পদ্মা নদীর মাঝি’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। এই উপন্যাসের দেবীগঞ্জ ও আমিনবাড়ি পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম। উপন্যাসে পদ্মার তীর সংলগ্ন কেতুপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের বিশ্বস্ত জীবনালেখ্য চিত্রিত হয়েছে। পদ্মা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। এর ভাঙন প্রবণতা ও প্রলয়ংকরী স্বভাবের কারণে একে বলা হয় ‘কীর্তিনাশা’ বা রাক্ষুসী পদ্মা। এ নদীর তীরের নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নেই। শহর থেকে দূরে এ নদী এলাকার কয়েকটি গ্রামের দীন-দরিদ্র জেলে ও মাঝিদের জীবনচিত্র এতে অঙ্কিত হয়েছে। জেলেপাড়ারর মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না-অভাব-অভিযোগ – যা কিনা প্রকৃতিগতভাবে সেই জীবনধারায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা এখানে বিশ্বস্ততার সাথে চিত্রিত হয়েছে। তাদের প্রতিটি দিন কাটে দীনহীন অসহায় আর ক্ষুধা-দারিদ্র‍্যের সাথে লড়াই করে। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের জীবনের পরম আরাধ্য। এটুকু পেলেই তারা খুশি।

পুতুল নাচের ইতিকথা বাঙালি সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে।

উপন্যাস শুরু হয়েছে বজ্রাঘাতে নিহত হারু ঘোষের বর্ণনা দিয়ে। লেখাটা এভাবে উদ্ধৃত করাঃ

খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল।  আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন। হারুর মাথায় কাঁচা-পাকা চুল আর বসন্তের দাগভরা রুক্ষ চামড়া ঝলসিয়া পুড়িয়া গেল। সে কিন্তু কিছুই টের পাইল না।” উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রামের ডাক্তার শশী। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। গ্রামের পটভূমিতে শশী, শশীর পিতা, কুসুম-সহ অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী ও প্রেক্ষাপট। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রেম, বিরহ, দ্বেষ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা কে উপজীব্য করে লেখা এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

20.’সাতকাহন’ ও ‘গর্ভধরিনি’ – সমরেশ মজুমদার

সাতকাহন এক বাঙালি নারীর জীবন সংগরামের সুদীরঘ উপাখযান। ১৯৪৭ এর দেশবিভাগ পরবরতী পরেকষাপটে উপনযাসের কাহিনীর শুরু। পশচিমবঙগের এক চা বাগানে পরকৃতির সাননিধযে বেড়ে ওঠা এক মেয়ে দীপাবলীকে বালযবিবাহের শিকার হয়ে শিশু বয়সেই হতে হয়েছিল বিধবা। জীবনের সকল যনতরণাকে পেছনে ফেলে সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে শিখেছিল।

  • গর্ভধরিনি এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালোমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজছে। এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগোপন করতে হলো হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনো আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলো তাদের একজনের- যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্ৰ আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী।