দোলের কবিতা – দোল উৎসব কবিতা

আমরা সকলেই কবিতা বা ছড়া লিখি । প্রায়ই দেখিহোয়াটস্যাপ বা ফেসবুকের আঙিনায় ফুটে ওঠে সেই কবিতা বা ছড়ার ফুল আর অচিরেই কালের স্রোতে ভেসে যায় সেই সৃষ্টি, আর শুকিয়ে যায় সেই ফুল। এবার দোলে আমার সেই সব বন্ধুদের নিয়েই  না হয় ভাসিয়ে দিলাম আমার ছিন্নপাতার নৌকো খানি । সোনার তরীর পালে এবার বসন্তের হাওয়া বয়ে আনল একরাশ বন্ধুত্বের দোলা । আর যন্ত্রজালে ভাসতে ভাসতে নৌকো খানি পাড়ি দিল কোন্‌ সুদূরে !!!  
বন্ধুরা আমরা অনেক সময় নানান বিষয়ের ওপর বা রাজ্যের নানান ধরণের অনুষ্ঠানের জন্য বন্ধু বান্ধব ও পরস্পরকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা পাঠাই ও নানান কবিতাও পাঠাই। আজ সেই সমস্ত বন্ধুদের জন্য দোল উৎসব কবিতা ও বসন্তের কবিতার ডালি নিয়ে এসেছি। 

হোলি

1.আমি আর আসবো না গো
আসবো না !
আমি আর তোমায়
ভালোবাসবো না –
যদি না শোনাও আমায়
একটি দুটি প্রেমের কলি !
যদি না খেলো সখী
আমার সাথে হোলি !সেদিনের আবির আর রঙের খেলায় –
মনে পড়ে মেতেছিলাম তোমায় আমায় !
আজকে বসন্তের সেই দোলের বেলায় –
খেলবো না হোলি আমরা তাও কি হয় !
এবারে দোলের খেলায় মাতবো –
পিচকারিতে নতুন রং মাখবো !
যে রঙে জীবন হবে নতুন –
এ জীবন সেই রঙেই রাঙাবো !

লাগলো যে দোল  (১)

পলাশ দেখে থেকে থেকে কেমন করে মন
অনেক পলাশ ঘর করেছে শান্তিনিকেতন,
সেই নিকেতন অনেক দূরে, পলাশ থেকো ভালো!
দোলের দিনে মনে আমার পাঠিও রঙের আলো।
তোমার আমার মাঝখানেতে পথটা যে দুস্তর
কেমন করে পার হবো এই কঠিন তেপান্তর !
একটু সবুর পলাশ তুমি, একটু বাঁধো মন
পরের বারে আমার বাসা হবে পলাশ বন।

লাগলো যে দোল  (২)

3.কে যেন চমকে দ্যায় ‘এসেছি রে আঁখি তোল’
দেখি চেয়ে আঁখি মেলে “স্থলে জলে বনতলে”
লাগলো লাগলো দোল !
আবার হৃদয় ছুঁলো কানে তার কলরোল
“রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল
দ্বার খোল দ্বার খোল “

হোলি

4.আজ তো হোলি,রঙ খেলব না আমরা? তুমি খেলবে?
আর বাকীরা খেলবে না বুঝি -রবি,কানু,বালা,বাকী সব্বাই
হঠাৎ করে ছুঁড়ে দেবে মুঠো মুঠো রঙ? চমকে দেবে বুঝি?
চোখ বন্ধ করে নিতে হবে?

কি রঙ খেলবে ওরা ? লাল,গোলাপী,সবুজ?
কতটা সবুজ?
আর মিষ্টি? মিষ্টি আনবে না বুঝি আমাদের জন্য?
রঙমাখা হাতেই মিষ্টি খাব,
তুমি বকবে জানি,তবুও

আজ মিশে যাব আমি আর তুমি
কানু, বালা, টিপু, আমরা সব্বাই
খেলা তবু থামবে না, ঢেউ খেলব ছলাৎ ছল
দেখব, তুমি কত ঢেউ তুলতে পার
তবু খেলব, হার মানব না তো আজ –

আমি তো রঙ চিনি না
তবে তুমি যখন বল, তখন আমি ঠিক বুঝতে পারি
কালো রঙ ছাড়াও অন্য রঙ আছে
ভালদাদু, আমি কবে রঙ দেখতে পাব?
আমরা সবাই কবে রঙ দেখতে পাব?

পলাশ বনে একা (১)

5.পলাশেরা গান গায় বসন্তের পূর্নিমা রাতে
ভোর এলে ঝরে যায় কঠিন ভূমিতে,
সে গানের কিছু রেশ থেকে যায় মনের গভীরে
তবু ওরা প্রতিদিন গান গায়,
ঝরে যায় সবার অগোচরে…
আজ পলাশের রাগ হয়েছে তাইতো ধুলোয় শুয়ে,
মাথার দিব্যি, বলছি আমি তোর গায়ে হাত দিয়ে
আর যাবনা শিমুল বনে, সবার সাথে আড়ি-
করব এবার, কেবল তোকেই ডাকব আমার বাড়ি

পলাশ বনে একা (২)

6.মর্মে যে রং আছে
সে রং ছড়িয়ে দিয়ে বনে
আকাশে বাতাসে আর
পৃথিবী প্রাঙ্গনে..
সে রং নিও আপন করে
তোমার বাউল মনে
যে রং ছড়িয়ে ছিল বনে
পলাশ বিলাস আমার মনে
হালকা হাওয়ায় ঋতু ফাল্গুনে
বন্ধু এসো আমার ঘরে
যে আছো দূরে অনেক দূরে

রক্ত-পলাশ আমার ঘরে….

7.আয়না পলাশ আমার ঘরে

ধুলোয় কেন আছিস পড়ে!

সাজিয়ে ডালি রং ফাগুনে

রাখব তোকে মনের কোণে,

যতন করে আবির লালে

মাখাবো তোর লাজুক গালে

কিম্বা আকাশ নীলের সাথে

মেঘ দেবো এক সুপ্রভাতে

তোর আঁচলে রক্ত-পলাশ

ছোঁয়াবো আজ রঙ্গিন আভাস,

চল মেতে যাই, কাজ ভুলে যাই

নাচের তালে মাদল বাজাই

পাগলা হাওয়ার ঘোড় সওয়ারে

আয়না পলাশ আমার ঘরে…

আয়না পলাশ আমার ঘরে…!

জার্ণাল    

(১)

 শীতের ছোঁয়া মিলিয়ে গেল আস্তে
ফাগুন এলো আবার ভালবাসতে
হাসছে পলাশ রঙিন হাসি হাসছে
আনলো খবর হোলির দিন যে আসছে
(২)
যেই না আমার পড়লো মনে সেই সে ফাগুন
সে’জন বলে, কি কাজ হবে অতীত ভেবে?
আজকেও সে একই চোখে আমায় দ্যাখে
হয়তো আমায় একই ভাবে ফাগ মাখাবে
হয়তো আমার কানে-কানে গান শোনাবে
মুগ্ধ হয়ে তার চোখেতে যেই তাকাবো
চাউনি আমার তার মনেতে পথ হারাবে
(৩)
এই নাও রঙ”,বললো পলাশ মলিন মুখে
অনেক ব্যথার শেল বিঁধেছে ওদের বুকে
খবর দিলো বাতাস তাদের আজকে প্রাতে
দশটা পলাশ-ভাই মরেছে অপঘাতে
চায় না যারা দেখতে পলাশ রঙের ধারা
পলাশ মেরে বসতবাড়ি তুলছে তারা
পলাশের কবিতারা ঘাসের ‘পরে,
একটু-একটু করে শুধুই ঝরে।
(৪)
সেই কবিতায় চোখ রেখেছে আকাশ,
কাব্যে বিভোর আজ তার অবকাশ।
পলাশের কবিতায় কে গো দেবে সুর ?
হবে তার প্রাঙ্গণ গানে ভরপুর।

বসন্ত আবার জাগ্রত

বসন্ত আবার জাগ্রত এই ডামাডোলের বাজারে,
পলাশের দাম কমছে, কমছে শিমূলেরও লাল
তুচ্ছ আজ পুচ্ছ নেড়ে মস্তানি করে
“দলদাস” হয়ে ঐতিহ্যেরা গুমরে মরে
প্রেমিকার জন্য রঙ নয়, টাকা চায় থলে ভরে
তবুও বসন্ত জাগ্রত !!
বসন্ত আবার জাগ্রত কি ভীষণ রূপে,
এত ভয় করে লাল আগুণের গ্রীষ্মের আগে শুধু
শুধু কিছুটা দখিণা হাওয়া আপাত শান্ত এ রাজ্যে ,
কি জানি কারা আবার ছড়িয়ে দেবে ঘুরে ঘুরে,
আমি থাকতে চাই, তোমরাও চাও,
আমরা সবাই চাই শান্তিতে থাকতে
কিন্তু সন্ত্রাসবাদী বসন্ত শুনলে তো সে কথা !!
বসন্ত , আবার জাগ্রত
ছোট্ট মেয়েটা, মিষ্টি মেয়েটা, কালো গভীর চোখে
দুটো হাত যার অঞ্জলি ভরে
পলাশ একটা ধরে রেখেছে প্রত্যাশা নিয়ে ,
কেউ যদি … কেউ যদি ভয় না দেখায় ,
তাহলে উচ্ছ্বাসে মাতবে
হে পলাশ, হে শিমূল, হে বসন্তের দূত তেরা
“পচা লাশ” আর বয়ে এনোনা, গন্ধে পৃথিবী গেছে ভরে
এখন ছোট্ট মেয়েটা না হয় “রাজ” করুক !!!

বসন্ত-বন্দনা

চলার পথের ধারে দেখি লালফুলের বাহার
শুধাই আমি, নাম জানো কি তার?
উত্তর না পাই, নামটি থাকে অজানাই
তবু তার রং মনে-প্রাণে আনে বসন্ত
আকাশে-বাতাসে ছড়ায় যেন আবিরের সুগন্ধ
বসন্ত আর প্রেম কোনো এক নিবিড় সুত্রে বাঁধা
গাছের ডালে কোকিলের তাই কুহুস্বরে গলা সাধা
আমিও এবার শোনাতে পারি বসন্ত-বন্দনা
গলা ছেড়ে গাইব তবে বাহার রাগে তারানা
তাইতো আমায় ঠাই দিও ভাই আনন্দ-সভার মাঝে
এলাম আবার বার্তা নিয়ে বসন্ত-সভার মাঝে
মন যে আমার অশোক, পলাশ, শিমুল রঙ্গে সাজে

আবার বসন্ত

পথের ধারে হলুদ হয়ে ওঠা গাছগুলো
জানিয়ে দিয়েছে তুমি এসেছ মহাসমারোহে-
পলাশ,কৃষ্ণচূড়া ঝুঁটিতে বেঁধে,
আবীর মেখেছ লাল,মেতেছ বসন্ত নৃত্যে।
বনে বনে আজ জীবনের নবদোলা,
ফুলের পাপড়িতে রঙেরই আলপনা
এসেছে রঙের উৎসব আবার
দুয়ার রুদ্ধ আর রেখো না।

শেষ কথা  

আমাদের হিন্দু সমাজে দোল উৎসবটা কিন্তু অনেক বড়ো উৎসব। হোলির এই উৎসবে আমরা হিন্দুরা সারা বিশ্বে অনেক আনন্দ মজা করে থাকি। শুধু আমাদের দেশেই নয় দেশের বাইরে অর্থাৎ বিদেশেও নানান জায়গায় এই উৎসবটা পালিত হয় নানা রূপে। তবে সত্যি কথা বলতে এই হোলির দিনে আমাদের প্রত্যেক মানুষকে অনেকটাই সচেতন থাকতে হবে তার একটাই কারণ, এই হোলির দিনে অনেক জায়গায় হোলিতে গলিতে ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এখোনো অনেক মা বাবা বা কারোর না কারোর পরিবার তাদের ছেলে মেয়েদের বলে ওঠে “আজ কিন্তু হোলি বা দোল কোথাও যাবে না রাস্তা ঘটে ঝামেলা হতে পারে” একবার ভাবুন তো এরকম উৎসবে তাহলে কত না কত মানুষ সেইভাবে আনন্দ করতে পারেনা, পারেনা তাদের ভাই বোন, বন্ধুবান্ধবদেড় সাথে একটু আনন্দ করতে মজা করতে।  তাই সকলের কাছে অনুরধ যে হোলির দিনে আপনারা সচেতণ থাকুন। আর সবাইকে উৎসবে নিজেকে তুলে ধরুন আর অন্যকেও আনন্দ করার সুযোগ করে দাও। ভালো থাকবেন সবাই ধন্যবাদ।