রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

নমস্কার বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। বন্ধুরা আজকের বিষয় বস্তু হল প্রেমের কবিতা, আর প্রেমের কবিতা মানেই কিন্তু রবি ঠাকুর অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা সবার আগেই আমাদের মনে পরে। ভাবছেন প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে নতুন করে আবার কী জানবেন,সবই তো সবার জানা! ধারণাটা কিন্তু একেবারেই ভুল। প্রেম সম্পর্কে বেশির ভাগ তথ্যই এখনো অজানা। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। প্রেমের অনুভূতি গুলো কেমন, কেনই বা মানুষ ভালোবাসে, প্রেমে পড়ার সময় মানুষ কী দেখে ইত্যাদি নানা রকমের প্রশ্ন জাগে অনেকের মনেই। ভালোবাসা নিয়ে মানুষের এই আগ্রহ চিরন্তন একটি বিষয়। চিরচেনা ভালোবাসার এই অনুভূতি সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের জানা। আবার এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমরা আজও জানি না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ছোয়া মানেই প্রেম প্রেম ব্যাপারটা কিছু থেকেই যায়। অনেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রেমিক কবিও বলতেন। আসুন আমরা সরাসরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু প্রেমের কবিতা দেখেনি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—গীতাঞ্জলি

প্রেমের দূতকে পাঠাবে নাথ কবে।
সকল দ্বন্দ্ব ঘুচবে আমার তবে।
আর-যাহারা আসে আমার ঘরে
ভয় দেখায়ে তারা শাসন করে,
দুরন্ত মন দুয়ার দিয়ে থাকে,
হার মানে না, ফিরায়ে দেয় সবে।
সে এলে সব আগল যাবে ছুটে,
সে এলে সব বাঁধন যাবে টুটে,
ঘরে তখন রাখবে কে আর ধরে
তার ডাকে যে সাড়া দিতেই হবে।
আসে যখন, একলা আসে চলে,
গলায় তাহার ফুলের মালা দোলে,
সেই মালাতে বাঁধবে যখন টেনে
হৃদয় আমার নেরব হয়ে রবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—সোনার তরী

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
            রাশি রাশি ভারা ভারা
            ধান কাটা হল সারা,
            ভরা নদী ক্ষুরধারা
                    খরপরশা।
     কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
     একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
     চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
            পরপারে দেখি আঁকা
            তরুছায়ামসীমাখা
            গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
                    প্রভাতবেলা–
     এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
     গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
     দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
            ভরা-পালে চলে যায়,
            কোনো দিকে নাহি চায়,
            ঢেউগুলি নিরুপায়
                    ভাঙে দু-ধারে–
     দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,
     বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
            যেয়ো যেথা যেতে চাও,
            যারে খুশি তারে দাও,
            শুধু তুমি নিয়ে যাও
                    ক্ষণিক হেসে
     আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
     যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।
     আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।
            এতকাল নদীকূলে
            যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
            সকলি দিলাম তুলে
                    থরে বিথরে–
     এখন আমারে লহ করুণা করে।
     ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী
     আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
            শ্রাবণগগন ঘিরে
            ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
            শূন্য নদীর তীরে
                    রহিনু পড়ি–
     যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—গীতাঞ্জলি

মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে,
             আঁধার করে আসে,
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
             একা দ্বারের পাশে।
                           কাজের দিনে নানা কাজে
                           থাকি নানা লোকের মাঝে,
                           আজ আমি যে বসে আছি
         তোমারি আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
            একা দ্বারের পাশে।
 
তুমি যদি না দেখা দাও,
            কর আমায় হেলা,
কেমন করে কাটে আমার
            এমন বাদল-বেলা।
    দূরের পানে মেলে আঁখি
    কেবল আমি চেয়ে থাকি,
                    পরান আমার কেঁদে বেড়ায়
        দুরন্ত বাতাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
         একা দ্বারের পাশে।

অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।


যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।

আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।

প্রেম নিয়ে আরও কিছু ছোট কবিতা সংগৃহিত আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল।

1.আমি আশায় আশায় থাকি।
আমার তৃষিত আকুল আঁখি॥
ঘুমে-জাগরণে-মেশা প্রাণে স্বপনের নেশা—
দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥
বনে বনে করে কানাকানি অশ্রুত বাণী,
কী গাহে পাখি।
কী কব না পাই ভাষা, মোর জীবন রঙিন কুয়াশা

2.আমার নিখিল ভুবন হারালেম আমি যে।
বিশ্ববীণায় রাগিণী যায় থামি যে॥
গৃহহারা হৃদয় হায় আলোহারা পথে ধায়,
গহন তিমিরগুহাতলে যাই নামি যে॥
তোমারি নয়নে সন্ধ্যাতারার আলো
আমার পথের অন্ধকারে জ্বালো জ্বালো।
মরীচিকার পিছে পিছে তৃষ্ণাতপ্ত প্রহর কেটেছে মিছে,
দিন-অবসানে
তোমারি হৃদয়ে শ্রান্ত পান্থ অমৃততীর্থগামী যে॥

3.না না, ভুল কোরো না গো, ভুল কোরো না,
ভুল কোরো না ভালোবাসায়।
ভুলায়ো না, ভুলায়ো না, ভুলায়ো না নিষ্ফল আশায়॥
বিচ্ছেদদুঃখ নিয়ে আমি থাকি, দেয় না সে ফাঁকি,
পরিচিত আমি তারি ভাষায়॥
দয়ার ছলে তুমি হোয়ো না নিদয়।
হৃদয় দিতে চেয়ে ভেঙো না হৃদয়।
রেখো না লুব্ধ করে, মরণের বাঁশিতে মুগ্ধ করে
টেনে নিয়ে যেয়ো না সর্বনাশায়॥

4.ভুল করেছিনু, ভুল ভেঙেছে।
জেগেছি, জেনেছি— আর ভুল নয়, ভুল নয়॥
মায়ার পিছে পিছে ফিরেছি, জেনেছি স্বপনসম সব মিছে—
বিঁধেছে কাঁটা প্রাণে—এ তো ফুল নয়, ফুল নয়॥
ভালোবাসা হেলা করিব না,
খেলা করিব না নিয়ে মন— হেলা করিব না।
তব হৃদয়ে সখী, আশ্রয় মাগি।
অতল সাগর সংসারে এ তো কূল নয়, কূল নয়॥

5.ডেকো না আমারে, ডেকো না, ডেকো না।
চলে যে এসেছে মনে তারে রেখো না॥
আমার বেদনা আমি নিয়ে এসেছি,
মূল্য নাহি চাই যে ভালোবেসেছি,
কৃপাকণা দিয়ে আঁখিকোণে ফিরে দেখো না॥
আমার দুঃখজোয়ারের জলস্রোতে
নিয়ে যাবে মোরে সব লাঞ্ছনা হতে।
দূরে যাব যবে সরে তখন চিনিবে মোরে—
আজ অবহেলা ছলনা দিয়ে ঢেকো না॥

6.যে ছিল আমার স্বপনচারিণী
তারে বুঝিতে পারি নি।
দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিতে॥
শুভখনে কাছে ডাকিলে,
লজ্জা আমার ঢাকিলে গো,
তোমারে সহজে পেরেছি বুঝিতে॥
কে মোরে ফিরাবে অনাদরে,
কে মোরে ডাকিবে কাছে
কাহার প্রেমের বেদনায় আমার মূল্য আছে,
এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে—
আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে॥

7.হায় হতভাগিনী,
স্রোতে বৃথা গেল ভেসে—
কূলে তরী লাগে নি, লাগে নি॥
কাটালি বেলা বীণাতে সুর বেঁধে, কঠিন টানে উঠল কেঁদে,
ছিন্ন তারে থেমে গেল যে রাগিণী॥
এই পথের ধারে এসে
ডেকে গেছে তোরে সে।
ফিরায়ে দিলি তারে রুদ্ধদ্বারে—
বুক জ্বলে গেল গো, ক্ষমা তবু ও কেন মাগি নি॥

8.কোন্ সে ঝড়ের ভুল
ঝরিয়ে দিল ফুল,
প্রথম যেমনি তরুণ মাধুরী মেলেছিল এ মুকুল, হায় রে॥
নব প্রভাতের তারা
সন্ধ্যাবেলায় হয়েছে পথহারা।
অমরাবতীর সুরযুবতীর এ ছিল কানের দুল, হায় রে॥
এ যে মুকুটশোভার ধন।
হায় গো দরদী কেহ থাক যদি শিরে দাও পরশন।
এ কি স্রোতে যাবে ভেসে—দূর দয়াহীন দেশে
কোন্খানে পাবে কূল, হায় রে॥

9.ছি ছি, মরি লাজে, মরি লাজে—
কে সাজালে মোরে মিছে সাজে। হায়॥
বিধাতার নিষ্ঠুর বিদ্রূপে নিয়ে এল চুপ চুপে
মোরে তোমাদের দুজনের মাঝে॥
আমি নাই, আমি নাই— আদরিণী লহো তব ঠাঁই
যেথা তব আসন বিরাজে। হায়॥

10.শুভ মিলনলগনে বাজুক বাঁশি,
মেঘমুক্ত গগনে জাগুক হাসি॥
কত দুখে কত দূরে দূরে আঁধারসাগর ঘুরে ঘুরে
সোনার তরী তীরে এল ভাসি।
পূর্ণিমা-আকাশে জাগুক হাসি॥
ওগো পুরবালা
আনো সাজিয়ে বরণডালা,
যুগলমিলনমহোৎসবে শুভ শঙ্খরবে
বসন্তের আনন্দ দাও উচ্ছ্বাসি।
পূর্ণিমা-আকাশে জাগুক হাসি॥

11.আর নহে, আর নহে—
বসন্তবাতাস কেন আর শুষ্ক কফুল বহে॥
লগ্ন গেল বয়ে সকল আশা লয়ে,
এ কোন্ প্রদীপ জ্বাল, এ যে বক্ষ আমার দহে॥
কানন মরু হল,
আজ এই সন্ধ্যা-অন্ধকারে সেথায় কী ফুল তোল।
কাহার ভাগ্য হতে বরণমালা হরণ কর,
ভাঙা ডালি ভর—
মিলনমালার কণ্টকভার কণ্ঠে কি আর সহে॥

12. ছিহন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি,
যা উড়ে, যা উড়ে, যা রে একাকী॥
বাজবে তোর পায়ে সেই বন্ধ, পাখাতে পাবি আনন্দ,
দিশাহারা মেঘ যে গেল ডাকি॥
নির্মল দুঃখ যে সেই তো মুক্তি নির্মল শূন্যের প্রেমে—
আত্মবিড়ম্বনা দারুণ লজ্জা, নিঃশেষে যাক সে থেমে।
দুরাশায় যে মরাবাঁচায় এত দিন ছিলি তোর খাঁচায়
ধূলিতলে তারে যাবি রাখি॥

13.যাক ছিঁড়ে, যাক ছিঁড়ে যাক মিথ্যার জাল।
দুঃখের প্রসাদে এল আজি মুক্তির কাল॥
এই ভালো ওগো এই ভালো বিচ্ছেদবহ্নিশিখার আলো,
নিষ্ঠুর সত্য করুক বরদান—
ঘুচে যাক ছলনার অন্তরাল॥
যাও প্রিয়, যাও তুমি যাও জয়রথে—
বাধা দিব না পথে।
বিদায় নেবার আগে মন তব স্বপ্ন হতে যেন জাগে—
নির্মল হোক হোক সব জঞ্জাল॥

14.দুঃখের যজ্ঞ-অনল-জ্বলনে জন্মে যে প্রেম
দীপ্ত সে হেম,
নিত্য সে নিঃসংশয়,
গৌরব তার অক্ষয়॥
দুরাকাঙ্খার পরপারে বিরহতীর্থে করে বাস
যেথা জ্বলে ক্ষুব্ধ হোমাগ্নিশিখায় চিরনৈরাশ—
তৃষ্ণাদাহনমুক্ত অনুদিন অমলিন রয়।
গৌরব তার অক্ষয়॥
অশ্রু-উৎস-জল-স্নানে তাপস জ্যোতির্ময়
আপনারে আহুতি-দানে হল সে মৃত্যুঞ্জয়।
গৌরব তার অক্ষয়॥

15.আমার মন কেমন করে—
কে জানে, কে জানে, কে জানে কাহার তরে॥
অলখ পথের পাখি গেল ডাকি,
গেল ডাকি সুদূর দিগন্তরে॥
ভাবনারে মোর ধাওয়ায়
সাগরপারের হাওয়ায় হাওয়ায় হাওয়ায়।
স্বপনবলাকা মেলেছে ওই পাখা,
আমায় বেঁধেছে কে সোনার পিঞ্জরে ঘরে॥

শেষ কথা 

প্রেমে  পড়ুন, আত্মার উন্নতি হোক। জীবন খানিক মধুর হোক। যাকে ভালোবাসেন তার ভালোবাসা কে আঁকড়ে বাচুন। প্রেমে থাকুন প্রেমের পদ্যে থাকুন। এই পদ্যের ডালি থাকল আপনার জন্য।বাংলা সাহিত্য ও আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা  তাদের মধ্যে সেরা কিছু  যা আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে, এর মধ্যে কিছু কবিতা বা ছবি আপনারা ভালবাসার মেসেজ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন ও অভিমান ভাঙাতে পারেন  প্রেমিকার।কাজে এলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। অনেক ভালো থাকবেন অনেকটাই ভালো রাখবেন বা রাখার একটু চেষ্টা করবেন দেখবেন আপনি ও আপনার পরিবারও অনেকটাই ভালো আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, ছোট গল্প প্রেমের কবিতা ইত্যাদি যত পড়বেন আপনার মধ্যে প্রেম দেখবেন আরও বেশি করে আসবে। ভালো থাকবেন।