সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল জীবনী – Sardar Vallabhbhai Patel

বল্লভভাই পটেল (৩১ অক্টোবর ১৮৭৫ – ১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০) একজন ভারতীয় পণ্ডিত ও জাতীয়তাবাদী নেতা। যিনি সরদার প্যাটেল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ইনি গুজরাটি ছিলেন।  তাকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী।

সদ্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা । তিনি জন্মেছিলেন ভারত বর্ষের গুজরাট প্রদেশে । মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রধান সেনানী ছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল । সত্যাগ্রহ আন্দোলন করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী যখন নাগপুর জেলে বন্দি থাকেন সেই সময় এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনটি সারা ভারত জুড়ে পরিচালনা করেন বল্লভ ভাই প্যাটেল ,মহাত্মা গান্ধীর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন এবং ইংরেজ ভারত আন্দোলনের মুখ্য বাস্তুকার ছিলেন সর্দার প্যাটেল ,ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পর্তুগিজ দের হাত থেকে গোয়া এবং নিজাম দের হাত থেকে হায়দ্রাবাদ উদ্ধার করে ভারত সরকারের সাথে যুক্ত করেন , তাকে লৌহ মানব বলা হয় ।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

গুজরাটের কুর্মী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্যাটেল। তুলনায় বেশি বয়েসে ম্যাট্রিক পাশ করেন (২২ বছর)।[২]

কর্মজীবন

শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি আইন পড়তে আগ্রহী হন এবং ব্যারিস্টারি পড়ার জন্যে লণ্ডনে যান। দেশে ফিরে একজন আইনজীবী হিসেবে কাজে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী হন।

সম্মননা

তার সম্মাননায় ভারতের গুজরাতে তার জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় “ঐক্যের মূর্তি।” যা গত ৩১শে অক্টোবর ২০১৮ইং সালে উদ্ভোধন করা হয়। এইছাড়াও তার নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।

সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নীতি ও আদর্শ

সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নীতি ও আদর্শ এখনও অনুকরণীয়। তিনি ছিলেন একজন মহান রাজনীতিবিদ। তার ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ও দেশপ্রেম আজও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ভারতীয় প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৪১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুশারি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, সর্দার ভাই প্যাটেল ছিলেন একজন মহান রাজনীতিবিদ। আমরা এখনও তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকি। তবে ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে চাপিয়ে দেয়া রাজনীতির সংস্কৃতি শুরু হয়। আর এই চাপিয়ে দেয়া রাজনীতির কারণেই ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতার অভাব হয়ে পড়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারতের রাজনীতিতে বল্লভ ভাই প্যাটেল ছিলেন একজন সত্যিকার আদর্শবাদী রাজনীতিবিদ। তার দেশপ্রেম ও আদর্শের কোন তুলনা হয় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

কাশ্মীর সমস্যা থাকত না

 

সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে কাশ্মীর সমস্যা থাকত না দেশে। ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়ের এই মন্তব্য ফের তৈরি হয়েছে বিতর্ক। মঙ্গলবার দেশজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী। এদিন সকাল থেকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়ের একাধিক টুইট বিতর্ক তৈরি করেছে। তিনি তাঁর টুইটে লিখেছেন গান্ধীজিরও উপলব্ধি করেছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলটে প্রথম প্রধানমন্ত্রী করলে কাশ্মীর সমস্যা থাকতই না। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে কোনও ভাবেই কাশ্মীর ভাগ হতে দিতেন না। একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকত বলে টুইটে লিখেছেন তিনি। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। সুপ্রিম কোর্ট দেওয়ালিতে দিল্লিতে বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ করার পর তিনি টুইটে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, এর পর দেহ দাহ করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

বল্লভ ভাই প্যাটেলের কিছু অজানা কথা 

‘সত্যাগ্রহের আদর্শে নিহিত রয়েছে এমন একটি সংগ্রাম-যা দুই ধরণের; যাবতীয় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম; আর আমাদের নিজেদের মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য অন্তরাত্মার বিরুদ্ধে সংগ্রাম’।

না, এ কোনও নিছক কেতাবি  কথা নয়। এ কথা স্বাধীন,অখণ্ড, ঐক্যবদ্ধ ভারতের অন্যতম  রূপকার ভারত মায়ের মহান সন্তান ‘লৌহমানব’ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের আপন জীবনে উপলব্ধি করা আদর্শেরই অভিব্যক্তি। বলতে গেলে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বহুদা বিভক্ত, দেশীয় রাজ্যগুলিকে এক সূত্রে গ্রথিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ অখণ্ড ভারত নির্মানের পথ সুগম করা, হয়ত প্যাটেলের ন্যায় ব্যক্তিত্বের পক্ষেই সম্ভব ছিল।

গত ৩১’এ অক্টোবর, মঙ্গলবার, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকীতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ সমগ্র দেশবাসীর সংগে একযোগে এই মহান যুগপুরুষের পুণ্য স্মৃতির প্রতি  বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করল। এই উপলক্ষ্যে ওই দিন দেশ ও বিদেশে  নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

৩১শে অক্টোবর দিনটিতে,  নতুন দিল্লিতে সরকারী অনুষ্ঠানের সূচনা হল, সকালে  সংসদ মার্গের প্যাটেল চক পরিসরে সর্দার প্যাটেলের মূর্তিতে সমগ্র দেশবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে সর্দার প্যাটেলের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাঁর পুণ্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সর্দার প্যাটেলের জন্ম জয়ন্তীর দিনটি  ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ রূপে  উদযাপন করা হোল। এবছরের মূল ভাবনা ছিল- ‘ভারতের ঐক্য ও সংহতি’।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই দিন নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে ‘ভারতের ঐক্য ওসংহতির সূত্রধার সর্দার প্যাটেল’ শীর্ষক একটি ডিজিটাল সংগ্রহালয়ের উদ্বোধন ছাড়াও বিবিধের মাঝে ঐক্যের আদর্শের  বার্তাবাহী ‘এক ভারত-শ্রেষ্ঠভারত’ কর্মসূচির সূচনা করলেন।  অপরাহ্ণে তিনি নতুন দিল্লির ধ্যানচাঁদ ন্যাশানাল স্টেডিয়ামে ‘একতা দৌড়’এর সূচনা করেন, ঐক্যের শপথ বাক্য পাঠ করান এবং সর্দার প্যাটেল স্মারক ডাক টিকিটের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার আদর্শকে ক্রমাগত মজবুত করার লক্ষ্যে দেশবাসীর প্রতি সংকল্পবদ্ধ হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন একতার আদর্শই ১২৫ কোটি দেশবাসীর মধ্যে আত্মিক বন্ধন মজবুত করে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন স্বাধীন, অখণ্ড ভারত গঠনে প্যাটেলের অবদান ব্যাখ্যা করার মত কোনও শব্দই পর্যাপ্ত নয়। শ্রী মোদি বলেন,যাবতীয় বৈষম্য,অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে নিরলস সংগ্রামের মাধ্যমে শান্তি ,ঐক্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও সদভাবনার আদর্শ আরও মজবুত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন। তিনি বলেন,প্যাটেলের বলবীর্য্য, তাঁর তেজস্বিতা, তাঁর উদারনৈতিক আদর্শ ও চিন্তাধারা আমাদের সকলের কাছে একান্ত প্রেরণার উৎস।

ওই দিন আকাশবাণী ও দূরদর্শন সর্দার প্যাটেলের জীবনী ও বাণীর ওপর বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কথা ঘোষণা করে।

এর আগে গত ২৮শে অক্টোবর নতুন দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা : আঞ্চলিক আশা আকাঙ্ক্ষা  ও জাতীয় সংহতি’ শীর্ষক  সর্দার প্যাটেল স্মারক বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের আদর্শ ও  ভাবনা ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করার  ক্ষেত্রে  আজ আরও  বেশি প্রাসঙ্গিক। তিনি প্যাটেলের রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন,যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে আসা উচিত; কেন্দ্র বা রাজ্যে কোন ক্ষেত্রেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত  নয়।

দেশীয় রাজ্যগুলির একীকরণের মাধ্যমে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রচনা ছাড়াও প্যাটেলের আর একটি অনন্য কৃতিত্ব ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস ও  ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস গঠন।

১৯৩০ সালে, প্যাটেল আমেদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন মহিলাদের  জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যে কত সুদূর প্রসারী ছিল এই ঘটনাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পরিশেষে, ৩১’এ অক্টোবর তারিখের পরের দিন পয়লা নভেম্বর  সর্দার প্যাটেলের স্মরণে বিদেশে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের, এখানে উল্লেখ করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলেই মনে হয়।

অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউস পরিসরের ‘গান্ধী সভাগার’এ । উদ্দেশ্য,সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্ম জয়ন্তী উদযাপন। অনুষ্ঠানে শতাধিক বিশিষ্ট জনের উপস্থিতিতে প্রধান বক্তা ‘সর্দার প্যাটেল স্মারক সমিতি’র প্রধান প্রভীন আমীন জানালেন, ২০০২’এর ২১’এ আগস্ট লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশন ভবন প্রাঙ্গণে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছিলেন ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উপ প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদবানি। প্যাটেলের সেই মূর্তি স্থাপন ও সেটির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রভীন আমীন আরও জানালেন, প্রায় ১৪ বছর পর এই প্রথম সেখানে আবার প্যাটেল স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে তিনি অত্যন্ত মানসিক তৃপ্তি অনুভব করছেন।