স্বনির্ভর গোষ্ঠী কাকে বলে,নাম, প্রকল্প

স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি তাদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহন করে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ লাঘবের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি সুদ ভর্তুকি প্রকল্প চালু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই অভিনব প্রকল্পটির রুপায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগম লিমিটেডকে। এই প্রকল্পটির নাম “পশ্চিমবঙ্গ স্বনির্ভর সহায়ক প্রকল্প বা WBSSP”। পশ্চিমবঙ্গের সকল স্বনির্ভর গোষ্ঠী যারা রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, রাজ্য বা জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক এবং সংশ্লিষ্ঠ প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি (PACS) থেকে ঋণ নিয়েছে তারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। বর্তমানে এই সুদ ভর্তুকী প্রকল্পে রাজ্য সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির নেওয়া ব্যাঙ্ক ঋণের ওপর সর্বাধিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ ভর্তুকী ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কেবলমাত্র ব্যাঙ্ক ঋণের ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সুদের বাকী অংশ সুদ ভর্তুকী হিসেবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ব্যাঙ্কের খাতায় সরাসরি জমা হবে।

২০১৫ – ২০১৬ আর্থিক বছরে ২৪২৯৯২ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ৩৮.২৯ কোটি টাকা সুদ ভর্তুকি বাবদ সরাসরি তাদের ব্যাঙ্কের খাতায় জমা করা হয়েছে। ২০১৬ – ২০১৭ আর্থিক বছরে ৪০০১১১ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ৬০.০৬ কোটি টাকা সুদ ভর্তুকি বাবদ সরাসরি তাদের ব্যাঙ্কের খাতায় জমা করা হয়েছে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ 

পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগম লিমিটেড রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশী সংখ্যক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ অ্যাপারাল ট্রেনিং অ্যান্ড ডিজাইন সেন্টার (ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রকের সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা), এন্টারপ্রাইজ ডেভেলাপমেন্ট ইনস্টিটিউট (BNCCI এর একটি সহযোগী সংস্থা) ইত্যাদি বিভিন্ন স্বেচ্ছসেবী প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে মুলতঃ

  • সেলাই / রেডিমেড পোষাক তৈরী,
  • বিউটিসিয়ান,
  • জরির কাজ,
  • হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট,
  • আয়া প্রশিক্ষণ,
  • সিল্ক স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্টি,
  • কম্পিউটার প্রশিক্ষণ,
  • বিপণন কর্মী,
  • নিরস্ত্র সিকিউরিটি গার্ডের প্রশিক্ষণ,
  • জৈব সার / কেঁচো সার উৎপাদন,
  • ধূপকাঠি / মোমবাতি তৈরী,
  • ফুলচাষ,
  • পাটজাত দ্রব্য প্রস্তুতি
  • ছাগল / হাঁস / মুরগী পালন,
  • খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ

ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ও সফল প্রশিক্ষণের পর অনেকেই স্বনির্ভর হয়েছে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য বিমা

কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও খরা, কখনও আবার রোগের সংক্রমণ। যাঁরা কৃষি পণ্য কেনাবেচার কাজ করেন তাদের চিন্তা থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাঁরা পশুপালনে যুক্ত তাদের উদ্বেগ রোগের আক্রমণ। এই উদ্বেগ-আশঙ্কা কাটাতেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এবার রাষ্ট্রীয় বিমা যোজনার আওতায় আনা হল। কোচবিহার জেলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা কোম্পানি এই কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ১২০ জনের মহিলা ওই বিমার আওতায় এসেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবরে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একজন সদস্যাকে বছরে ৫৯৩ টাকা করে জমা রাখতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। সেই প্রেক্ষিতে তাঁদের ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার বিমাসুরক্ষা দেওয়া হবে। ‘বিমা ভরসা’ নামে ওই প্রকল্প নিয়ে কোচবিহার জেলা গ্রামোন্নয়ন সেলের প্রকল্প আধিকারিক সঞ্জয় দাস বলেন, “নানা সময় নানা ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা আমাদের কাছে আসেন। তাঁদের জন্য কিছু করে ওঠা যায় না অনেক সময়। সেদিক থেকেই বহু দিন ধরেই আমরা বিমা সুরক্ষা দেওয়ার কথা ভাবছিলাম। এবারে রাষ্ট্রীয় বিমা যোজনার আওতায় তাঁদের আনা হয়েছে।” বিমা কোম্পানির আঞ্চলিক ম্যানেজার পরেশ কর্মকার বলেন, “কোচবিহার জেলায় ওই প্রকল্পের কাজ আমরা শুরু করেছি। যে কোনও জায়গার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ওই সুবিধে নিতে পারেন।”

এই প্রকল্পে কী সুবিধে দেওয়া হবে একজন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাকে?

সেগুলি হল এক এক করে এই—কোনও গোষ্ঠী সদস্যার বাড়ি, আসবাবপত্র, জীবিকার প্রয়োজনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, গোষ্ঠী প্রকল্পে তৈরি করা জিনিসপত্রের ক্ষতি হলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। শিক্ষার জন্য কন্যাসন্তানকে এককালীন ৬০ হাজার টাকা এবং পুত্রসন্তানকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সহ সর্বাধিক পরিবারের ছয় জন সদস্যকে চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে পাঁচ হাজারের বেশি চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা দেওয়া হবে। হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক হাজার টাকা, প্রসবকালীন সুবিধা দশ হাজার টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকলে দশ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন হিসেবে ২০০ টাকা করে দেওয়ার কথাও প্রকল্পে উল্লেখ রয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়িকে বিমার আওতায় আনা এখানেই প্রথম। তা পরিবারে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার সুরক্ষা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিমা কোম্পানি।

প্রশাসন জানিয়েছে, কোচবিহার জেলায় ২০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মহিলা। কোনও দল জমানো টাকা দিয়ে কৃষি কাজ করছেন, কেউ মাছ চাষ করছেন, কেউ কেউ আবার গরু, মহিষ পালন করছেন। অনেকে নানা রকম জিনিস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। সে সবে কখনও লাভ কখনও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। দিনহাটা-১ নম্বর ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে একটি মহিলা মহাসঙ্ঘ গড়ে উঠেছে। ওই বিমা কোম্পানি ওই মহাসঙ্ঘকে কর্পোরেট এজেন্ট নিয়োগ করেছে। ওই মহাসঙ্ঘের মাধ্যমেই জেলায় বিমার কাজ হবে। মহাসঙ্ঘ মহিলা সঙ্ঘগুলিকে বিমার আবেদন পত্র দেবে। তাঁরা গোষ্ঠীর হাতে ওই ফর্ম পৌঁছে দেবে। সেখানেই আলোচনার মাধ্যমে কারা বিমার সুবিধে নিতে চায় তাঁদের হাতে ফর্ম দেওয়া হবে। পরে তা একই ভাবে জমা নিয়ে মহাসঙ্ঘের মাধ্যমে বিমা কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হবে। সঙ্ঘের মহিলাদের একজন মাইক্রো এজেন্ট হিসেবে কাজ করবেন। তাঁদের বিমা সখী নাম দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কমিশন পাবেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এক্ষেত্রে অনেক মহিলার আরেকটি কাজের সুযোগ করে দেওয়া হল।” সাতকুড়ার লক্ষ্মী মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য তথা দিনহাটা মহিলা মহাসঙ্ঘের সম্পাদিকা নিবেদিতা ভদ্র বলেন, “বিমার প্রয়োজনীয়তা সব সময় অনুভব করতাম। তা পেয়ে আমরা খুব খুশি।”

শেষ কথা 

স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প এমন একটি প্রকল্প যা বহু গরিব মহিলাদের পথ দেখাতে আজ সক্ষম। হ্যা কথা তা আজ সত্যি খুব অহংকারের আর গর্ভের সাথে বলতে ভালো লাগে যে আজ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য দুস্থ বা গরিব মহিলা যাদের একদমই যায় কম সংসার চলে না বললেই হয় বা তাদের স্বামী অক্ষম বা তারা নিজেরা কিছু করতে চায় কিন্তু আর্থিক সহায়তার জন্য কিছুই করে উঠতে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি।  তাই আজ আমাদের বর্তমান সরকার তাদের হয়ে ও তাদের কথা চিন্তা করে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী নামক এক প্রকল্প তুলে এনেছে যাতে করে তাদের মুখে একটু হাসি দেখা যায়। আর সত্যি কথা বলতে সেটা কাজেও লেগেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প কে আর ধন্য বাদ সেই সকল মানুষকে যারা এই প্রকল্পের দ্বারা নিজেরা আজ সক্ষম। জয় হোক স্বনির্ভর গোষ্ঠী। আপনারা ভালো থাকবেন। 

লেখক – শান্তনু পাল