কন্যাশ্রী প্রকল্প – Kanyashree Prakalpa in Bengali

কেমন আছো বন্ধুরা আশা করি ভালোই আছো। বন্ধুরা আজকে আমাদের বিষয় কন্যাশ্রী প্রকল্প। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ বা পশ্চিমবাংলার সরকারের এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীলতা সম্পন্ন একটি প্রকল্প যা আমাদের রাজ্যের অনেকাংশ মেয়েরা স্কুল কলেজ এর মাধ্যমে এই প্রকল্পের অধিকারী হয়ে ওঠেন। কন্যাশ্রী প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারকে নগদ সহায়তার মাধ্যমে মেয়েদের জীবন ও অবস্থার উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গের সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি উদ্যোগ, যাতে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কোনো পরিবার ১৮ বছর আগে তাদের মেয়ে সন্তানের বিয়ের ব্যবস্থা না করে। এই প্রকল্পের অন্যতম অভিপ্রায় হল, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা গরিব দুস্থ মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য তুলে আনা। এই প্রকল্প তার নক্সা ও সুশাসনের বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এটি একটি শর্তাধীন অর্থ ট্রান্সফার প্রকল্প। 

পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্য‌ার ১০ থেকে ১৯ বছরের নীচে রয়েছে ১.৭৩ কোটি মানুষ। এর মধ্য‌ে ৪৮.১১ শতাংশ মহিলা। ডিএলএইচএস-৩ সমীক্ষা অনুযায়ী, শিশু বিবাহের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। রাজ্য‌ের ৫৪.৭৪ শতাংশ সদ্য‌ বিবাহিত মহিলার বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সে (২০০৭-০৮-এর তথ্য‌ অনুযায়ী)। গ্রামাঞ্চলে এই হার ৫৭.৯ শতাংশ। এ ব্য‌াপারে অগ্রগণ্য‌ জেলাগুলি হল, মুর্শিদাবাদ (৬১.০৪ শতাংশ), বীরভূম (৫৮.০৩ শতাংশ), মালদা (৫৬.০৭ শতাংশ), পুরুলিয়া (৫৪.০৩ শতাংশ)। দ্য সিলেকটেড এডুকেশন্যাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০১০-১১ (মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, ভারত সরকার) অনুযায়ী,পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্য‌ে ৬৩.৫ শতাংশ। ছাত্রদের মধ্য‌ে ৬৪.৯ শতাংশ। ছাত্র বা ছাত্রী উভয় ক্ষেত্রেই এই গড় জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রীদের স্কুলে ধরে রাখতে এবং বাল্য‌বিবাহ রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্য‌াশ্রী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০১৪-এর ১৪ আগস্ট কন্য‌াশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্য‌মন্ত্রী মমতা বন্দ্য‌োপাধ্য‌ায় প্রদত্ত তথ্য‌ অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২০০ স্কুলের ১৬ লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি নারী ও শিশু কল্য‌াণ দফতর।

প্রকল্পটি কী

১৮ বছরের নীচে যাতে মেয়েদের বিবাহ না হয় সেই দিকে লক্ষ্য‌ রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে। গরিব ঘরের মেয়েদের যাতে টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না হয় তা দেখাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য‌। এই প্রকল্প থেকে বছরে এক বার পাঁচশো টাকা করে বৃত্তি পাওয়া যাবে। ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ে না করে থাকলে ও পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এককালীন অনুদান পঁচিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

কারা এককালীন অনুদান পাবে

অবিবাহিত যে সব মেয়ের ১ এপ্রিল ২০১৩ বা তার পরে বয়স ১৮ বছর কিন্তু ১৯ বছরের কম তারা এই অনুদান পাওয়ার যোগ্য‌ বলে বিবেচিত হবে। তবে, তাদের সরকারি বা সরকার অনুমোদিত বিদ্য‌ালয়ের বা মুক্ত বিদ্য‌ালয়ের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা হতে হবে। অথবা তার সমান কোনও বৃত্তিমূলক\কারিগরি শিক্ষায় নাম লেখানো থাকতে হবে বা প্রশিক্ষণ নিতে হবে। অনুদানগ্রহণকারীর বার্ষিক পারিবারিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম হতে হবে। জে.জে হোমে থাকা (জুভেনাইল জাস্টিস অ্য‌াক্টের আওতাধীন হোম) মেয়েরা এই অনুদান পেতে পারে কিন্তু বার্ষিক পারিবারিক আয়ের শর্ত তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য‌। আবেদনকারীর পিতামাতা শারীরিক ভাবে ৪০ শতাংশ বা তার বেশি অসমর্থ হলে এই শর্ত প্রযোজ্য‌ নয়।

 কন্যাশ্রী প্রকল্প স্কিমটির উপাদান

এই স্কিমটির দুটি উপাদান রয়েছে

  1. বার্ষিক বৃত্তি ৭৫০ টাকা
  2. এক কালীন ২৫০০০ টাকা বৃত্তি

বার্ষিক বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-

  • ছাত্রীর বয়স তেরো বছরের বেশি ও আঠেরো বছরের কম হতে হবে;
  • ছাত্রীকে অন্তত অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরতা হতে হবে;
  • ছাত্রীর পারিবারিক আয় বাৎসরিক অনধিক এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা হতে হবে;
  • ছাত্রীকে অবিবাহিতা হতে হবে।

এক কালীন বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-

    • আবেদন করার দিনে ছাত্রীর বয়স আঠেরো বছরের বেশি ও উনিশ বছরের কম হতে হবে;
    • ছাত্রীকে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, ক্রীড়াবিষয়ক ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে নিবন্ধীকৃত প্রতিষ্ঠানের পাঠরত হতে হবে। 
    • আইটিইউ ও ইউ এন ওমেন সংগঠিত জিইএম-টেক অ্যাওয়ার্ড 2016 সালে চূড়ান্ত পর্যায় নির্বাচিত।
    • ইউনাইটেড নেশনস WSIS ২০১৬ এর বিজেতা
    • CSI Nihilent e-গভর্নেন্স পুরস্কার ২০১৪-২০১৫ তে গুণগ্রাহিতা পুরস্কার লাভ করেছে।
    • Skoch SMART গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ বিজেতা
    • অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস এবং পাবলিক গ্রিভেন্স দ্বারা আয়োজিত ন্যাশনাল e-governance অ্যাওয়ার্ড ২০১৪-১৫ এ পুরস্কৃত।
    • ২০১৪ সালে ই-ওমেন ও এমপাওয়ারমেন্ট বিভাগে মন্থন অ্যাওয়ার্ড (সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক) পেয়েছে।
    • ২০১৪ সালে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দ্বারা পুরস্কার লাভ করেছে।
    • U. S. Consulate এবং শক্তি বাহিনী দ্বারা আয়োজিত Trafficking in Persons (TIP) (শিলিগুড়ি , ফেব্রুয়ারী ২০১৬ )
    • NITI Aayog দ্বারা “কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্রান্সফার ফর চিলড্রেন : এক্সপেরিয়েন্সেস অফ স্টেট অফ ইন্ডিয়া ” এর উপর আয়োজিত জাতীয় কর্মশালা (দিল্লী , ডিসেম্বর ২০১৫ )।
    • ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর দ্বারা আয়োজিত “এমপাওয়ারমেন্ট অফ এডোলেসেন্ট গার্লস ” এর অধিবেশন (রাঁচি , মে ২০১৫ )
    • টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্স দ্বারা আয়োজিত ” চাইল্ড ম্যারেজ এন্ড টিনএজ প্রেগ্ন্যান্সিস ” এর উপর আলোচনা সভা (দিল্লী , মার্চ ২০১৫) ।
    • গার্লস সামিট ডিএফআইডি ও ইউনিসেফ (লন্ডন, জুলাই ২০১৪) দ্বারা সংগঠিত।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি

এই প্রকল্প তার নক্সা ও সুশাসনের বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

শেষ কথা 

কন্যাশ্রী দিবস সমগ্র রাজ্য জুড়ে এই প্রকল্পটি উন্নীত করার জন্য ১৪ই আগস্ট কন্যাশ্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ১৪ই আগস্ট,২০১৩ তারিখে রাজ্যের ব্যাপক অনুষ্ঠানগুলি প্রকল্পটি প্রচারের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্ব করেন। জেলাগুলিতে সরকার দ্বারা সচেতনতা প্রচারের আয়োজন করা হয়েছিল।