কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ – Kanyashree Prakalpa Essay

কন্যাশ্রী প্রকল্প হল অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারকে নগদ সহায়তার মাধ্যমে মেয়েদের জীবন ও অবস্থার উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গের সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি উদ্যোগ, যাতে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কন পরিবার আঠার বৎসর আগে তাদের মেয়ে সন্তানের বিয়ের ব্যবস্থা না করে। এই প্রকল্পের অন্যতম অভিপ্রায় হল, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা গরিব দুস্থ মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য তুলে আনা। এই প্রকল্প তার নক্সা ও সুশাসনের বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

‘‌কন্যাশ্রী’‌র স্বীকৃতি এবার পাঠ্যবইয়ে।রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির স্বপ্নের প্রকল্প ‘‌কন্যাশ্রী’‌ পেয়েছে স্বীকৃতি। সেই ঐতিহাসিক, আনন্দময় ঘটনাটি এবার অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি স্কুলের পড়ুয়া বিশ্বের দরবারে ‘‌কন্যাশ্রী’র সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার ঘটনাটি পড়বে পাঠ্যক্রমে। জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। তিনি বলেন, ‘‌রাষ্ট্রপুঞ্জে কন্যাশ্রীর এই সাফল্য অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব। ইতিমধ্যেই পাঠ্যবইয়ে ‘‌কন্যাশ্রী’র উল্লেখ রয়েছে। সেখানেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের এই বিশ্বজয়ের কাহিনী, মুখ্যমন্ত্রীর পুরস্কার গ্রহণের সংবাদ সংযুক্ত করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সমাজে কন্যাশ্রী প্রকল্পের অবদান ও স্বীকৃতি যেন মনে রাখতে পারে।’‌ এখন চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবং একাদশ শ্রেণীতে কন্যাশ্রী প্রকল্পটি পড়ানো হয়। অষ্টম শ্রেণীতে বাংলার রচনা হিসেবেও আছে কন্যাশ্রী। পড়ানো হয় কন্যাশ্রী কবিতা, কন্যাশ্রী প্রকল্পের কারণে উপকৃত হয়েছে এমন মেয়েদের গল্প, ছবি। সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‌কন্যাশ্রী প্রকল্পের এই সম্মান বিরল সম্মান। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে কন্যাশ্রী বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই কন্যাশ্রীর এই বিশ্বজয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’‌ যে শ্রেণীতে কন্যাশ্রী পড়ানো হয় সেখানে তো বটেই, এছাড়া অন্য কোথাও পাঠ্য হিসেবে কন্যাশ্রী প্রকল্প এবং বিশ্বজয় আনা যায় কিনা, গেলে কীভাবে, ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখতে বুধবার আলোচনায় বসতে চলেছে সিলেবাস কমিটি। অভীকবাবু বলেন, ‘‌ইংরেজি বইয়ে কন্যাশ্রীকে কীভাবে আনা যায়, আনলে কোন শ্রেণী থেকে তা নিয়েও আলোচনা হবে।’‌

২৩ জুন নেদারল্যান্ডসে রাষ্ট্রপুঞ্জের জন পরিষেবা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় বাংলার এই প্রকল্পকে। এই প্রকল্প যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত সেই মমতা ব্যানার্জির হাতেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য পুরস্কার তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ৬৩টি দেশের ৫৫২টি প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তার মধ্যে প্রথম হয় কন্যাশ্রী। এরপরই কন্যাশ্রীর স্বীকৃতিকে স্কুল পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সিলেবাস কমিটির কাছে প্রস্তাব দেয় রাজ্য৷

নাবালিকা কন্যাদের পড়াশোনা থামিয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প। এই প্রকল্পের কারণেই স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে ৫৬ শতাংশ। কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার সংখ্যা কমেছে ৩৩ শতাংশ। ৪০ লক্ষ ৩১ হাজার ছাত্রী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম, সেই পরিবারের মেয়েদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় বৃত্তি দেয় রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের স্কুলগুলির মাধ্যমে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের নাম সরকারি এই প্রকল্পে নথিভুক্ত করা হয়৷ ১৮ বছর হওয়ার পর স্কুলের গণ্ডি পেরোলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের তরফে এককালীন ২৫ হাজার টাকা অথবা বার্ষিক ৫০০ টাকা দেওয়া হয়৷ গড়ে প্রতি বছর ১৮ লক্ষ ছাত্রী বার্ষিক স্কলারশিপ ও ৩.৫ লাখ পড়ুয়া এককালীন বৃত্তি পায়৷‌‌‌

এই স্কিমটির দুটি উপাদান রয়েছে:

  • বার্ষিক বৃত্তি ৭৫০ টাকা
  • এক কালীন ২৫০০০ টাকা বৃত্তি

বার্ষিক বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-

  • ছাত্রীর বয়স তেরো বছরের বেশি ও আঠেরো বছরের কম হতে হবে;
  • ছাত্রীকে অন্তত অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরতা হতে হবে;
  • ছাত্রীর পারিবারিক আয় বাৎসরিক অনধিক এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা হতে হবে;
  • ছাত্রীকে অবিবাহিতা হতে হবে।

এক কালীন বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-

  • আবেদন করার দিনে ছাত্রীর বয়স আঠেরো বছরের বেশি ও উনিশ বছরের কম হতে হবে;
  • ছাত্রীকে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, ক্রীড়াবিষয়ক ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে নিবন্ধীকৃত প্রতিষ্ঠানের পাঠরত হতে হবে।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি

এই প্রকল্প তার নক্সা ও সুশাসনের বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

  • আইটিইউ ও ইউ এন ওমেন সংগঠিত জিইএম-টেক অ্যাওয়ার্ড 2016 সালে চূড়ান্ত পর্যায় নির্বাচিত।
  • ইউনাইটেড নেশনস WSIS ২০১৬ এর বিজেতা
  • CSI Nihilent e-গভর্নেন্স পুরস্কার ২০১৪-২০১৫ তে গুণগ্রাহিতা পুরস্কার লাভ করেছে।
  • Skoch SMART গভর্নেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ বিজেতা
  • অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস এবং পাবলিক গ্রিভেন্স দ্বারা আয়োজিত ন্যাশনাল e-governance অ্যাওয়ার্ড ২০১৪-১৫ এ পুরস্কৃত।
  • ২০১৪ সালে ই-ওমেন ও এমপাওয়ারমেন্ট বিভাগে মন্থন অ্যাওয়ার্ড (সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক) পেয়েছে।
  • ২০১৪ সালে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দ্বারা পুরস্কার লাভ করেছে।
  • U. S. Consulate এবং শক্তি বাহিনী দ্বারা আয়োজিত Trafficking in Persons (TIP) (শিলিগুড়ি , ফেব্রুয়ারী ২০১৬ )
  • NITI Aayog দ্বারা “কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্রান্সফার ফর চিলড্রেন : এক্সপেরিয়েন্সেস অফ স্টেট অফ ইন্ডিয়া ” এর উপর আয়োজিত জাতীয় কর্মশালা (দিল্লী , ডিসেম্বর ২০১৫ )।
  • ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর দ্বারা আয়োজিত “এমপাওয়ারমেন্ট অফ এডোলেসেন্ট গার্লস ” এর অধিবেশন (রাঁচি , মে ২০১৫ )
  • টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্স দ্বারা আয়োজিত ” চাইল্ড ম্যারেজ এন্ড টিনএজ প্রেগ্ন্যান্সিস ” এর উপর আলোচনা সভা (দিল্লী , মার্চ ২০১৫) ।
  • গার্লস সামিট ডিএফআইডি ও ইউনিসেফ (লন্ডন, জুলাই ২০১৪) দ্বারা সংগঠিত।

    কন্যাশ্রী দিবস

    সমগ্র রাজ্য জুড়ে এই প্রকল্পটি উন্নীত করার জন্য ১৪ই আগস্ট কন্যাশ্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ১৪ই আগস্ট,২০১৩ তারিখে রাজ্যের ব্যাপক অনুষ্ঠানগুলি প্রকল্পটি প্রচারের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্ব করেন। জেলাগুলিতে সরকার দ্বারা সচেতনতা প্রচারের আয়োজন করা হয়েছিল।

    কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য

    ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ কন্যাশ্রী প্রকল্পের সফলতা ৫ম বর্ষ অতিক্রম করে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সবকটি জেলাতে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য দিবস পালিত হয়।

শেষ কথা 

একটা পরিবারে যেমন বাবা থাকে মাথার ওপর পরিবারকে সামলাতে বা কোনো কোনো সময়ে আমরা পরিবারের মুখিয়াও বলেথাকি ঠিক তেমনি আমাদের রাজ্যে বা আমাদের সমাজের মুখিয়ে হলো আমাদের রাজ্যের সরকার সেটা যেই সরকার এই থাকুক না কেন। যেমন বাবার কর্তব্য তাদের সন্তানদের বা পরিবারকে সঠিক ভাবে চালনা করা ঠিক তেমনি রাজ্যের শীর্ষে যিনি থাকবেন বা আছেন মুখিয়া হিসাবে রাজ্যের সন্তান অর্থাৎ জনগণের কল্যাণ এর জন্য বা ভালো হবার জন্য দেখা উচিত। যাইহোক আমাদের বিস্তারিত ভাবে বলতে সত্যি গর্ব বোধ হয় যে আমাদের বাংলার রাজ্যের মুখিয়া যিনি প্রজাদের কথা বা গরিব সন্তানদের কথা চিন্তা করে এই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাহায্যের হাত দিয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ যে এখন কন্যাশ্রী এখন বিশ্বশ্রী। আমরা ধন্য। আশা করবো এরকম আরও অনেক প্রকল্প বাংলার মানুষের জন্য আসবে। কন্যাশ্রী প্রকল্প জিন্দাবাদ।