সমকামিতা কাকে বলে – What is Homosexuality

সমকামিতা কি ? আগে এটা আমাদের  জানতে হবে। সমকামিতা-র মানে হলো , সম-লিঙ্গ-র প্রতি আকর্ষণ। এটি কোনো রোগ বা অসুখ নয়, এটি একটি সাধারণ ও সহজাত প্রবৃত্তি। প্রাচ্যের দেশগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ার ফলে সমসকামিতাকে এই সমস্ত জায়গায় খারাপ বা ‘পাপ’ হিসেবে গণ্য করা হত , কিন্তু এটি প্রাণী জাতির একটি বৈশিষ্ট্য মাত্র। ২০১৮ সালে ভারতবর্ষের মহামান্য আদালত-ও এটিকে সাংবিধানিক বলে আখ্যা দেয়; এবং এই সমকামিতাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ভারতীয় সমাজের আপামর জনগণের কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক রায় বলে বিবেচিত হচ্ছে । এই রায় ভারতীয় সমাজের কাছে এক নতুন যুগের ও নতুন চিন্তা ভাবনা সমৃদ্ধ উন্মুক্ত মনের দিশার সূচনা করবে।

সমকামিতা আসলে কীWhat is Homosexual 

সমকামিতা সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেক জানা দরকার, এবং সকলকে জানানো দরকার। সমকামিতাকে ভারতের মহামনি আদালত সস্বাভাবিকত্বের তকমা দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মন থেকে এখনো এই নিয়ে বিভিন্ন রকমের ধারণা  কাটেনি।

আপামর ভারতবাসী এই সমকামিতা নিয়ে এখুনো অন্ধকারের মতো জায়গাতেই পরে আছেন তাদের পুরানো  ধান ধারণা ও সামাজিক রোখ্যনশীল চিন্তা ভাবনার মধ্যেই। এই চিন্তা ভাবনার পরিবর্তনের একটি উপায় হলো সঠিক শিক্ষা র মাধ্যমে মানবিক মনের বন্ধ থাকা দ্বারের দ্বার-উদ্ঘাটনের মাধম্যে, যা আমাদের নতুন উন্মুক্তও মনের মানবিক  ভারতবর্ষকে বিশ্ব মাঝে  শ্রেষ্টত্বের আসন প্রদান করবে। সমকামিতা কোনো পাপ নয় , এটি সকলের কাছে সঠিক ভাবে প্রকাশ যাতে পায় সেটা আমাদের সরকারকে দেখতে হবে ও এই ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরও তৎপর হতে হবে। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের চাওয়া পাওয়া ভিন্ন হতে পারে , তবে তা যাতে কাউকেই কোনো ভাবে কষ্ট না দেয় সেটা আমাদের প্রত্যেকের নজর করা উচিত। প্রত্যেকের পছন্দ এক নাই হতে পারে বা প্রত্যেকের ভালো লাগা, মন্দ লাগা গুলোও এক নাই হতে পারে, তা বলে একজনের নিজস্ব বাক্তিগত পছন্দ ও কখন ওই আমরা জোর করে কারুর কাছ থাকে করে নিতে পারি না বা কারুর ওপর কোনো সত্যা জোর করে আমরা চপিইও দিতে পারি না, আর এটাই হলো স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের বেঁচে থাকার একমাত্রও রসদ বা গণতন্ত্র যা কাউকে বা কারুর বেক্তিসত্ত্যা ক কোনো ভাবে খর্ব করবে না। আমাদের বুঝতে হবে সমকামিতা কারুর ক্ষতি করে না, এটি কিছু মানুষের নিজস্ব একান্তিক পছন্দও মাত্র যা তাদের নিজস্ব মানসিক শান্তি প্রদান করে ও নিজেদের নিজের মতো বাঁচার এক প্রচেস্টা মাত্র।

আমাদের সকলের উচিত এটা বোঝা যে , সমকামিতা কোনো পাপ নয় , অসুখ নয় বা কোনো সমকামী মানুষ র পাঁচ জন মানুষের মতোই একরকম, খালি এটা আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের প্রতেকের পছন্দ এক বা সকলের সাথে সকলের পছন্দ এক নাও হতে পারে বা এক নাও মিলতে পারে। তাই বলি সকলকে, আমরা যাতে সকলের পছন্দও গুলো সঠিক ভাবে বুঝে সঠিক ভাবে তার গুরুত্ব দিতে পারি তাহলে এই সমাজের সমকামিতাকে আমরা রোগ বা পাপ বা অসুখ বলে কিছু মানুষ কে দূরে সরিয়া রেখে আর তাদের আমাদের কষ্টও দিতে হবে না।

সেকশন ৩৭৭কী ?

  • এটি ১৫৭ বছর পুরনো ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইন, যেটি ১৮৬১ সালে জারি করা হয়।
  • সেখানে কিছু যৌন অপরাধকে অস্বাভাবিক অপরাধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যার জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
  • যেখানে বলা হয়েছে, ”স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে মানুষ,নারী বা কোন পশুর সঙ্গে যৌন মিলন” করা হলে তা শাস্তিযোগ্য হবে।
  • অ্যাকটিভিস্টরা বরাবরই অভিযোগ করছেন, দেশের সমকামী এবং তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়কে হয়রানি করতে আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • সমঅধিকার কর্মীরা বলছেন, এ ধরণের একটি আইন থাকা মানেই প্রমাণ করে যে, যৌনতার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে। 
  • সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বর্ণনা করা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন।
  • ব্রিটিশ জমানার এই বিতর্কিত আইনটির সুবাদে ‘অপ্রাকৃতিক যৌনতা’র অপরাধে ভারতে কোনও ব্যক্তির ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারতো।

  • ১৮৬১ সালের জারি করা ধারাটি ২০০৯ সালে সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছিল দিল্লির হাইকোর্ট। তবে তার বিরুদ্ধে আপীল করা হলে ২০১৩ সালে ওই আইনটি বহাল করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ। নিজেদের সেই আদেশ আজ বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
  • এ সময় আদালতের বাইরে অধিকার কর্মীরা উল্লাস করে ওঠেন। তাদের অনেককে কাঁদতে দেখা যায়।
  • ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ভারতে এলজিবিটি শ্রেণীভুক্ত পাঁচজন ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা তাদের আবেদনে বলেছিলেন, ভারতীয় দন্ডবিধির সেকশন ৩৭৭ এমন একটি আইন যে কারণে সব সময় তাদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হয় – কারণ তাদের যৌনতার দোহাই দিয়ে পুলিশ যখন খুশি তাদের গ্রেফতার করতে পারে।
  • গত জুলাই মাসে তাদের আবেদনের শুনানি শুরু করেন সুপ্রিম কোর্ট, যা দেশটিতে স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার বিতর্ক তৈরি করে।
  • শুনানির একপর্যায়ে একজন বিচারপতি মন্তব্য করেন, ”যৌনতার কারণে কাউকে ভীতির মধ্যে জীবনযাপন করা উচিত নয়।” যা ভারতের সমকামীদের মধ্যে আশাবাদের সৃষ্টি করে।
  • সমকামিতাকে কোন অপরাধ হিসাবে গণ্য না করার জন্য ভারতে অনেকেই দাবি তুলেছেন।
  • যদিও এখনো ভারতে সমকামিতা নিয়ে সংকোচ রয়েছে এবং অনেকেই এটিকে বেআইনি বলে গণ্য করে।
  • সেকশন ৩৭৭’ বহাল থাকা না থাকার প্রশ্নে ২০১৬ সালে পুনরায় শুনানি গ্রহণ করতে সম্মত হন আদালত। তিনজন জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, এটা সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তারা মনে করেন।

শেষ কথা 

এখন শেষ কথা বলতে আমরা সবাই মানুষ। তাই মানুষকে ভালোবাসা উচিত সে যেমনি হোক না কোনো। সমকামিতা কোনো অসুখ না বা কোনো রকম ছোঁয়াচেও নয় যে আমরা তাদের আসে পাশে এসব না বা তাদের ঘৃণা করবো। আর ৩৭৭ ধারা ব্যাপারটা সম্পূর্ণ রূপে স্বীকৃতি পেলেও আমরা এখনো অনেকেই তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে থাকি। না আমরা সত্য আর করবো না। কিন্তু আরেকটা কোথাও বলবো যে প্রকাশ্যে কোনো রকম নোংরামো ও আমরা বরদাস্ত করবো না। যাই হোক সমকামিতা কোনো পাপ নয়, সমকামিতা আপনার আর আমার মতোই নরমাল একটা ব্যাপার। আসুন না আমরা সব কিছু ভেদাভেদ না করে সব কিছু ভুলে গিয়ে একে ওপরের সাথে মাইল মিশে থাকি, দেখবেন সত্যি বলছি অনেক ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

লেখক – শান্তনু পাল