পেটের সমস্যা হল একটি বড়ো সমস্যা তার মধ্যে পেট ফাঁপা তলপেটের ১টি অস্বস্তিকর অবস্থা। এই অবস্থা সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানে। আমাদের পাকস্থলী যে পরিমাণ খাদ্য হজম করতে পারে, তার অতিরিক্ত কোন খাবার খেলেই বদহজম হতে পারে। শর্করা জাতীয় খাদ্য – আলু, ভাত, রুটি, খোসা সহ ফল ইত্যাদি অনেক সময় অজীর্ণ অবস্থায় মলাশয়ে প্রবেশ করলে সেখানে অবস্থিত কার্বনডাইঅক্সাইড জারিত হয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
শর্করা জাতীয় খাবার থেকে যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তাতে কোন গন্ধ থাকে না। কিন্তু আমিষ ভোজনের পর পঁচে যে গ্যাস হয় তা হয় দুর্গন্ধযুক্ত। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেপ্টিকআলসার, এবং পেটে কৃমি থাকলেও পেট ফেঁপে যেতে পারে। অনেকের অভ্যাস আহারের ফাঁকে ফাঁকে জল পান করা, এতে খাবার ভালো মত হজম হয় না। এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। এই ক্ষেত্রে রসুন, ১ টি উপাদেয় উপাদান। কারণ রসুন মলাশয়ে জীবাণু বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। তবে কাঁচা পেঁয়াজ অনেকের গ্যাস উৎপন্ন করে। পেট ফাঁপার আরও একটা সমস্যার সাধারণ কারণ হচ্ছে ধূমপানের অভ্যাস বা খাদ্য থেকে সৃষ্ট গ্যাস। কিন্তু নিয়মিত পেট ফাঁপার সমস্যা শুধু এই কারণগুলোর জন্যই হয়না। যদি আপনার নিয়মিত এবং মারাত্মক ধরণের পেট ফাঁপার সমস্যাটির সাথে সাথে ওজন কমে যায় এবং পেটে ব্যথা থাকে তাহলে আপনার দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কারণ এটি মারাত্মক কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন কিছু লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হল :
ক্যান্সার
নিয়মিত পেট ফাঁপার সমস্যায় ভোগা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। পাকস্থলী, ডিম্বাশয় বা অন্ত্রের ক্যান্সারের কারণে তরল জমা হয় ফলে পেট ফাঁপার সমস্যাটি দেখা দেয়। টিউমার পেটে চাপের সৃষ্টি করে বলে পেট ফাঁপার সাথে সাথে পেটে ব্যথাও হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস
পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস নামক রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে পেট ফাঁপা। এটি স্টোমাক বাগ নামেও পরিচিত। সাধারণত পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এই রোগ হতে পারে।
বাউয়েল অবস্ট্রাকশন
পেট ফাঁপার সাথে সাথে মারাত্মক ধরণের পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া বাউয়েল অবস্ট্রাকশন এর লক্ষণ।অন্ত্রের এই বাঁধার ফলে প্রচন্ড ব্যথা হয়। পেটের অবরুদ্ধ অংশে গ্যাস্ট্রিক জুস ও খাবার জমা হয়। জমা হওয়া খাদ্য যখন নীচের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে তখন ব্যথা সৃষ্টি হয়। যদি সঠিক সময়ে যত্ন নেয়া না হয় তাহলে জটিল অবস্থা (যেমন- অন্ত্র ছিদহওয়া) সৃষ্টি হতে পারে।
যকৃতের রোগ
অ্যাসসাইটেস নামক যকৃতের রোগের কারণে পেটে ও পেলভিসে অস্বাভাবিক তরল জমে। এর ফলে পেট ফাঁপা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া এবং কোমরের সম্প্রসারণ হয়। অ্যাসসাইটেস সাধারণত লিভার ডিজিজের কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যান্সারের কারণে হওয়ার সম্ভাবনা ১০%। ব্লটিং ও জন্ডিস যদি একত্রে দেখা দেয় যার কারণে চোখ ও ত্বক হলুদ দেখায় তাহলে এই লক্ষণ ক্যান্সার হওয়ার ইঙ্গিত দেয় যা লিভারে ছড়িয়ে গেছে। এছাড়াও হেপাটাইটিসের কারণেও এমন লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য
সপ্তাহে তিনবারের কম মল ত্যাগ হলে এবং এই অবস্থাটি যদি কয়েকমাস যাবত চলতে থাকে তাহলে আপনার ক্রনিক কনস্টিপেশন আছে বোঝা যায়। বাধাপ্রাপ্ত মল ও বায়ু অন্ত্রে আটকা পড়ে থাকে বলে পেট ফাঁপার সমস্যাটি হয়।
ডাইভারটিকোলাইটিস
ইনফেকশন বা প্রদাহজনিত কারণে কোলনে ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হলে তাকে ডাইভারটিকোলাইটিস বলে। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের ডাইভারটিকোলাইটিস হয়ে থাকে। এটি হলে পেটে ব্যথার পাশাপাশি ক্ষুধা কমে যাওয়া, জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন
প্রেগনেন্সির সময় এবং পিরিয়ডের আগে নারীদের প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অন্ত্রের কাজ ধীর গতির হয় অর্থাৎ খাদ্য খুব আস্তে আস্তে পরিপাক হয়। ফলে পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। পেট ফাঁপা প্রতিহত করার জন্য প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। তরল খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ফল, আস্ত শস্য ও সবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়।
যে নিয়মগুলো মেনে উচিত
1.খাবার ভালো মত চিবিয়ে খেতে হবে।কম চিবানো খাবার পরিপাক কম হয়।
2. মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।এটি পেট ফাঁপার অন্যতম কারণ।
3. ঢেকুর যদি দুর্গন্ধ যুক্ত হয় তবে খাবারে মাংস, ডিম কমাতে হবে এবং ডাল বাদ দিতে হবে।
4 আঁশযুক্ত সবজি – সাজনা, বরবটি, বাধাকপি, শিম কমিয়ে দিতে হবে।
5. খুব বেশি তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
6. আচার, চাটনি, মিষ্টি বাদ দিতে হবে।
7. রাতের খাবার হবে হালকা। ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।
8. সিমের বিচি, ডাল, মাঝে মাঝে লেবুও গ্যাস এর সমস্যা করতে পারে।
প্রতিকার
1. ধূমপান বা মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করা উচিত অর্থাৎ কোনো রকম নেশা করে থাকলে সেটাকে অবসসই ছাড়তে হবে, হ্যা কষ্ট হলেও ছাড়তে হবে।
2. খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করে খাবেন না, আস্তে ধীরে চিবিয়ে খান। একটু সময় নিয়ে খাবার কে সময় নিয়ে গিলুন। গোগ্রাসে গেলা ঠিক না। তাতে পেটে হাওয়া ঢকে ।
3. আচার, চিপস ও নোনতা জাতীয় খাবার যত কম খাবেন তত ভালো। লবণ কম খাবেন।
4.দুধ সহ্য হয় না ? অর্থাৎদুগ্ধ শর্করা ল্যাকটোজ হজম হয় না। তাই দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য খেলে প্রচুর গ্যাস হয় পেটে। এমন হলে দুধ, পনির, দুধজাত খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন। সয়া দুধ অথবা দই খাওয়া যেতে পারে। কারণ দই এ ল্যক্টজ ল্যক্টিক এসিড হয়ে যায়।
5. ব্যায়াম করলে ছোট খাটো পেটের সমস্যা, পেট ফাঁপা থেকে কোষ্ঠ দূর হয়। পাচক নলে খাদ্য চলমান হয় সাবলীল গতিতে, বর্জ্য নিষ্কাশন হয় সহজে। কমে মনের চাপও।
6.খাবারের দিকে খেয়াল রাখবেন। পেটের জন্য উত্তেজক বা পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় অথবা পেটে ব্যথা তৈরি করতে পারে এমন খাবার পরিহার্য। পেটের জন্য উত্তেজক বা পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার পরিহার্য। কিছু কিছু খাদ্য পেটে গ্যাস তৈরি করে যেমন শিম, বাদাম তৈলাক্ত খাবার ও পনির, যাদের সহ্য হয় না এবং এরা এসব এড়িয়ে যাবেন। অনেকে আবার কমলার রস, কফি, চা, টমেটো খেলে সমস্যায় পড়েন।
7.কিছু না হতেই মেডিসিন খেয়ে নেবেন না। এরপরেও ভালো না হলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। এই বিষয় গুলো মনে রাখলে এবং মেনে চললে সহজেই আপনি পেট ফাঁপা সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
শেষ কথা
শেষ কথা বলতে পেট ফাঁপা যখন তখন হতে পারে আর হওয়াটা সম্পূর্ণ আপনার মধ্যেই আছে মানে আপনার ওপর নির্ভর করে পেট ফাঁপা ব্যাপারটা। আপনার খাবার দাবারের ওপর নির্ভর করে পেট ফাঁপা। ওপরের লেখানুযায়ী আপনি ঠিক মতন চললে অনেকটা কমতে পারেন আপনার পেট ফাঁপার রোগ। এমনকি আর নাও হতে পারে আর একেবারেই আপনি পেতে পারেন পেট ফাঁপা থেকে মুক্তি। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন বন্ধুরা যে কোনোভাবেই যদি কোনো কাজ না হয় তবে আপনাকে কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ভালো থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।