সিফিলিস এর চিকিৎসা – Symptoms of Syphilis

 সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে এবং অসংখ্য লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে। আসুন সময় থাকতে জানি, সচেতন হই। ট্রেপোনেমা পেলিডাম (Treponema pahdum) নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। যৌন মিলনের সময় এ জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের উপসর্গ সুপ্তকাল ৯-৯০ দিন । তবে সাধারণত ১৪ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। সিফিলিসের লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর নির্ভর করে একে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় (প্রাথমিক, দ্বিতীয়, সুপ্ত, এবং তৃতীয় পর্যায়)। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত একটি একক যৌনব্যাধিজনিত ক্ষত (একটি দৃঢ়, যন্ত্রণাহীন, চুলকানিবিহীন চামড়ার ক্ষত), দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিসে একটি বিকীর্ণ ফুসকুড়ি যা ঘন ঘন হাতের তালুতে এবং পায়ের পাতার নিচের অংশে, সুপ্ত সিফিলিসে সামান্য বা কোনো লক্ষণবিহীন অবস্থা, তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিসে গুমাস, স্নায়বিক বা হৃৎপিণ্ডঘটিত উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। যাইহোক, এর ঘন ঘন এটিপিকাল উপস্থাপনা কারণে তা মহান অনুকারক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। পর্যায় গুলো নিচে আরও বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল :-

প্রাথমিক পর্যায়

এই স্তর সবচেয়ে ছোঁয়াচে। যৌনাঙ্গে এক বা একাধিক ব্যথাহীন মাঝারি আকৃতি ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং আশেপাশের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যায় কিন্তু ব্যথা থাকে না। গর্ভবতী আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত,অকাল প্রসব বা মৃত প্রসব হতে পারে।

মাধ্যমিক পর্যায়

প্রাথমিক পর্যায়ে সৃষ্ট ক্ষত ভালো হয়ে যায়। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের লক্ষণ যেমন গা ম্যাজ ম্যাজ করা, জ্বর ভাব,মাথাব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই পর্যায়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে । যেমন-

  • চামড়ায় বিশেষ ধরনের গোটা হওয়া যা চুলকায় না
  • লসিকা গ্রন্থিসমূহ ফুলে যাওয়া
  • শরীরের উষ্ণ এবং ভেজা স্থানে যেমন পায়ুপথে ঝিল্লিতে বিশেষ ধরনের গোটা বা ক্ষত হতে পারে

 বিলম্বিত পর্যায়

দশ বা ততোধিক বছর পরে চামড়া বা চামড়ার ঝিল্লির নিচে বিশের ধরনের গুটি হয় যাকে গামা বলে । চিকিৎসা না হলে দীঘদিন পরে এই রোগ হৃদযন্ত্র ও মস্তিস্ক আক্রান্ত হওয়ার ফলে মৃত্যু হতে পারে ।

জম্মগত সিফিলিস

মায়ের সিফিলিস থাকলে জন্মের সময় শিশু সিফিলিস নিয়ে জন্মাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জন্মের পূর্বেই শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে অথবা জন্মের পরে। জন্মগত সিফিলিসে শিশুর অস্থি এবং অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হওয়ার চলাফেরা বাধাগ্রস্থ হতে পারে। শিশুর বৃক্ক যকৃত জন্মগত সিফিলিসে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সিফিলিস হয়েছে কিনা তা কীভাবে জানা যাবে

রোগের লক্ষণ দেখে অনেক সময়ই রোগ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় না। কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে সিফিলিস আছে কিনা সে সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়। তেমন কোনো জিনিস আপনার মধ্যে যদি হয়ে থাকে বা এখানে আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে কোনো জিনিস যদি আপনার চোক পরে বা আপনি বুঝতে পারেন তাহলে বুঝবেন এই রোগের আক্রান্ত আপনি বা আক্রান্ত হতে চলেছেন। যদিও ডাক্তারের সাথে আলোচনা বা ডাক্তার না দেখিয়ে একবারও বলা যাবে না বা বলেও উচিত না যে আপনি এই রোগের অর্থাৎ সিফিলিস এর আক্রান্ত একজন। 

রোগের উৎস

  • আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনিরাপদ যৌনমিলনে
  • রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির রক্ত শরীরে গ্রহন করলে
  • আক্রান্ত মা যে শিশুর জন্ম দেয় যেই শিশু
  • আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনেকক্ষণ শারীরিক সংস্পর্শে থাকলে
  • ব্যাক্তির সাথে অনেকক্ষণ চুমু খেলে
  • আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে মনে রাখবেন, এই রোগ কখনই খাওয়ার পাত্র, চামচ, গামছা বা টাওয়েল, ন্যাপকিন, সুইমিং পুল, বাথটাব, কিংবা ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়ে ছড়ায় না। ইত্যাদি

সিফিলিস এর চারটি ধাপ 

  •  প্রাইমারিঃ এই অবস্থায় আক্রান্ত হবার তিন সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর শরীরে পোকার কামড়ের মত গোল গোল দাগ দেখা যায়। মাঝে মাঝে এগুলা ব্যাথাহীন এবং শক্ত হয়ে দেখা দেয় । একে শ্যাঙ্কার বলা হয়।
  •  সেকেন্ডারিঃ এই অবস্থায় সাধারনত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুল্কানির র্যাশের মত হয় এবং নিয়মিত জ্বর, ওজন কমে যাওয়া এবং লিম্ফ্যাটিক গ্ল্যান্ড ফুলে যায় । এছাড়া কুঁচকিতে ভেজা ফোস্কার মত দেখা দিতে পারে।
  • ল্যাটেনটঃ এই অবস্থায় রোগ সুপ্ত অবস্থায় থাকে।
  •  টারশিয়ারিঃ এটা অনেকদিন চিকিৎসা না করলে হয়। এই অবস্থায় রোগীর হার্ট , চোখ, ব্রেইন এবং নার্ভে সিরিয়াস সমস্যা দেখা দেয় এবং রোগী সাধারনত বাচে না। এসকল লক্ষন বা উপসর্গ দেখা দিলে সিফিলিস টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হন আপনার সিফিলিস হয়েছে কিনা।

রোগের জটিলতা কি কি 

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বলে ৩০ শতাংশ মেয়াদি সিফিলিস প্রাকৃতিভাবেই ভালো হয়ে যায়। তবে মেয়াদি সুপ্ত অবস্থায় তা জীবনব্যাপী থাকতে পারে যার সংখ্যাও মোটামুটিভাবে ৩০ শতাংশে রকম নয়। এর বাইরেও ১৫ শতাংশ গামা হিসেবে দেখা দেয় অর্থাৎ এক্ষত্রে রক্তনালী তথা ধমনীতে প্রদান এবং বদ্ধতা সর্বোপরি কোষ মৃত্যু দেখা দেয় যার ফলে স্থানটি ফুলে ওঠে সেটাই হলো গামা।

যেভাবে ছড়ায় 

আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনিরাপদ যৌনমিলনে , রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির রক্ত শরীরে গ্রহন করলে , আক্রান্ত মা যে শিশুর জন্ম দেয় যেই শিশু আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনেকক্ষণ শারীরিক সং¯পর্শে থাকলে, আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনেকক্ষণ চুমু খেলে,আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে । মনে রাখবেন, এই রোগ কখনই খাওয়ার পাত্র, চামচ, গামছা বা টাওয়েল, ন্যাপকিন, সুইমিং পুল, বাথটাব, কিংবা ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়ে ছড়ায় না।

প্রতিরোধ

  • যৌন সঙ্গীর সিফিলিস আছে কিনা নিশ্চিত হন।
  •  সিফিলিস থাকলে অবশ্যই, জোর করে হলেও চিকিৎসা করান।
  •  সিফিলিস আক্রান্তদের সাথে কোন ধরনের যৌন কারযক্রমে যাবেন না। কনডম ব্যাবহার করেও না।
  •  কমার্শিয়াল সেক্স ওয়ার্কার দের কাছে যাবেন না।
  • যৌনাচারে সংযম আচরণ করে, বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করা।
  • যৌন মিলনে বিশ্বস্ত সঙ্গী বেছে নিয়ে এবং যথোপযুক্ত প্রতিরোধসহ যৌনমিলনে অংশ নেয়া।
  • বহুগামিতা পরিহার করা।
  • পতিতাদের সামাজিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে সুস্থ এবং স্বাভাবিক বিনোদনের ব্যবস্থা করা।

চিকিৎসা

এই রোগটি এতই ভয়ঙ্কর যে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে মারাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। আর এ রোগটি এমনই যে মানুষ এর কথা গোপন করেই রাখতে চায়। আর এর বেশি ভুক্তভোগী হয় মেয়েরা। কারন তারাই বেশি রোগ গোপন করে রাখতে পছন্দ করে। কিন্তু বর্তমান সমাজেও পুরুষেরাও কম যায় না আজকাল এইসমস্ত রোগ এ আক্রান্ত হলে তারাও গোপন করে রাখে বা রাখতে পছন্দ করে। 

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা  সিফিলিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিতেও রয়েছে সবচেয়ে কার্যকর এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ঔষুধ যেগুলো রোগটির যাবতীয় যন্ত্রনাদায়ক সব উপসর্গগুলো নির্মূল করে খুব দ্রুত আরোগ্যের দিকে নিয়ে যায়। হোমিওপ্যাথি যেহেতু রোগের রুট লেভেল থেকে কাজ করে তাই যে কোন রোগ একবার ভালো হওয়ার পর তা আর পূনরায় দেখা দেয় না। ভুল করেও রোগ নিয়ে বসে থাকবেন না। সিফিলিসে আক্রান্ত হলে কোন প্রকার সংকোচ না করে একজন ভাল একজন হোমিওপ্যাথের সাথে যোগাযোগ করুন। দেখবেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আপনি আবার স্বাভাবিক সুস্থ জীবন যাপন উপভোগ করতে পারছেন। ভাল থাকবেন। আপনাদের সুখী এবং সুন্দর জীবনই আমার কাম্য।

এ রোগPর চিকিৎসায় নিম্নোক্ত ওষুধ গুলা ব্যাবহার করা হয়:

  • penicillin G injection
  • Ceftriaxone
  • Doxycyclin
  • Azithromycin.

শেষ কথা 

মনে রাখবেন কোনো রোগই চেপে রাখা একদমই উচিত নয়, সেটা যেই রোগ হোক না কোনো। আপনার যদি এইডস হয় বা সিফিলিস হয় বা অন্য যে কোনো রোগ যেটাতে আপনি সবার সাথে আলোচনা বা বলতে পারেন না বা বলতে লজ্জা পান বা ভয় পান, সেক্ষেত্রে বলবো যে একদমই করবেন না জিনিসগুলো। আপনি কাউকে না বলতেই পারেন দরকার নেই সবাইকে বলার কিন্তু ডাক্তারের সাথে আপনাকে অবশ্যই আলোচনা করতেই হবে বা ডাক্তার দেখাতেই হবে। রোগীকে ঘৃণা করবেন না, রোগকে ঘৃণা করুন। এই রোগ কোনক্রমেই পুষে রাখবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না। ভাল থাকবেন। আপনাদের সুখী সুন্দর জীবনই আমাদের কাম্য। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সর্বদা। ধন্যবাদ। 

লেখক – শান্তনু পাল