পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা – Home Remedies For Piles

পাইলস ওরে বাপরে শুনলেই কেমন একটা হয় তাই না। মানে পাইলস শুনলেই  সবাই আমরা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে পড়ি ।পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। এটি অস্বস্তিকর এবং অসহনীয় একটি সমস্যা। শিশুসহ যে কোন বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি মলদ্বারের ভেতরে কিংবা বাইরেও হতে পারে। পাইলস হলে চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। লজ্জায় অনেকে বিষয়টিকে দীর্ঘদিন গোপন করে রাখে। ফলে ভুল চিকিৎসার শিকার হন যা স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে একটা কথা কি জানেন তো শরীর যখন আছে তখন রোগ হবেই সে আপনি যেই হন না কোনো। আর পাইলস এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তো যার একটু কষ্ট দায়ক। আর পাইলস এর ক্ষেত্রে তার থেকেও কষ্ট দায়ক বা কারোর ক্ষেত্রে লজ্জা দায়ক যে সেটা দেখানো যায়না বা নিজেও দেখতে পারা যায় না। কিন্তু এর থেকে তো আমাদের মুক্তি পেতে হবে তাইতো। তাহলে চলুন কোনো রকম সংকোচ না করে আজ আমরা একটু আলোচনা করবো পাইলস এর যাবতীয় সম্পর্ক নিয়ে।

পাইলস কি  

প্রথমেই আমরা জানবো যে পাইলস বা বাংলায় যাকে আমরা অ র্শবলে থাকি সেই জিনিসটা কি, কোনো হয় বা এর প্রতিকার কিসে।  পাইলস বা অর্শ একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। পঞ্চাশ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই খোসপাঁচড়ার মত চুলকানো, অস্বস্তি এবং রক্তপাত হয় যা পাইলসের উপস্থিতি বুঝায়। পাইলস হলো পায়ুপথে এবং মলদ্বারের নিচে বা পায়খানার ধরে  অবস্থিত প্রসারিত এবং প্রদাহযুক্ত ধমনী, মলত্যাগের সময় কষা হলে অথবা গর্ভকালীন সময়ে এই সমস্ত ধমনীর উপর চাপ বেড়ে গেলে পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়। আমরা অনেক সময় বলে থাকি যে কুতে মানে জোর করে নিজে থেকে প্রেসার দিয়ে মলত্যাগ করার ফলেও পাইলস বা অর্শ হয়ে থাকে।  পাইলস হয়েছে কি করে বুঝবেন, অর্শ্ব বা পাইলস হলে নিচের সাধারণত  যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয় মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত পায়ুপথ চুলকানো অথবা অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া ব্যথা পায়ুপথ থেকে বাইরের দিকে ফোলা ও ব্যথা লাগা পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করা ও ব্যথা লাগা কখন ডাক্তার দেখাবেন উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ামাত্র যেমন- পায়খানার রঙ কালো বা লালচে হলে এবং পায়খানার সাথে রক্ত গেলে এবং পায়ুপথের মুখে পায়খানার সময় বা পরে চাকা অনুভব করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এরকম কোনো কিছুর সূচনা যদি আপনি বুঝতে পারেন তাহলে আর দেরি না করে সোজাসুজি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতেই হবে।

পাইলস বা অর্শের লক্ষণ 

  1. মলত্যাগে বাধা, পুরপুরি মলত্যাগ করতে না পারা।
  2. মলত্যাগ করার সময় ব্যাথা হতে পারে।
  3. পাইলস থাকলে মলদ্বার ভেজা থাকে এবং চুলকাতে পারে।
  4. মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার ফুলে উঠে বা বের হয়ে আসে।
  5. রক্তপাত- রক্তপাত পাইলস রোগের প্রধান সমস্যা।
  6. পায়ুপথে ব্যথাহীন রক্তপাত,পায়ুপথে কিছু বের হয়ে থাকা,পায়ুপথের চারপাশে চুল্কানি,কোন কোন সময় মলত্যাগে ব্যথা হওয়া।

এরকম কোনো কিছুর যদি আপনি সূচনা পেয়ে থাকেন বা বুঝে থাকছেন যে এই জিনিস গুলো আপনার সাথে হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার পাইলস বা অর্শ আছে বা হচ্ছে বা সূচনার ফল। আসুন এখন আস্তে আস্তে জেনে নিয়তে হবে আমাদের যে পাইলস বা ওরশের কিছু চিকিৎসার তথ্য যেটা জানা অত্যন্ত জরুরি।

পাইলস বা অর্শ্বরোগের চিকিৎসা কি ?

শ্রেষ্ঠ উপায় হল পাইলস/অর্শ্বরোগের উপসর্গগুলি উপশম করা এবং তা যেন ভবিষ্যতে কোন সমস্যা না করে তা প্রতিরোধ করা,মলদ্বারে ফোলা কমানোর জন্য বরফ ব্যবহার করা, নিয়মিত ও মল নরম রাখার জন্য যেসব খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তা পরিহার করা,  প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতিও খাবার ও পানি খাওয়া, বেশীক্ষণ ধরে বাথরুমে বসে না থাকা এবং মলত্যাগ করার সময় বেশি চাপ না দেয়া, কিছু মলম এবং মুখে খাবার ঔষধ আসে যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়।, যেসব রোগীর পাইলস থেকে বার বার রক্ত যায় বা যেটা বের হয়ে আসে বা ব্যাথা করে সেসব ক্ষেত্রে  এলোপ্যাথিক চিকিৎসা হলো অপারেশন। তবে পাইলস/অর্শ্বরোগের সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকর চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি। এতে খরচ কম, ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই এবং একেবারে মূল থেকে সমস্যাটি নির্মূল হয়ে যায়। এছাড়াও পাইলস এর ক্ষেত্রে ঘৈরওয়া চিকিৎসাও আছে যেটা আপনাদের অনেক কাজে দেবে। তাহলে চলুন পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা কি কি করতে পারি সেটা একবার দেখে নি।

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

দীর্ঘ দিন ধরে কনস্টিপশনের সমস্যা থাকলে, হজম ঠিক মতো না হলে, ভারি জিনিপত্র তুললে, প্রেগনেন্সির সময় পেটে চাপ পড়ার কারণে, অতিরিক্ত ওজন এবং এনাল ইন্টারকোর্সের কারণেও  পাইলস হতে পারে। এক্ষেত্রে যে যে লক্ষণগুলির প্রকাশ ঘটে থাকে, সেগুলি হল- রেকটাল থেকে রক্ত ক্ষরণ, ফুলে যাওয়া, চুলকানি, সংক্রমণ, যন্ত্রণা প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, ঠিক সময়ে যদি পাইলসের চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এর থেকে আরও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ই ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যা দারুন কাজে আসে। সেই নিয়েই আলোচনা।

  1. কলা- ১ টা বড় সাইজের ২. রাস্পবেরি- ২ টো নিতে হবে। প্রসঙ্গত, কলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা পটিকে নরম করে। ফলে পাইলসের সমস্যা কমে। অপরদিকে রাস্পবেরি ফলটি ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। দুটি উপাদানই এই রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য় করে। একটা কাপে পরিমাণ মতো দুটি উপকরণ নিন। একটা চামচ নিয়ে ভালো করে দুটি উপকরণ মিশিয়ে দিন। রাতের খাবার পর কম করে ৩ সপ্তাহ এই মিশ্রনটি খান।  যদি দেখেন ভালো ফল পাচ্ছেন, তাহলে ৩ সপ্তাহের পরেও খাওয়া চালিয়ে য়েতে পারেন এই ঘরোয়া ওষুধটি।
  2. কিছু পরিষ্কার তুলো নিন, তাতে সামান্য পরিমান অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার লাগান। এবার মলদ্বার এর ব্যাথার স্থানে তুলো দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিন। একটু সহ্য করতে হবে, কারণ তুলো লাগানোর সাথে সাথেই ব্যাথার স্থানটি কিছুটা জ্বলবে কয়েক মিনিট, তারপর ধীরে ধীরে আমার পেতে শুরু করবেন। ৮-১০ মিনিট এর মধ্যেই সম্পূর্ণ আরাম বোধ করবেন। এভাবে দিনে কয়েকবার করতে পারেন। মলদ্বারের ভেতরের পাইলসের জন্য এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ পরিমান অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুই বার পান করতে পারেন।
  3. একটুকরো পরিষ্কার এলোভেরা নিন। এবার মলদ্বার এর ব্যাথার স্থানে আলতো করে ঘষে দিন।  এভাবে মিনিট খানেক লাগান। দ্রুত আপনার যন্ত্রনা কমে যাবে।মলদ্বারের ভেতরের পাইলসের জন্য একটি বিশেষ উপায়ে এলোভেরা ব্যবহার করতে হবে।  ১.৫ – ২ ইঞ্চি এলোভেরা কেটে নিন, তারপর ছাল ছাড়িয়ে শুধু জেল একটি পরিষ্কার মোটা  পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রেখে সহ্য করার মতো ঠান্ডা করুন। তারপর আলতোভাবে মলদ্বারের মুখে চেপে চেপে লাগান। এটি আপনার অর্শের ব্যাথা, জ্বালাপোড়া ও চুলকানি  ৮-১০ মিনিটের মধ্যে কমিয়ে আরাম দেবে।
  4. দৈনিক তিন বেলা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে এক চা চামচ অলিভ অয়েল খাবেন। অলিভ অয়েল শরীরের প্রদাহ কমায় এবং মনসেচুরেটেড ফ্যাট উন্নত করতে সাহায্য করে। মলত্যাগ করতে অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়না এবং মলত্যাগ খুব আরামদায়ক করে। মলদ্বারের বহিরাংশের পাইলস এর ক্ষতে কিছু শুকনো বড়ই পাতার গুঁড়োর সাথে সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগালে ৫-১০ মিনিট এর মধ্যে যন্ত্রনা থেকে আরাম পাবেন।

শেষ কথা 

পাইলস এর ক্ষেত্রে, পাইলস বা অর্শ হলে ঘাবড়ানোর কিছু হয়নি সবার আগে আপনি ভয় না পেয়ে আগে এটা ভাবতে হবে কি করে এর হাত থেকে বাঁচা যায়। কারণ বাঙালিদের কোথায় আছে যে খাওয়া, ঘুমানো আর পায়খানা বা মলত্যাগ এর থেকে শান্তি হয়তো আর কিছুতেই নেই। আর এর মধ্যে যদি একটারও কোনো ব্যাঘাত ঘটে তখন কিন্তু আমরা পাগলের মতো হয়ে যায়। তাই বলছি মাথা ঠান্ডা করে এর প্রতিকার করতে হবে। ওপরের উল্লেখিত টোটকা করে দেখতে পারেন আশা করা যায় ভালো থাকবেন বা ভালো হয়ে যেতে পারেন। তবে হ্যা আরেকটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে যদি খুউব বাড়াবাড়ি হয়ে যায় তবে অবসসই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে হবে। বাদবাকিটা তখন ডাক্তারের পরামর্শের ওপর চললেই আপনি ভালো থাকবে বা আপনার পাইলস বা অর্শ ঠিক হয়ে যাবে। ভালো থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন।

লেখক – শান্তনু পাল