ডায়াবেটিস – Diabetes Diet in Bengali

ভারতবর্ষ  সহ সারা বিশ্বে Diabetes এক মহামারী রোগ। কয়েক দশক আগেও এটি ছির খুব স্বল্প পরিচিত রোগ। অথচ বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, বরং উন্নয়নশিল এবং অনুন্নত বিশ্বেও অসংক্রমক ব্যাধির মধ্যে Diabetes অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামীণ জনপদে এমনকি শিশুদের মধ্যেও ডায়াবেটিস বিস্তার লাভ করেছে।এর ফলে সমাজ হারাচ্ছে কর্মক্ষমতা ও সম্ভাবনাময় এক তরুণ যুবা প্রজন্মকে, যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দ প্রভাব গোটা জাতিকে স্থবির করে দিচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে অন্ধত্ব, স্নায়ুরোগ, কিডনি ও হূদযন্ত্র বিকল হওয়া, পায়ে আলসার এবং পরিনামে পা কেটে ফেলতে বাধ্য হওয়ার মতো ভয়াবহ জটিলতাগুলো। অসংখ্য মানুষ নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে, পরিবারের ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

ডায়াবেটিস মেলাইটাস কি এবং কেন 

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের নাম ইনসুলিন। অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নি:সৃত এই হরমোন শরীরের কোষে গ্লুকোজ (Glucose)প্রবিষ্ট করতে এবং সেই গ্লুকোজকে ‘গ্লাইকোলাইসিস’ নামক বিপাকীয় ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের জন্য শক্তি উৎপাদন করতে সহায়তা করে। আবার অতিরিক্ত গ্লুকোজকে লিভারে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চয় করে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ এটি স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। এই হরমোন অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত নি:সৃত না হলে, ঘাটতি হলে বা উত্পাদিত ইনসুলিন কোষে কার্যকর না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের (Urine) সাথে গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এটিই হচ্ছে ডায়াবেটিস মেলাইটাস (DM – Diabetes Mellitus) বা বহুমূত্র রোগ। অনেকেই এক সময় ডায়াবেটিসের গ্লুকোজ সমৃদ্ধ প্রস্রাবকে “মধুমূত্র” নামে আখ্যায়িত করতেন। নামের সাথে মধুর সংশ্রব থাকলেও আসলে ইহার যে মধুময় নয়, তা  টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস, যা মুলত: কম বয়সে হয়ে থাকে। তাতে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা হারায় এবং এসব রোগীদের ইনসুলিন অপরিহার্য।

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই রকম

১.  টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস, যা মুলত: কম বয়সে হয়ে থাকে। তাতে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা হারায় এবং এসব রোগীদের ইনসুলিন অপরিহার্য।

২.আরেকটি হচ্ছে টাইপ-২ বা ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ

  •  জন্মগত কিংবা পরিবেশগত কারণে এই ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা যায়। বছরে তিন শতাংশ এই ডায়াবেটিস বাড়ছে এবং সাধারণত তরুণরাই এতে আক্রান্ত হচ্ছে।
  • অতিরিক্ত ওজন, মেদবাহুল্য, কায়িক পরিশ্রমরে অভাব, উচ্চ শর্করা এবং কম আঁশযুক্ত খাদ্যাভ্যাস তাকলে এই ডাযাবেটিরেস ঝুঁকি বেড়ে যায়। বংশগত কারণেও এই ধরণের ডায়অবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। বাবা মা কারও এক জনের ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে, আর দুজনেরই থালে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়। অনেক সময় শুধ গর্ভকালেই ডায়াবেটিসের উদ্ভব ঘটে। মেডিকেল সাইন্সের পরিভাষায় একে জিডিএম বলে। এটি মা এবং শিশুর অসংখ্য জটিলতার কারণ হতে পারে। সঠিক কারণ জানা না গেলেও পরিবারে ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তিই হলো সুশৃংখল জীবন যাপন। নিয়ম মাফিক খাওয়া দাওয়া করা, ঠিক মত হাঁটা চলা বা ব্যায়াম করা, ওষুধপত্র ব্যবহার ইত্যাদি যারা মেনে চলেন, তারা যেমন ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, তেমনি আক্রান্ত হলেও সহজেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন যেমন সম্ভব, তেমনি ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব। ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা দেখার জন্য মাঝে মধ্যে রক্তের সুগার টেস্ট করতে হবে। স্বল্প দামের গ্লুকোমিটার দিয়ে বাড়িতে বসে বসে সহজেই এ কাজটি করা যায়। অভূক্ত অবস্থায় রক্তের সুগারের পরিমাণ ৬ মিলিমোল এবং খাওয়ার পরে ৮ মিলিমোল-এর কাছাকাছি হলে ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের এইচবিএ-১সি (HbA1C)মেপেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ধারণা করা যায়। এইচবিএ১সি ৭% নিচে হলে তিন মাস ধরে সুগার ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

ডায়াবেটিস চিকিৎসা পদ্ধতি

ডায়াবেটিসের চিকিত্সার জন্য সংক্ষিপ্ত তিনটি “ডি” অনুসরণীয়। যেমন-

  • প্রথম “ডি”- ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভালো থাকেন।

  • দ্বিতীয় “ডি”- ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন।

  • তৃতীয় “ডি”- ড্রাগ বা ওষুধ, খুব অল্প সংখ্যক রোগীরই এর প্রয়োজন পড়বে।

শেষ কথা 

মনে রাখতে হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় “ডি” অর্থ্যাত্ শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ডায়াবেটিসকে ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ওষুধধের ভূমিকা এখানে খুব কম। আবার প্রথম দুটি “ডি” বাদ দিয়ে শুধু ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুবই দুরূহ। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিত্সা একটি সমন্বিত সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিত্সক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনও এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতি স্তরে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলেই ডায়াবেটিসের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অনিরাময় যোগ্য রোগ হলেও একে নিয়ন্ত্রণে রেখেই সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করা যায়। তাই ডায়াবেটিসের মহামারী রোধে আজকের স্লোগান হোক “পরিমিত খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করি” এবং একটি সুস্থ, কর্মোদ্যম ও প্রাণবন্ত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে।