আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় –
নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর সুস্থ আছেন।
সুস্থ থাকার জন্য সব সময়ই সুষম খাদ্য খাওয়া উচিৎ। কিন্তু গর্ভাবস্থার জন্য এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভের শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে হবু মাকে। আবার এমন কিছু খাবার আছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ নয়। যেমন একটা কথা হটাৎ মনে পরে গেলো তাই একটু উদাহরণস্বরূপ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। বিপাশার টক খাবার খুব প্রিয় ছিল । সে যখন গর্ভবতী হয় তখন একদিন তেঁতুলের সাথে মিশিয়ে কাঁচা পেঁপে খেল বেশ ভালো পরিমানেই। খাওয়ার পর পরই তার পেটে ব্যথা শুরু হল এবং গর্ভপাত হয়ে গেল। হ্যাঁ এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায় অনেক সময়ই অজ্ঞতার কারণে। তাই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কী খাওয়া উচিৎ এবং কী খাবার বাদ দেয়া উচিৎ তা জানা থাকতে হয়। অনেকেরই জানা থাকে না যে কি খাবে বা কি না খাবে এই ১০ মাস।
গর্ভের সন্তান পুষ্টি পায় তার মায়ের কাছ থেকে। অনাগত সন্তান আর মায়ের ভবিষ্যৎ সুস্থতাও অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের খাবার কেমন তার ওপর নির্ভর করে। অনেক মা দ্বিধায় ভোগেন কী খাওয়া উচিত, কী উচিত নয়। অনেকে উদ্বিগ্ন থাকেন বাড়তি ওজন নিয়েও।বহু মানুষের ধারণা, মা যদি বেশি খাবার খায় তাহলে গর্ভের সন্তান আকারে বড় হবে। তখন স্বাভাবিক ডেলিভারি সম্ভব হবে না। তাই গর্ভবতী মাকে কম খেতে দেওয়া হয়। যা মা ও শিশুর জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। আবার অনেকের মতে, একজন গর্ভবতী মাকে দুজনের খাবার খাওয়া উচিত। এটাও ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের সঙ্গে মুটিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। অতিরিক্ত ওজনের মায়েদের ক্ষেত্রে মৃত সন্তান অথবা ছোট শিশুর জন্মদানের ঘটনা বেশি। তবে খাবার যেমনই হোক না কেন, সেটা হতে হবে পুষ্টিকর। এ জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবারে খাদ্যের সব কয়টি উপাদানের উপস্থিতি থাকতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর দৈনিক ২১ থেকে ৬০ কিলো- ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও একজন গর্ভবতীর প্রয়োজন হয় তার চেয়ে ৩৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্যের। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ও কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মায়। চলুন তাহলে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কি ধরণের খাবার খাওয়া উচিৎ এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ এই বিষয়ে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে খাবারগুলো হবু মায়েদের খাওয়া উচিৎ
-
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
চর্বিহীন মাংস, মুরগী, মাছ, ডিম, ডাল (মটরশুঁটি, মসূর ডাল) ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। সপ্তাহে ২ দিন বা তারচেয়েও বেশি মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। তৈলাক্ত মাছ বা সামুদ্রিক মাছ সপ্তাহে ১ দিন খেতে পারেন। আমিষ জাতীয় খাবার গর্ভের শিশুর শরীরের নতুন টিস্যু গঠনের জন্য সাহায্য করে।
-
দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, পনির, দই ইত্যাদি খাবারগুলো ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। এগুলোর চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ যেন কম থাকে সেটি খেয়াল করতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে। অনেক মানুষের শরীরেই আয়োডিনের ঘাটতি থাকে। আয়োডিন এমন একটি খনিজ উপাদান যা শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অপরিহার্য। দুগ্ধজাত খাবার ও সামুদ্রিক খাবার আয়োডিনের চমৎকার উৎস। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর অনেক বেশি কাজ করে। তবে সাধারণত প্রথম ৬ মাসে বাড়তি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়না। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে যখনই ক্ষুধাবোধ হবে তখনই খাবেন।
-
ফল ও শাকসবজি
দিনে ৫ বার ফল ও ৭ বার সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফলের চেয়ে শাকসবজি বেশি খান। জুস ও স্মুদি ও পান করতে পারেন। তবে এগুলোর সুগার ব্লাড সুগার লেভেল বৃদ্ধি করতে পারে এবং দাঁতেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই এগুলো সীমিত পরিমাণে পান করাই ভালো। তাজা ফল ও সবজি খাওয়াই বেশি স্বাস্থ্যকর।
-
স্টার্চ জাতীয় খাবার
আলু, লাল চালের ভাত, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি স্টার্চ জাতীয় খাবার আপনার প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় রাখুন। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে এনার্জি প্রদানে সাহায্য করে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে খাবারগুলো হবু মায়েদের খাওয়া উচিৎ না
-
অপাস্তুরিত দুধ
অপাস্তুরিত দুধ বা কাঁচা দুধে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ভালো করে না ফুটিয়ে দুধ পান করা যাবেনা। অপাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন- নরম পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-
কাঁচা ডিম
ডিম পুষ্টিকর একটি খাবার। অনেকেরই কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ না করে খাওয়া যাবেনা।
-
কলিজা ও কলিজার তৈরি খাবার
লিভারে রেটিনল থাকে যা একটি প্রাণীজ ভিটামিন এ। এর অতিরিক্ততা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
-
ক্যাফেইন
কফি ক্লান্তি দূর করার জন্য কার্যকর হলেও গর্ভাবস্থায় এর পরিমাণ কম করতে হবে। চা, কফি ইত্যাদিতে ক্যাফেইন থাকে। দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম গ্রহণ করে। মিসক্যারেজের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
-
অর্ধসিদ্ধ মাংস
অর্ধসিদ্ধ মাংসে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। প্যাকেটজাত মাংস যেমন- সসেজ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। মাংস ভালো ভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
-
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু অধিক পরিমাণে খেলে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় পদার্থ থাকে। তার জন্যই খাওয়াটা উচিত নয়।
-
কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়া বিপদজনক। এতে গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে।Harvard School of Public Health প্রেগনেন্ট নারীদের জন্য হার্ভার্ড হেলথি ইটিং প্লেট নামে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা আস্ত শস্যদানার খাবার খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। স্বাস্থ্যকর ভেজিটেবল ওয়েল গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সীমিত পরিমাণে অর্থাৎ দিনে ১/২ বার খাওয়ার জন্য বলা হয়। লাল মাংস সীমিত পরিমাণে এবং প্রসেসড মিট এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও রিফাইন্ড শস্য দিয়ে তৈরি সাদা পাউরুটি ও সাদা চালের ভাত এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার কথা বলা হয়েছে এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শেষ কথা
মা হওয়া একটা ভগবানের বরদান বলতে পারেন। পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ সুখ হল আপনি যখন মা হবেন বা হয়েছেন কি তাইতো ? তাই নিজেদের সামান্য সামান্য ভুল গুলি এড়িয়ে চলুন। তার কারণ গর্ভকালীন সময়ে মায়ের চাই বিশেষ যত্ন। মহিলাদের গর্ভধারনের পূর্বেই নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন সুস্থ্য মা-ই পারে একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। ভালো থাকবেন আর সুস্থ ভাবেই থাকবেন যাতে করে আপনার আর আপনার বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হয়। ধন্যবাদ।