এলার্জি জাতীয় খাবার – Allergy Causing Food in Bengali

এলার্জি একটি এমন শব্দ যার সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এলার্জি সাধারণত কোনো একটি বিশেষ খাবার থেকে হতে পারে। আলাদা মানুষের ক্ষেত্রে সেটি আলাদা হয়। মানে কারো ডিমে এলার্জি থাকলে অন্য মানুষের ক্ষেত্রে তা না ও  হতে পারে। আমাদের কাছে এলার্জির সাধারণ ধারণা হল কোনো বিশেষ খাবার খেলে আমাদের গায়ে চাকা চাকা দাগ দেখা যায়, চুলকানি হয়, অনবরত হাঁচি কাশি দেখা যায় এবং তা চলে বেশ অনেকটা সময় ধরে। ধুলো ,বালি, ফুলের পরাগ থেকেও এলার্জির লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এলার্জির কারণকে হাইপার সেনসিটিভিটি বলা হয়। আমাদের দেহে ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এর ভূমিকা অপরিসীম। এই ইমিউনো গ্লোবিউলিন আমাদের অর্জিত অনাক্রম্যতা। মোট পাঁচ ধরনের ইমিউনোগ্লোবিউলিন আমাদের শরীরে উপস্থিত। আমাদের অনেকের শরীরে বিশেষ কিছু খাদ্যবস্তুর ক্ষেত্রে এই ইমিউনোগ্লোবিউলিনের বিক্রিয়াতে আমাদের শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।এলার্জি সমস্যা রক্তের গ্রূপ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন খ্যাদের মাধ্যমে বেশি অনুভূত হয়। যাদের রক্তের গ্রূপ ‘ও’ তাদের ক্ষেত্রে রাজ হাঁস, মাগুর মাছ, শিঙমাছ, চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, পোস্তদানা, এভাকাডো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, জলপাই, লাল আলু, বেগুন, আইসক্রিম, দুধ, দই, নারকেল, তেতুল, স্ট্রবেরি, আপেল ইত্যাদি এলার্জি বাড়াতে পারে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তাদের জন্য এলার্জি তৈরী করতে পারে নিচের খাবার গুলোঃ হাঁসের মাসংস, গুরুর মাংস, কোয়েল পাখি, মাগুর মাছ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, মাখন, ঘন দুধ, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, মিষ্টি আলু, বেগুন, জলপাই, কমলা, পেপে, আম, টমেটো ইত্যাদি।

রক্তের  গ্রূপ ‘বি’ এর জন্য এলার্জি যুক্ত খাবারের তালিকাঃ

হাঁসের মাংস, কোয়েল পাখি, কাঁকড়া, চিংড়ি, ব্লু চিজ, ভুট্টা, চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, জলপাই, কুমড়া, টমোটো, আইক্রিম, দুধ, দই, নারিকেল, ডালিম, কামরাঙ্গা, টমেটো ইত্যাদি।

রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ এর জন্য এলার্জি যুক্ত খাবারের তালিকাঃ

হাঁসের মাসংস, গুরুর মাংস, কোয়েল পাখি, কাঁকড়া, চিংড়ি, লবস্টার, পারমিজান, ব্লু চিজ, ভুট্টা, তিলের তেল, পোস্তদানা, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়া বীজ, আইসক্রিম, জলপাই, মুলা, কলা, পেয়ারা, নারিকেল, কমলা, ডালিম, নারিকেল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি।

ফুড এলার্জি ? কী খাবেন কী খাবেন না?

আপনার হয়তো সকালের নাশতায় ডিম না হলে চলেই না। একবার ভেবে দেখুন তো, ডিমে যাদের অ্যালার্জি, তাদের কি সমস্যাতেই না পড়তে হয় ? এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের নানা ধরনের খাবার পেটে সয় না। কারো দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা, কারো শরীরে গ্লুটেন পড়লেই বাঁধে বিপত্তি (গম, বার্লিতে গ্লুটেন থাকে), কেউবা খেতে পারেন না ফ্রুক্টোজ জাতীয় খাবার (যেমন কলা, আঙুর, আম, আনারস)। অনেকে ভোগেন ডাইভারটিকিউলার ডিজিজে। যার ফলে উল্টো-পাল্টা খেলেই বমিভাব, জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা কোষ্টকাঠিন্য। আপনি যদি সব খেতে পারেন, তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। কারণ অনেক মানুষেরই খাবারের তালিকা অনেকটাই সীমিত। সেসব মানুষদের জন্যই টনিক জানিয়ে দিচ্ছে সকালের নাশতায় তারা স্বাস্থ্যকর কি খেতে পারেন।

জলখাবার এ  যা খাবেন

দুধ এবং ওটস দিয়ে বানানো সুস্বাদু পরিজ—তবে চিনি কিংবা মধুর বদলে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য যোগ করুন খেজুর কুচি। ওটসে আঁশ তো থাকবেই, খেজুর থেকে পাবেন বাড়তি ফাইবার। খেতে পারেন লাল চালের ভাত এবং ডাল।হোলগ্রেইন বাদামী পাউরুটির উপর লাগিয়ে নিন পিনাট বাটার।

ডাইভারটিকিউলার ডিজিজ

পরিশোধিত আটা/ময়দা এবং চালে আঁশ কম থাকে। দীর্ঘদিন ধরে যাদের কম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস সাধারণত তাদের এই রোগ বেশি হয়। শরীর প্রয়োজনীয় আঁশ না পেলে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই এই রোগের ভুক্তভোগীদের সকালের নাশতায় রাখতে হবে হাই-ফাইবার অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাবার।

দুধে অ্যালার্জি যাদের

দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস। যদি আপনি এসব খেতে না পারেন তাহলে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে অন্য উৎস থেকে।

নাশতায় যা খাবেন

পছন্দের ফল দিয়ে তৈরি করুন স্মুদি, সঙ্গে দুধের বদলে যোগ করতে পারেন সয়া মিল্ক। আজকাল বাজারে আমন্ড মিল্কও পাওয়া যায়। লাল আটার রুটি বা হোলগ্রেইন পাউরুটিতে লাগিয়ে নিন পিনাট বাটার, সঙ্গে দিন পাকা কলা কুচি।প্রতিক্ষণ/এডি/তাজিনঝাল খেতে চাইলে রুটি পেঁচিয়ে নিন ডিমের ঝুরিভাজা, টমেটো কুচি, পালংশাক, ধনে পাতা এবং কাঁচামরিচ কুচি দিয়ে।  ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ দিয়ে তৈরি করে নিন পরিজ। ব্যবহার করতে পারেন সয়া মিল্ক কিংবা আমন্ড মিল্কও।

সিলিয়াক ডিজিজ

গম, বার্লি, রাইজাতীয় শস্য থেকে তৈরি রুটিজাতীয় সব খাবারে থাকে গ্লুটন নামের পদার্থ। সিলিয়াক ডিজিজ আক্রান্ত রোগীদের গ্লুটন যুক্ত খাবার পরিহার করে চলতে হয়। তবে এই রোগে আক্রান্তদের খাবারের তালিকাও তেমন ছোট নয়। প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটনমুক্ত খাবার হল তাজা ফল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল এবং দুধ।

জল খাবার এ যা খাবেন:

 আটা, ময়দা, সুজিতে যেহেতু সমস্যা, তাই এসব বাদ দিয়ে সবই খেতে পারেন আপনি। টমেটো, ধনে পাতা, পনির ইত্যাদি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজার অমলেট। দুধ-কলা দিয়ে ভাত তো খাওয়াই হয়, সামান্য দারচিনি গুঁড়ো দিয়ে এবার যোগ করুন বাড়তি স্বাদ। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চিনির বদলে দিন মধু। আর সাদা ভাতের বদলে খেতে পারেন লাল চালের ভাত। রুটির বদলে সকালের নাস্তায় ভাতই হোক আপনার পেট ভরানোর উপায়। মিষ্টি স্বাদের কিছু ভাল না লাগলে মৌসুমি শাক-সবজি দিয়ে ভাত ভাজা করে নিতে পারেন। সঙ্গে টুকরো মাংসও থাকতে পারে।

যে ৭ টি খাবার এলার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে

এলার্জির সমস্যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা। কমবেশী সকলেরই এলার্জির সমস্যা থাকে। মূলত এলার্জির সমস্যা বহু কিছু থেকেই হতে পারে। যেমন ধুলাবালি থেকে হতে পারে ডাস্ট এলার্জি, ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে হতে পারে কোল্ড এলার্জির, এলার্জির জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হতে পারে ফুড এলার্জি। সকলে ধরণের এলার্জির মধ্যে ফুড এলার্জিটা সবচেয়ে বেশী মানুষের মাঝে দেখা যায়। মূলত গরুর মাংশ, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, ডিম ইত্যাদি খাবারে এলার্জির প্রাদুর্ভাবটা বেশী থাকে। তবে কোরবানীর ঈদে অতো কিছু কি আর মনে থাকে! শখ করে অথবা পরিবারের চাপে সমস্যা থাকার পরেও এক দুই টুকরা কোরবানির গরুর মাংস খাওয়া হয়েই যায়। কিন্তু এরপরে যে শারীরিক সমস্যা, অস্বস্তি এবং চুলকানি দেখা দেয়, তার জন্যে ঘরে বসেই কোন ওষুধ সেবন না করেই তাৎক্ষণিকভাবে পেতে পারেন প্রতিকার। জেনে নিন কোন খাবারগুলো আপনার এলার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে আপনাকে দেবে স্বস্তি।

কলা

কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কমবেশী আমরা সকলেই জানি। তবে খুব দারুণ একটা ব্যপার হচ্ছে, অ্যালার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। শরীরে লাল রঙের ছোট র‍্যাশ দেখা দিলে অথবা পেটের সমস্যা দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। কারণ কলা শরীরের মেটাবলিজব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেলে সেটি অ্যালার্জির সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেয় না, তবে শরীরে অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কলা খেলে অ্যালার্জির সমস্যা অতিরিক্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়।

ভিটামিন সি অথবা কমলা জাতীয় ফল

অনেক সময় পাকস্থলীতে খুব বেশী পরিমাণে প্রোটিনের আধিক্য হলেও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে থাকে। সেক্ষেত্রে এসিড জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য বেশী পরিমাণে খেতে হবে।

আদা এবং আদা চা

আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং অ্যালার্জির সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজে দেয়। প্রদাহজনক বিরোধী এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট মূলক উপাদান আদাতে থাকায় বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যার এমনকি ডায়েরিয়ার ক্ষেত্রেও খুব কাজে দেয় আদা। আদা চা তৈরি করতে কিছু আদা কুঁচি ফুটন্ত জল দিয়ে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কিছুটা আদার রস এবং মধু দিয়ে মিশিয়ে গরম গরম খেয় নিতে হবে।

শসা এবং গাজরের রস

কোন খাবার খাওয়ার পরে হুট করেই শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা শসা এবং গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেললে খুব দ্রুত কাজে দেবে। শসা এবং গাজর দুইটি সবজীতেই এন্টি- অ্যালার্জিক উপাদান শরীরে অ্যালার্জির সমস্যাকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

ক্যাস্টর অয়েল

ক্যাস্টর অয়েল শুধুমাত্র আপনার চুলের জন্য নয়, আপনার পাকস্থলী এবং এলার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলেো ক্যাস্টর অয়েল দারুণ কাজ করে। অ্যালার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পরিমাণ পানিতে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।

গ্রিন টি

গ্রিন টি শুধুমাত্র ওজন কমাতেই নয় অ্যালার্জির সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে থাকে। গ্রিন টিতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-হিস্টাসিন এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদানের জন্য অ্যালার্জিক খাবার খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তা বাঁধা দিয়ে থাকে।

লেবু

লেবু হলো অন্যতম সাইট্রাস জাতীয় ফল যা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে থাকে। পানি এবং মধুর সাথে লেবুর রস মেশালে শরীরের জন্য দারুণ এক ডিটক্সিফাইং পানীয় তৈরি হয়ে যায়। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং অ্যালার্জির সমস্যা কমে আসবে।

শেষ কথা 

অ্যালার্জির সমস্যা যাদের প্রকট তাদের জন্য অ্যালার্জি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।অর্থাৎ যেই খাবার তা খেলে বা যা করলে আপনার এলার্জি হয় বা হয়ে থাকে সেই খাবার বা সেই জিনিসগুলোকে বাদ দিলেই তো ল্যাঠা ছুইকে যায়।  তবে ভুলবশত অথবা শখ করে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে গেলে দুশ্চিন্তা না করে অ্যালার্জির সমস্যা প্রতিরোধে উপরোক্ত খাবারগুলো খেয়ে ফেলার চেষ্টা করুন আশা করি ভালোই থাকবেন। 

লেখক – শান্তনু পাল