মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় -Tips to Loose Weight in Bengali

নিয়মিত সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে পারলে ওজন এবং পেটের মেদ দূর করা সম্ভব। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। একবারে পেট ভরে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে নিয়ে পাঁচ ছয়বারে খাবেন। খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে জল খাবেন। রাতের খাবার সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে অথবা ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন এবং পেটের মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় হিসাবে এই ব্যায়াম গুলো সাহায্য করবে। মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় জানা থাকলে সহজেই নিজেকে স্লিম করতে পারবে। ওজন বেড়ে গেলে আড়ালে আবডালে শুনতে হয় তুমি বেশ মুটকি হয়ে গেছ। বন্ধু বান্ধবীরা যখন তখন খোঁচা মারে। চরম বিরক্ত আপনি এ অবস্থার অবসান চান। তবে পথটা জানা নেই। পুষ্টিবিদদের মতে, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চে ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখলেও বিকেলের দিকেই আমরা মূলত অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকি। ভাজাভুজি, ফুচকা, চাট, ভেলপুরি এই সময় আমাদের টানে! বাইরের খাবার এ থাকে অত্যাধিক মাত্রায় তেল মশলা। আজে বাজে তেল দিয়ে বা সস্তার তেল দিয়ে রান্না হয়ে থাকে। তাই বাইরের খাবার বেশি খাওয়াও উচিত না।  তাতে আপনি দিনে দিনে মোটা তো হবেনই তাছাড়া অন্যান্য শারীরিক প্রবলেম দেখা দিতে পারে। সত্যিই কি ফুচকা, চাট, ভেলপুরি অস্বাস্থ্যকর? ডায়েটিশিয়ান ও চিকিৎসকদের মতে, এই সব খাবারের উপাদান পুষ্টিকর হলেও রাস্তাঘাটের ধুলাময়লা, হাইজিনের অভাবে শরীর খারাপ হতে পারে। একদল আছেন ব্যায়াম করেন ঠিকই। তবে খাবার নিয়ন্ত্রণের ধারে কাছেও যান না। আরেক দল আছেন কম খান। তবে ব্যায়াম করতে তাদের প্রচন্ড অনীহা। শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজই করতে চান না। দু’দলই সঠিক পথে নেই। তাহলে মেয়েদের ওজন কমানোর উপায় কি? কিভাবে ওজন কমাবেন? নিজের ওজনটা কমিয়ে কমবেশি ঝরঝরে ও ফিট সকলেই থাকতে চান। অনেক ডায়েট, ব্যায়ামের পরও ওজন কমছে না? ভুলটি লুকিয়ে আছে অন্য কোথাও। যারা ওজন কমাতে চান, তাঁরা রাতের বেলা খুবই সামান্য আহার করেন, মূল খাবারটি খাওয়া হয় দুপুর বেলায়। কিন্তু দুপুরে খাওয়ার পর আমরা অনেকেই এমন কিছু কাজ করে ফেলি যা রাতের খাওয়ার পর করা হয় না এবং এই কাজগুলো মূলত আমাদের হজমে বাঁধা দেয় ও ওজন বৃদ্ধি করে। ফলে আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেন, ওজন আর কমে না। লাঞ্চের পর অফিসে এক কাপ চা হলে চলেই না কিংবা ডায়েট করতে গিয়ে লাঞ্চের পর ফল খান? জেনে রাখুন, এগুলো করে উল্টো বাড়াচ্ছেন ওজন। জেনে নিন সুস্থ থাকতে ও ওজন কমাতে দুপুরে খাওয়ার পর মেনে চলবেন কিছু উপায়। জেনে নিন সে রকম কিছু উপায়। 

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়গুলি হল :-

  • ঘুমের ব্যাঘাত হবে ভেবে রাতের বেলা চা/কফি পান করেন কেউই, কিন্তু দুপুরে লাঞ্চের পর চা-কফি পানের অভ্যাস অনেকেরই আছে। বিশেষ করে যারা অফিসে থাকেন, তাদের তো লাঞ্চের পর চা-কফি ছাড়া চলেই না। ওজন কমাতে চাইলে এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। চায়ের পাতা এসিডিক, যা হজমকে বাধাগ্রস্থ করে। দুপুরে বলাই বাহুল মাছ/মাংস/ডাল ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া হয়, চা খাওয়ার ফলে এই প্রোটিন সহজে হজম হয় না। এছাড়া খাবার থেকে আয়রন শোষণেও বাঁধা দেয় চা। এছাড়া চায়ের দুধ-চিনির বাড়তি ক্যালোরি তো আছেই।
  • দুপুরে ঘুমানোটা অনেকেরই মারাত্মক একটি বদ অভ্যাস। বিশেষ করে বউরা যারা ঘরে থাকেন, তাঁরা তো অনেকেই লাঞ্চের পর বিকাল পর্যন্ত একটু ঘুমিয়ে নেন। এই কাজটি কখনোই করবেন না। দুপুরের ঘুম আপনার হজম শক্তিকে বাধাগ্রস্থ করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে মারাত্মক ভূমিকা রাখে। একান্তই ঘুমাতে হলে লাঞ্চ করার আগে ঘুমিয়ে নিন, এতে কোন অসুবিধা নেই।
  • আমাদের দেশে সাধারণত দুপুরে ভাত খাওয়ার আগে স্নান করাটাই নিয়ম, সেভাবেই আমরা বেড়ে উঠি। কাজের ব্যস্ততায় কিংবা আলসেমীতে দুপুরে খাওয়ার আগে আজকাল অনেকেরই স্নান হয় না। এই কাজটি যতটা সম্ভব পরিহার করুন। 
  • অনেকেই দুপুরের পর হাঁটতে যান বা ব্যায়াম করেন, যেহেতু রাতে সেটা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান, তাঁরা তো অবশ্যই করেন এটা। অফিসে থাকলেও অনেকে দুপুরে খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করেন এই ভেবে যে এতে বাড়তি ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলা যাবে। অথচ ফলাফল কিন্তু হয় উল্টো! হ্যাঁ, খাওয়ার পর হাঁটা ভালো, এটা খাবার হজম করতে এবং ওজন কমাতে খুব সহায়ক। কিন্তু হাঁটা আপনাকে হাঁটতে হবে খাওয়ার অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর। খুব জোরে হাঁটা চলবে না, কেবল হালকা পায়চারী। এবং অবশ্যই কোন ভারী ব্যায়াম বা পরিশ্রম করবেন না। এতে হজমে সমস্যা, বুক জ্বালা পোড়া, এসিডিটি ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা দেবে।
  • ফল খেতে নিঃসন্দেহে সকল চিকিৎসকই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর যারা ডায়েট করেন, তাঁরা তো অবশ্যই ফল খেয়ে থাকেন অনেক বেশী। অনেকের ডায়েট চার্টেও পুষ্টিবিদ ফল দিয়ে থাকেন। রাতের বেলা হালকা ডিনারের পর ফল খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু দুপুরে নয়। কেননা আমাদের দেশে দিনের সবচাইতে ভারী খাবারটা আমরা দুপুরেই খেয়ে থাকি। ফল হজম হতে সময় কম লাগে, এদিকে ভারী খাবারের সময় লাগে বেশী। ফলে দুটি খাবারের একটিও ঠিক মত হজম হয় না। হজমের সমস্যা তো হয়ই, সাথে ওজনও বাড়ে। ফল খেতে চাইলে খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে বা পরে খেতে হবে।
  • খাওয়ার পর একটু মিষ্টি কোন খাবার মুখে দেয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। মিষ্টি পান হোক বা অন্য যে কোন খাবার বা পানীয়, মিষ্টি মানেই বাড়তি ক্যালোরি। তাই এই অভ্যাসটি আপনাকে পরিহার করতে হবে একেবারেই।

ডায়েট করে মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়গুলি হল :-  

একটু বাড়তি ওজন কমানোর জন্য বেশির ভাগ মানুষ সবসময়ই অনেক চিন্তিত থাকেন। কী করলে ওজন কমবে, কী কী না খেলে ওজন কমবে, কোন কোন খাবার ওজন কমায়, ডায়েট করতে চাইলে কীভাবে করতে হবে এই সব ভেবে ভেবে ঘন্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। তাই ওজন কমাতে এই ডায়েট চার্টটি দেখে নিন কাজে লাগবে।

  1.  প্রথম দিনই হচ্ছে আপনার ডায়েট প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রথম দিন হচ্ছে শুধুই ফল খাবার দিন। সারাদিনে যেকোনো সময়ে যত খুশি তত ফল খান। তবে একটি ফল বাদে , আর সেটি হচ্ছে কলা। কলা বাদে যেকোনো ফলই আপনি খেতে পারবেন প্রথম দিন । বিশেষ করে তরমুজ এবং তরমুজ বেশি করে খাবেন। এতে করে পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকবে। আর কমপক্ষে ৮-১২ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করবেন। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন , আপনি যদি সত্যিই এই প্ল্যানটি কার্যকর করতে চান তবে ফল ছাড়া অন্য কোন কিছুই খাবেন না এবং খেয়াল রাখবেন যাতে পেট কখনোই খালি না থাকে। যখনই ক্ষুধা ভাব আসবে তখনই ফল খাবেন এবং অবশ্যই পানি পান করতে ভুলবেন না।
  2. ১ম দিন যেমন শুধুই ফলমূল খেয়েছেন , তেমন করেই ২য় দিন শুধুই শাক সবজি খাবেন। কাঁচা বা রেঁধে যেকোন ভাবেই খেতে পারেন আপনার পছন্দের সবজি। তবে রাঁধার সময় অবশ্যই তেল ব্যবহার করবেন না। সবজিতে তেল ব্যবহার করলে ওজন কমানোর উদ্দেশ্যটাই বিফলে যাবে। তাই তেল ব্যবহার না করে আধা সেদ্ধ করে বা নিজের পছন্দ অনুযায়ী রেঁধে খান। সবজির মধ্যে খেতে পারেন গাজর , ব্রকলি , বাঁধাকপি , শশা , লেটুস , শিম ইত্যাদি । তবে যদি আপনার খাবারের তালিকায় **আলু** রাখতে চান তবে দিনের অন্য কোন সময়ে না খেয়ে সকাল বেলাতেই খান। কারণ সকাল বেলায় সেদ্ধ আলু খেলে আলুতে যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে তা সারাদিনের বিভিন্ন কাজে বার্ন হয়ে যাবে এবং ফ্যাটও জমবে না। সারাদিনে আপনার ইচ্ছেমত সবজি খেয়ে নিন আর অবশ্যই ৮-১২ গ্লাস জল পান করতে ভুলবেন না। আর সারাদিন এত শাক সবজি খাওয়ার জন্যে অন্যান্য দিনের চাইতে এই দিনে টয়লেটে বেশি যাওয়া লাগতে পারে। তবে এর ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  3.  ডায়েট প্ল্যানের ৩য় দিন হচ্ছে সবজি এবং ফল খাওয়ার দিন। এই দিন আপনি যেকোনো সবজি ও ফল ইচ্ছেমত পেট ভরে খেতে পারবেন। তবে এই দিনের খাবারের তালিকা থেকে কলা এবং আলু বাদ দিবেন। যেকোনো সময় খিদে লাগলেই ফল বা সবজি খেয়ে নিন , আর সারাদিনে ৮-১২ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করবেন।
  4. এই দিন শুধু কলা আর দুধই হবে সারা দিনের খাবার। কলা এবং দুধ ছাড়া আর কোন কিছুই খাওয়া যাবে না । তবে এই দিন ব্যতিক্রম হচ্ছে আপনি নিজের ইচ্ছেমত খেতে পারবেন না। সারাদিনে ৮-১০ টি কলা এবং ৩ গ্লাস দুধের বেশি খাওয়া যাবে না। অনেকেই হয়তো চিন্তা করছেন যে এই দিন হয়তো খিদে লাগতে পারে। সেই ধারনা ভুল,দিনের শেষে আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন যে এই খাবারেই বেশ কেটে গেছে সারাদিন । তবে তার জন্যে এই সীমিত কলা এবং দুধ ঠিকমতো ভাগ করে নিতে হবে যে দিনের কোন সময়ে কতটুকু করে খাবেন। সকালের খাবারে একটি কলা এবং এক গ্লাস দুধ রাখুন এবং দুপুরের আগে বা সকাল ১১-১২ টার দিকে আরো দুটি কলা খেতে পারেন। দুপুরে এক গ্লাস দুধ এবং ২ টি কলা খান। আর বিকেল বেলা নাস্তায় প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩ টি কলা খেতে পারবেন। আর রাতের বেলা বাকি এক গ্লাস দুধ এবং দুটি কলা খেয়ে নিন । এই নিয়ম অনুযায়ী দুধ এবং কলা ভাগ করে নিলে সারাদিনে একদমই ক্ষুধা অনুভব করবেন না।
  5. এই দিনের ডায়েটে প্রথম বারের মত দুপুরে ভাত খেতে পারবেন। তবে শুধুই ভাত এবং তা এক কাপের বেশি নয়। আর সারাদিনে ৬-৭ টি বড় সাইজের টমেটো খেয়েই পার করে দিতে হবে এই ডায়েটের ৫ম দিন। তবে এই দিন শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে , তাই অবশ্যই কমপক্ষে ১২-১৫ গ্লাস জল পান করতে হবে।
  6. ডায়েটের এই ৬ষ্ঠ দিনে আবারো সেই ভেজিটেবল ডায়েট করতে হবে। সারাদিনে যত খুশি সবজি খেতে পারবেন , তবে তেল দিয়ে রান্না করবেন না। আর দুপুরে সবজির সাথে এক কাপ ভাতও খেতে পারবেন। দিনে অবশ্যই ৮-১২ গ্লাস জল পান করতে ভুলবেন না যেন।
  7. ডায়েট প্ল্যানের এই শেষ দিনে সারাদিন যেকোন সবজি এবং দুপুরে এক কাপ ভাত আপনি খেতে পারবেন । তবে এই দিনে বোনাস হচ্ছে এর সাথে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ফলের জুসও খেতে পারবেন। বিশেষ করে জাম্বুরা,তরমুজ,কমলা এসব ফলের জুস বেশি করে খাবেন।

৭ দিন শেষে আপনার শরীরের ওজন অন্তত ১-২ কেজি তো কমবেই,সাথে সাথে শাক সবজি,ফলমূল এসব পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য চেহারায়ও উজ্জ্বলতা আসবে। আর এই ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমও ইম্প্রুভ করবে। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন,একটানা ৭ দিনের বেশি এই ডায়েট অনুসরণ করবেন না,দরকার হলে ১৫ বা ২০ দিনের গ্যাপ দিয়ে আবার শুরু করতে পারেন।

কি কি ব্যায়াম করবেন 

  • সিট আপ – কোনো একটি সমতল জায়গায় বা মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো ভাঁজ করে দিন। হাত থাকবে হাঁটু বরাবর সোজা, সামনের দিকে। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসুন। পা ভাঁজ অবস্থায় থাকবে। এবার আবার আগের অবস্থায় শুয়ে যান। বসা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। উঠে আবার শুয়ে পড়বেন, আবার উঠে বসুন। এভাবে হবে একবার। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট। আপনাকে এভাবে দুই সেট করতে হবে প্রাথমিক অবস্থায়। পরে সেট বাড়িয়ে তিন সেট করতে পারেন।
  • লেগ রেইস – সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো জোড়া করে সোজা ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। হাত দুটো সোজা পাশে থাকবে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে পা দুটো জোড়া অবস্থায় নিচে নামান। তবে পা দুটো মেঝেতে লেগে যাবে না। আপনার পায়ের সঙ্গে মেঝের কিছুটা দূরত্ব থাকবে। ওই অবস্থায় নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবার পা দুটো ৯০ ডিগ্রি ওপরে তুলে দিন। আবার নিচে নামান। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে লেগে থাকবে। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করুন। এই ব্যায়াম তলপেটের জন্য খুবই উপকারী।
  • এবস টুইস্ট – পা দুটো সামনে সোজা করে দিয়ে বসে যান। এবার পা দুটো ভাঁজ করে পায়ের পাতা মেঝে থেকে একটু উঁচুতে নিয়ে যান। কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ একটু পেছন দিকে নিয়ে যান। এবং হাত দুটো নমস্কারের ভঙ্গিতে রেখে একবার ডানদিকে ঘুরে ডান কোমরের কাছে আবার বা দিকে ঘুরে বা কোমরের কাছে আনুন। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করবেন। এতে আপনার কোমরের পাশের মেদ এবং তল পেটের মেদ কমবে।
  •  প্লাংক – উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে দুই হাত ভাঁজ করে কনুইয়ের ওপর এবং পায়ের টোয়ের ওপর ভর দিয়ে, একটু উঁচু হয়ে শরীরকে একটি সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে হবে। এভাবে ঠিক এই অবস্থায় থাকুন ১০-১৫ সেকেন্ড। প্রথম দিকে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকবেন। পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত করতে পারবেন। এভাবে একবার হলো। এভাবে করবেন দুই থেকে তিনবার। প্রতিবার করার পর একটু বিশ্রাম নেবেন। এতে আপনার পেটের সঙ্গে সঙ্গে পিঠ এবং হাতের মেদও কমবে।
  • ক্রাঞ্চেস – সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো একটু ফাঁকা রেখে ভাঁজ করে দিন। হাত দুটো আপনার মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানের পেছনে রাখুন। এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওপরের দিকে উঠুন। খেয়াল রাখবেন মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার মতো করে নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং ঘাড়ে কোনো চাপ দেবেন না। আপনি মনোযোগ দেবেন আপনার পেটের মাংসপেশিতে। ঘাড় বাঁকা করবেন না। ঘাড় সোজা থাকবে এবং আপনি তাকিয়ে থাকবেন ওপরের দিকে অর্থাৎ সিলিংয়ের দিকে। এবার নিশ্বাস নিতে নিতে নিচের দিকে নামবেন, তবে পুরো মেঝেতে আপনার মাথা লেগে যাবে না; মেঝে থেকে আপনার মাথায় কিছুটা ফাঁক থাকবে। এভাবে আবার ওপরে উঠুন এবং নিচের দিকে ক্রাঞ্চ করে নামুন। খুব দ্রুতও করা যাবে না। মাঝারি একটা তালে করতে হবে। আপনি এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এবং এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। আবার ১২ বার করবেন। এভাবে ১২ বারে হবে এক সেট; এভাবে দুই সেট করতে হবে। আপনার পেটের মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের দিকে খেয়াল রাখুন।এই ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করলে আপনি অবশ্যই খুব ভালো ফলাফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন প্রতিদিন ব্যায়াম করবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় একদিন পরপর করবেন। এতে ভালো ফল পাবেন। প্রথম এক থেকে দুদিন করার পর দেখবেন পেটে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করবেন। এতে আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার ব্যায়াম গুলো কাজে লাগছে।  এভাবে দুই থেকে তিন মাস টানা করলে ভালো ফল পাবেন। এবং দুই থেকে তিন মাস পরে আবার অন্য ব্যায়াম নির্বাচন করতে হবে। কারণ একই ব্যায়াম বেশি দিন ধরে করতে থাকলে আর কাজে দিতে চায় না। সবশেষে মনে রাখতে হবে যে ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। 

শেষ কথা 

মেয়েদের ওজন কামানোর উপায়গুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম, পরিমিত খাওয়া, সবসময় হাসি খুশি থাকা, শরীরের যত্ন নেয়া এবং কিছু ব্যায়াম করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া মেয়েদের সমস্যার শেষ নেই। শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক এমনি বন্ধুদের মধ্যেও সে হাসির পাত্র এবং বৈষম্যের শিকার। আর আমাদের দেশে এটা আরো ভয়াবহরূপে দেখা যায়। বিশেষকরে বিয়ের সময়, এমনকি চাকরির সময়ও মুটিয়ে যাওয়া মেয়েদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। শেষ কথা বলতে একটাই কথা বলবো ওপরের টিপস গুলো, ব্যায়াম গুলো বা ডায়েট এর টিপস গুলো একটু ভালো করে মেনে চলবেন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।

লেখক – শান্তনু পাল