টনসিলের ওষুধ – Tonsil Medicine in Bengali

টনসিল সাধারণত প্রায় সবারই কম বেশি থেকে থাকে। তবে এটা বেশি  বেড়ে গেলে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। জিভের পিছনে গলার দেয়ালের দু’পাশে গোলাকার পিণ্ডের মতো যে জিনিসটি দেখা যায় সেটাই টনসিলটনসিল শব্দটির সাথে আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি পরিচিত। আমাদের প্রত্যেকেই জীবনে কখনো না কখনো অল্প-বেশি টনসিলের সমস্যায় পড়েছি। টনসিল সম্পর্কে আমাদের মনে একটা ধারণা হচ্ছে টনসিল এমন একটা বস্তু যা আমাদের প্রত্যেকের গলায় থাকে, ঠান্ডা জল খেলে বা ঠান্ডা খাবার খেলে কিংবা ঠান্ডা বাতাসে এই সমস্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ভাবনাটা বা ধারণাটা ভুল। টনসিল দেখতে মাংসপিণ্ডের মতো মনে হলেও এটি লসিকা কলা বা লিম্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি। মুখগহ্বরের দু’পাশে দুটি টনসিল পুলিশের মতো পাহারায় থাকে বলে এটিকে মুখগহ্বরের পুলিশ বলা হয়। মুখ, গলা, নাক কিংবা সাইনাস হয়ে রোগজীবাণু অন্ত্রে বা পেটে ঢুকতে বাধা দেয় এই টনসিল। টনসিলের সমস্যার কারণে গলাব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকে। যদিও টনসিলের সমস্যা সব বয়সেই হয়ে থাকে , তারপরও শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলের ইনফেকশন একটু বেশি হয়। টনসিললের এই ইনফেকশনকে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস বা টনসিলের প্রদাহ। টনসিল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। কিন্তু এই টনসিল যখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সেটির চিকিত্সা করাতে হয়, প্রয়োজনবোধে অপারেশন করে ফেলেও দিতে হয়। অপারেশন করে টনসিল ফেলে দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না, কারণ কোনো নষ্ট জিনিস শরীরে না রাখাই ভালো। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য শরীরে আরও অনেক বড় বড় অঙ্গ রয়েছে, তারা এই কাজটি করে দেবে। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে টনসিলের বিশেষ কোনো কাজ থাকে না।

টনসিল ইনফেকশন

 

টনসিল অনেক সময় ইনফেকশন ও হতে পারে। সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণে টনসিলের প্রদাহ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সর্দি-কাশির জন্য দায়ী ভাইরাসগুলোই এই কাজটি করে থাকে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিশেষ করে স্ট্রেপটোকক্কাস গোত্রের ব্যাকটেরিয়া টনসিলের প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। যেকোনো বয়সেই টনসিলের ইনফেকশন বা টনসিলাইটিস হতে পারে। শৈশবে এটা বেশি দেখা যায়, তবে বয়স্কদের বেলায়ও এটি হয়ে থাকে।

টনসিলের লক্ষণ 

  • দিনের বেশি সময় গলায় ব্যাথা থাকে এবং খাবার গিলতে ব্যাথা হয়।
  • গলা ফুলে যায় এবং  মাঝে মাঝে গলা ফুলে পুঁজ হয়েছে মনে হয়।
  • গলার স্বরে পরিবর্তন আসে।
  • স্ট্রেপ্টোকক্কাল টন্সিলাইটিসের ক্ষেত্রে শিশুদের জ্বর, মাথা ব্যাথা, পেটে ব্যাথা হয়।
  • খাবারে অরুচি দেখা দেয়।

টনসিল উপসর্গ 

এ রোগের প্রধান উপসর্গ হলো জিহ্বায় ক্ষত বা ফাটা, গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল স্ফীতি, ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, মাথা ব্যথা, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, খক খক করে গলা পরিষ্কার করা, খাদ্যদ্রব্য গিলতে কষ্ট হওয়া, গলা ও কানে ব্যথা হওয়া, গলা ফুলে যাওয়া, প্রায়ই খক খক কাশি হওয়া।

টনসিলের চিকিৎসা কী ? (Tonsillitis Medicine)

প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যত দিন সুস্থ না হবে। মুখের হাইজিন (মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য) বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে। এটাকে মাউথ ওয়াশ বলা হয়, যা দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত গরম জল দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না। যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে এবং জ্বর থাকে, সে ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধসহ কিছু ওষুধ দেওয়া হয় এবং এটা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হতে পারে। ওষুধ নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।  দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রোপচার। যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে টনসিল কেটে বা অস্ত্রোপচার করে ফেলাই ভালো। বেশি তেল মশলা দেওয়া খাবার খাওয়া চলবে না। 

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা 

টনসিলের জন্য কিছু ঘরোয়া টোটকা আছে যা আমাদের অনেক সময় বেশ কাজে লাগে বা ওই ঘরোয়া টোটকা বা ঘরোয়া ওষুধ যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে কিন্তু অনেকটাই আমরা সুস্থ হতে পারি। চলুন দেখা যাক টনসিলের কিছু ঘরোয়া ওষুধ।

হলুদ দুধ

এক কাপ গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। ছাগলের দুধ টনসিলের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী। ছাগলের দুধে অ্যান্টিব্যায়টিক উপাদান আছে। হলুদ অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী, অ্যান্টি ব্যায়টিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি মশলা। যা গলা ব্যথা দূর করে টনসিলের ইনফেকশন দূর করে থাকে।

লেবুর রস

২০০ মিলিগ্রাম গরম জলে লেবুর রস, এক চা চামচ মধু, আধা চা চামচ লবণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। যতদিন গলা ব্যথা ভাল না হয় তত দিন পর্যন্ত এটি ব্যবহার করুন। টনসিলের সম্যসা দূর করার জন্য এটি বেশ কার্যকরী।

সবুজ চা এবং মধু

এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ সবুজ চা পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার এটি আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে চা পান করুন। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ এই চা পান করুন। সবুজ চায়ে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা সব রকম ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে থাকে। টনসিলের ব্যথা আস্তে আস্তে কমিয়ে থাকে।

আদা চা

এক কাপ জলে এক চা চামচ আদা কুচি দিয়ে ১০ মিনিট জ্বাল দিন। প্রতিদিন এটি পান করুন। আদার অ্যান্টি ব্যকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফালামেন্টরী উপাদান ইনফেকশন ছাড়াতে বাধা প্রদান করে। এর সাথে সাথে ব্যথা কমিয়ে দিয়ে থাকে।

লবণ জল 

গলা ব্যথা শুরু হলে যে কাজটি কম বেশি আমরা সবাই করে থাকি তা হল লবণ জল দিয়ে কুলকুচা করে থাকেন। এটি টনসিলের ব্যথা কমিয়ে ইনফেকশন দূর করে থাকে। Student Health Services at the University of Connecticut এর মতে কুসুম গরম লবণ জল দিয়ে কুলকুচা টনসিল ইনফেকশন দূর করে থাকে। এমনকি গলার ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়।

শেষ কথা 

আমি আগেই বলেছি যে কম বেশি টনসিলের প্রবলেম অনেকেরই থাকে। তবে বেশি ভয়ের কিছু নেই। ওপরের উল্লেখিত চিকিৎসা বা ঘরোয়া টোটকা গুলো এক দুবার করলেই টনসিল ভালো হয়ে যাবে। আর যদি কোনো সময় এরকম হয় যে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেও কোনোমতে কিছুই হচ্ছে না তখন আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতেই হবে। আপনি হোমিওপ্যাথি ওষুধও খেতে পারেন টনসিলের পক্ষে ভালো হবে। তবে হোমিওপ্যাথি ওষুধও খাবারের জন্য কোনো একজন ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তারকে দেখতে হবে। ডাক্তার না দেখিয়ে কারোর কথা শুনে সেই ওষুধ খাওয়া উচিত না সাবধান তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তেল, ঝাল, বেশি মশলা একদমই খাওয়া উচিত না তাতে টনসিলের এফেক্ট পরে। যাদের টনসিলের ধাঁচ আছে তাদের একদমই ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইস ক্রিম, বা যেকোনো ফ্রিজ এর বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার একদম খাবেন না। আর শীত কালে তো প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা সবাই ভালো থাকুন ও একে  ওপর কে ভালো রাখুন। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

লেখক – শান্তনু পাল