কিডনি প্রয়োজন – Kidney Function in Bengali

কিডনি প্রয়োজন বলতে এখানে অনেক কিছুই বলা যায়। বিধাতার সৃষ্টি ও আশীর্বাদে আমরা মানুষ রূপে জন্মানোর পর আমাদের শরীরে অনেক কিছুই অঙ্গ অংশ আছে যা অত্যন্ত জরুরি ও একে ওপরের নির্ভরশীলও। সুন্দর, সুস্থ, সবল ও নীরোগ থাকতে কে না চায়? শরীরের বাইরের পরিচ্ছন্নতা আপনার হাতে, কিন্তু শরীরের ভিতরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব কিডনির (বৃক্ক) এবং লিভারের (যকৃৎ)। যকৃৎ শরীর থেকে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ যৌগ সহকারে পিত্ত মারফত নির্গত করে। কিডনি অনাবশ্যক ক্ষতিকারক পদার্থসমূহ শরীর থেকে দূর করার গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে।কিডনির রোগে পীড়িত রোগীর সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়াবিটিস (মধুমেহ) আর উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়াই কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির মুখ্য কারণ । এই বইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কিডনির বিষয়ে জ্ঞান, তথ্যাদি, নির্দেশাবলি যথাসম্ভব প্রদান করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কিডনির রোগের লক্ষণ, প্রতিকার তথা প্রতিরোধের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করার চেষ্টা করা হয়েছে।এই পুস্তকের বিভিন্ন অধ্যায়ে সহজ সরল ভাষায় কিডনির রোগ থেকে বাঁচার উপায়, কিডনির রোগের ব্যাপারে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করার, ডায়ালিসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন, ক্যাডাভার প্রতিস্থাপন, আহার এবং সাধারণ নির্দেশাবলির বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যাতে বিন অসুবিধায় পাঠক সরলভাবে পুস্তকটি পড়তে পারেন সেজন্য পুস্তকের শেষে মেডিক্যাল শব্দাবলি আর সংক্ষিপ্ত শব্দগুলির অর্থ দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষ এবং কিডনির রোগীদের এই পুস্তক কিডনির রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে।

শরীরের কিডনিযুগলে প্রতি মিনিটে ১২০০ মিলিলিটার রক্ত পরিস্তুত হবার জন্য আসে, এটি হৃদয়দ্বারা শরীরে পৌছানো রক্তের ২০%। এইভাবে আনুমানিক প্রতি ২৪ ঘণ্টাতে ১৭০০ লিটার রক্ত পরিস্তুত হয়। রক্ত পরিস্তুত একক (Functional Unit) নেফ্রন একটি ছাকনির মতো কাজ করে। প্রত্যেক কিডনিতে দশ লক্ষ নেফ্রন থাকে। নেফ্রন প্রধানত দুটি অংশে বিভাজিত, গ্লোমেরুলাস এবং টিউবিউলস। আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে গ্লোমেরুলাস নামক ছাকনি প্রত্যেক মিনিটে ১২৫ মিলিলিটার মূত্র সৃষ্টির মাধ্যমে ২৪ ঘন্টাতে মোট ১৮০ লিটার মূত্র সৃষ্টি করে থাকে। এই ১৮০ লিটার মূত্রের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ, ক্ষার এবং বিষাক্ত পদার্থ থাকে। একই সঙ্গে এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ, যথা গ্লুকোজ এবং অন্য পদার্থও থাকে। গ্লোমেরুলাস দ্বারা সৃষ্ট ১৮০ লিটার মূত্র টিউবিউলসে আসে, যেখানে ৯৯% দ্রব্য পুনঃশোষিত (Reabdorption) হয়।

কিডনির অবস্থান এবং কার্যপ্রণালী

কডনি (বৃক্ক) মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির তুলনা সুপার কম্পিউটারের সঙ্গে করা উচিত কারণ কিডনির গঠন এবং কার্য অতীব জটিল । কডনি শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে মূত্র তৈরি করে। শরীর থেকে মূত্র নিষ্কাশন করার কার্য STAFTFT (Ureter) IAT“FI (Urinary Bladder) SIE মূত্রনালিকা (Urethra) দ্বারা হয়ে থাকে।

  • স্ত্রী ও পুরুষ দুজনের শরীরেই সাধারণত দুটি কিডনি থাকে। কিডনি পেটের ভিতরে, পিঠের দিকে, মেরুদন্ডের দুই পাশে কোমরের অংশে অবস্থিত।
  • কিডনির আকার সিম বীজের মতো হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কিডনি সাধারণত ১০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৫ সেন্টিমিটার চওড়া আর ৪ সেন্টিমিটার মোটা হয়। প্রতিটি কিডনির ওজন ১৫০-১৭০ গ্রামের মধ্যে হয়।
  • কিডনির দ্বারা প্রস্তুত মূত্র মূত্রাশয় পর্যন্ত মূত্রবাহিনী নালী দ্বারা পৌছায় মূত্রবাহিনী নালী সাধারণত ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয় আর বিশেষ প্রকারের রাবার জাতীয় (Eastic) মাংসপেশী দ্বারা তৈরি হয়।
  • মুত্রাশয় পেটের নীচের অংশে সামনের দিকে (তলপেট) অবস্থিত একটি স্নায়বিক থলি, যার মধ্যে মূত্র জমা হয়।
  • যখন মূত্রাশয়ে ৩০০-৪০০ মিলিলিটার (ml) মূত্র জমা হয় তখন মূত্ৰত্যাগের বেগ আসে। মূত্রনালিকা দ্বারা মূত্র শরীর থেকে বাইরে আসে।

কিডনির প্রয়োজন এবং গুরুত্ব

  • প্রত্যেক ব্যক্তির আহারের ধরন ও মাত্রা প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়।
  • আহারের মধ্যে বৈচিত্র্যের কারণে শরীরে জল, অম্ল ও ক্ষারের মাত্রা নিরন্তর পরিবর্তিত হয়।
  • আহারের পাচন প্রাক্রয়ার সময় অনেক অনাবশ্যক পদার্থ শরীরে উৎপন্ন হয়
  • শরীরে জল, অম্ল বা ক্ষারের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট না হলে তা মানুষের পক্ষে হানিকারক বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • কিডনি শরীর থেকে অনাবশ্যক দ্রব্য বা পদার্থ মূত্র হিসাবে শরীর থেকে বের করে রক্তের পরিশোধন করে এবং শরীরে ক্ষার এবং অম্লের ভারসাম্য বজায় রাখে। এইভাবে কিডনি শরীরকে স্বচ্ছ এবং সুস্থ রাখে।

কিডনির প্রধান কার্য

রক্তের পরিশোধন

কিডনি নরমসভাবে সর্বক্ষণ উৎপন্ন অনাবশ্যক পদার্থগুলিকে মূত্রদ্বারা শরীর থেকে দূর করে।

শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা

কিডনি শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল মূত্রদ্বারা শরীর থেকে বাইরে বের করে।

অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা

কিডনি শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরইড,ম্যাগনেশিয়াম,ফসফেটস,বাই কার্বনেট ইত্যাদির মাত্রা যথাযথ রাখার কাজ করে। সোডিয়ামের মাত্রা বাড়া বা কমার সঙ্গে মাথার উপর,আর পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে হৃদয় বা স্নায়ুতন্ত্রের গতিবিধির গভীর প্রভাব পড়তে পারে।

রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ

কিডনি অনেক হরমোন নিঃসরণ করে যেমন অ্যানজিওটেনসিন,অ্যালডোস্টেরন,প্রোস্টাগ্ল্যানডিন। এই হরমোনগুলির সাহায্যে শরীরে জলের মাত্রা,অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে। এই ভারসাম্যের দ্বারা কিডনি শরীরে রক্তচাপ বজায় রাখার কাজ করে।

রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য

রক্তে উপস্থিত লোহিত রক্ত কণিকায় (RBC)সৃষ্টি চডনিতে প্রতি মিনিটে| এরিগ্রোপোয়েটিন হরমোনের সাহায্যে অস্থিমজ্জাতে (Bone Marrow) হয়। এরিথ্রোপোয়েটিন কিডনি দ্বারা প্রস্তুত হয়। কিডনি বিকল(Fail)হলে এই হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যারা ফলে রক্ত ফ্যাকাসে হয়ে যায়, গ্লোমেরুলাই প্রত্যেক যাকে অ্যানিমিয়া (রক্ত কমে যাওয়ার রোগ) বলে।

হাড়ের স্বাস্থ্য

কিডনি সক্রিয় ভিটামিন-ডি, তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। এই ভিটামিন-ডি , শরীরে ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের জরুরি মাত্রা বজায় রেখে হাড় এবং দাঁতের বিকাশ ও মজবুত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে থাকে।

কিডনিতে রক্তের পরিশোধনের পরে মূত্র কীভাবে সৃষ্টি

সারাদিনে কত মুত্র তৈরি হবে তা নির্ভর করে (১) কত পরিমাণ জলপান করি (২) শরীরে বের করা হয়। জলের মাত্রা (৩) শরীরে হরমোন ADH- এর মাত্রার উপর (৪) কিডনির সুস্থতার উপর। কিডনি যদি অসুস্থ হয় এবং GFR (Glomerular Filtration Rate) তখন মূত্র তৈরি করার ক্ষমতাও কমে। কিডনি প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহকে রেখে অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলিকে মূত্রদ্বার শরীরের বাইরে বের করে। এটি একটি অনন্য, অদ্ভূত তথা জটিল প্রক্রিয়া।

শেষ কথা 

“কিডনি” এটাও একটা বিধাতার সৃষ্টি যেটা আমাদের অর্থাৎ প্রত্যেক জীবদেহে থাকে। কিডনির কাজ আমরা অল্প স্বল্প সবাই জানি বা না জানলেও আমাদের এই লেখাটার মাধ্যমে তো জেনেই যাবে যে কিডনি কি ও তার কাজ কি, আর কিডনির প্রয়োজনীয়তা কি কি ? বন্ধুরা আমাদের কিডনি অত্যন্ত জরুরি একটা জিনিস যেটা আমাদের ভালো রাখাটাই হলো সব কাজের মতো একটা কাজ। বেশি করে জল পান করুন আর প্রস্রাব পেলেই প্রস্রাব করুন ভুলেও চেপে রাখবেন না।  আরেকটা কথা বলবো এখানে যে মাঝে মাঝে দেখবেন আমাদের প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায় কিন্তু সেটা কেন ? কেউ কি ভেবেছেন কোনো আমাদের প্রস্রাব টা মাঝে মাঝে হলুদ হয়ে যায় ? সেটার কারণ হলো কম জল খেলে। আর কম জল খেলে আমাদের শরীর কোশে যায় যার ফলে আমাদের প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়।  তাই সবাইকে বার বার বলছি পরিমান মতন জল পান করুন আর প্রস্রাব এর প্রেসার আসলেই দেরি না করে প্রস্রাব করুন। তাতে আপনার কিডনি অনেক ভালো থাকবে আর আপনি সুস্থ থাকবেন। আর এরকম ভাবে চললেই কোনো রকম কিডনির সমস্যা দেখায় যাবে না। ভালো থাকবেন আর অনেক সুস্থ থাকবেন।

লেখক – শান্তনু পাল