Indian Bangla Comedy Movie – বাংলা হাসির সিনেমা

আমরা অনেকেই জানি বা অনেকেই  জানিনা যে অভিনয় এর মধ্যে সব চাইতে কঠিন চরিত্র হলো কমেডি।স্ট্যান্ড আপ কমেডি এক ধরণের প্রহসন,সেটা আবার কোনো ফিল্ম এর পর্যায় পরে না, সেটি নানান জাগায় মঞ্চস্থ হয়ে থাকে বা আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখে থাকি । এক্ষেত্রে একজন কমেডিয়ান উপস্থিত জনতার সামনে কোন বিষয়কে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় সরাসরি উপস্থাপন করেন। স্ট্যান্ড আপ কমেডি উন্মুক্ত মঞ্চ, থিয়েটার, জনসমাগম, ভোজসভা, ক্লাবঘরের ছোট পরিসরে এমনকি কোন খোলা জায়গায় প্রদর্শিত হতে পারে। ডিভিডি বা টেলিভিশনের মাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমেডিয়ান নিজের ভিডিও ব্লগও খুলেছেন। বিনোদনের এই মাধ্যমটি কমিক, স্ট্যান্ড আপ কমিক বা শুধু স্ট্যান্ড আপ নামেও পরিচিত। স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে একজন কমেডিয়ান খুব দ্রুত লয়ে নানান মজাদার গল্প, অভিজ্ঞতা, ছোটখাটো কৌতুক একবাক্যের চুটকি ইত্যাদির মাধ্যমে দর্শকদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেন। কমেডিয়ানের নিজস্ব বাচনভঙ্গী, অঙ্গভঙ্গী, মুখাবয়ব, স্বরের ওঠা নামা এবং সর্বোপরি লোক হাসানোর নিজস্ব দক্ষতার জনসাধারণের বিনোদনের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। অনেকে বৈচিত্র্য আনার জন্য তাদের প্রদর্শনীতে বিভিন্ন সরঞ্জাম, জাদু, বাদ্যযন্ত্র, সুর ইত্যাদি ব্যবহার করেন।আমাদের কমেডি সিনেমার মধ্যে রাগ, প্রেম বা কোনো রোমান্টিক, দুঃখ বা যেকোনো জিনিস নিয়েই কমেডি হতে পারে, আমাদের ভারতীয় বাংলা কমেডি সিনেমার তার কোনো জুড়ি নেই। কমেডি সিনেমার মুখ চরিত্র যাদের কথা না বল্লেই নয় বা কমেডি সিনেমা যাদের ছাড়া ভাবা যায় না বা কমেডি সিনেমা কথাটা মাথায় আসলেই যাদের কথা সব সময় মনে পরে সেই কিংবদন্তি শিল্পীরা হলো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, কেষ্ট মুখার্জী, বিকাশ রায়, তুলসী চক্রবর্তী, অনুপ কুমার, জহর রায়,সন্তোষ দত্ত, রঞ্জিত মল্লিক, অপর্ণা সেন,মৌসুমী চ্যাটার্জী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি প্রমুখ রা। আর এখনকার বাংলা কমেডি সিনেমার মধ্যে যারা আগের মতো কমেডির চরিত্র না হলেও বেশ খানিকটা ধরে রাখতে পেরেছেন তারা  হলেন, খরাজ মুখার্জী, শাশ্বত চ্যাটার্জী, মৌসুমী চ্যাটার্জী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রণজিৎ মল্লিক,পড়ান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, মীর ইত্যাদি প্রমুখ রা।  আমাদের ভারতীয় বাংলা কমেডি সিনেমা যেসব সিনেমা গুলো আজ ও অমর। আমরা যত বার দেখি ততবারই আমাদের ভালো লাগে। এইসকল ছবি গুলো কিন্তু আপনাকে জোর করে হাসতে বাদ্ধ্য করে না হাসিটা ভিতর থেকে আপনা আপ চলে আসে। তাহলে চলুন তার মধ্যে থেকে কিছু বেঁচে নেওয়া ছবি গুলোর সম্মন্ধে আরেকবার জেনে নি।

1.আসিতে আসিওনা

১৯৭৮ সালে শ্রী জয়দ্রাথের পরিচালনায় মুক্তি পায় আসিতে অসিওনা। যেটি তৎকালীন বাংলা চলচিত্রের একটি অন্যতম হাস্যকৌতুকে ভরা  ছায়াছবি। যেটি হাসির রসের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন অথবা সমসাময়িক একটি প্রগাঢ় সম্মসাকে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা সকলেই ভয় পাই বার্ধক্যকে, আর এই বার্ধক্যই মানুষের জীবনে এগিয়ে এলে সেটিকেও কিভাবে আপন করে নিতে হয় সেটা এই ছবির মূল গল্প।  যৌবন এবং বার্ধক্য একে ওপরের পরিপূরক। আর এটি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তার অভিনয়ের মুন্সিয়ানার মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টি করে তৎকালীন এবং এখনকার সমাজের কাছে দারুন হাসির ছায়াছবি উপহার দিয়েছিলেন আমাদেরকে। ছবিটির সম্মন্ধে এখানে লিখে বলার মতো শব্দ আমাদের হয়তো হবে না।

2. জোমালয়ে জীবন্ত মানুষ

১৯৫৮ সালে  মুক্তি পায়  প্রফুল্ল চক্রবর্তীর পরিচালিত জোমালয়ে জীবন্ত মানুষ। যেটি সমগ্র বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসের একটি মাইল স্টোন। হাসির বাংলা সিনেমার মধ্যে দিয়ে কিভাবে সামাজিক একটি বিষয় বস্তুকে তুলে ধরা যায় তা এক নিদারুন উদাহরণ। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর রায় অভিনীত এই ছায়াছবিটি ভারতীয় চলচিত্রের হাসির ছবির ইতিহাসের সারা জীবন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে সারা জীবন জ্বলবে।

3.ভানু পেলো লটারি

এম.জি.এস.পিকচার্স ইউনিট নিবেদিত ভানু পেলো লটারি  ছবিটি মুক্তি পায়  ১৯৫৮ সালে। এই ছবিটিতে সমকালীন সামাজিক একটি অতি পরিচিত ঘটনা নিয়ে করা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে লটারির সু গুন্ ও কেউ গুন্। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর রায়দুজনের অভিনয়ের দক্ষতার মাধ্যমে সমাজের খুবি পরিচিত একটি অবক্ষয়ের চিত্রকে হাস্যরসের মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরেছে।

5. গল্প হলেও সত্যি

তপন সিনহা পরিচালিত  ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় রবি ঘোষ অভিনীত গল্প হলেও সত্যি। এই ছবিটির তদানীন্তন ভারতীয় চলচিত্রের একটি অন্যতম ছায়াছবি। যেটি এই ছবির মাধ্যমে ষাট সত্তরের দশকের একান্ন বর্তী পরিবার কিভাবে একসাথে  ভালো থাকতেপারে এবং একে ওপরের অপরিহার্য হতে পারে তাই হাস্সো রসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

6. এক যে ছিল দেশ

বাংলা হাসির সিনেমা

তপন সিনহার পরিচালিত  ১৯৭৭ সালে মুক্তি পায় এক যে ছিল দেশ। যেটি অন্যতম বাংলা চলচিত্রের মনে রাখার মতো হাসির ছবি। এই ছবিটির বিষয় বস্তু সমাজের ওপর তলার ভদ্র মানুষের মুখোশের আড়ালে অন্য আরেকটি অচেনা মুখের বহিঃপ্রকাশ।

7. ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্স

পূর্ণেন্দু রায় চৌধুরী পরিচালিত ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্স। এই ছিবিতে ভানু গোয়েন্দার জুটির একটি অন্যতম হাস্যরস সৃষ্টি করেছিল। এই ছবির মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমাতে প্রথম কমেডি জুটি আমরা পেয়ে থাকি।

8. লুকোচুরি

কমল মজুমদার পরিচালনায় ১৯৫৮ সালে মুক্তি পায় লুকোচুরি। কিশোরে কুমার,মালাসিনা, অনিতা গুহা,এবং অনুপ কুমার অভিনীত এই ছবিটিতে তদানীন্তন সামাজিক অবক্ষয়ের মাঝখানে ভালোবাসাকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তাই হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে আমাদের সামনে পরিবেশনা করা হয়েছিল।

9. মৌচাক

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত  ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় মহানায়ক উত্তম কুমার এর মৌচাক। এটি একটি মিষ্টি প্রেমের হাসির ছবি।

10. ভূতের ভবিষ্যত

অনিক দত্ত পরিচালনায়  ২০১২ সালে মুক্তি পে ভূতের ভবিষ্যৎ। সমসাময়িক বাংলা সিনেমার ইতিহাসের এটি একটি কালজয়ী হাসির ছবি, যার মধ্যে দিয়ে ভূত ও ভবিষ্যতের মাধ্যমে  সামাজিক অবক্ষয়ের নিদারুন একটি পরিচিত ঘটনাকে হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।

11. চার মূর্তি 

১৯৭৮ উমানাথ ভট্টাচার্য

ঘচাংফু খাবো তোকে। টেনিদা মূলত উত্তর কলকাতা পটলডাঙায় বসবাসরত একটি স্থানীয় চরিত্র। টেনিদার প্রকৃত নাম ভজহরি মুখার্জি। পটলডাঙার আশেপাশে ​​বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের একটি দলের নেতা টেনিদা পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। সাত বারের চেষ্টাতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তিনি। টেনিদা সম্বন্ধে গল্পলেখক প্যালারাম লিখেছেন, “টেনিদাকে নইলে আমাদের যে একটি দিনও চলে না। যেমন চওড়া বুক – তেমনি চওড়া মন।” “পাড়ার কারও বিপদ-আপদ হলে টেনিদাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের আগে। লোকের উপকারে এক মুহুর্তের জন্য তার ক্লান্তি নেই – মুখে হাসি তার লেগেই আছে। ফুটবলের মাঠে সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন। আর গল্পের রাজা। এমন করে গল্প বলতে কেউ জানে না।” আর টেনিদার খাবার দাবার কথা না বললেই নয়। আমরা মোটামুটি সবাই দেখেছি ছবিটিতে তার খাবারের জৌলস, আর যদি না জেনে থাকেন দেখতে পারেন ছবিটি, এইটুকু বলতে পারি ছবিটি একবার দেখার পর বার বার দেখার ইচ্ছেটাই জন্মে যাবে।

12. বসন্ত বিলাপ

দীনেন গুপ্ত পরিচালিত  ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় বসন্ত বিলাপ। এটি একটি মিষ্টি প্রেমের হাজার দুষটুষ্মিতে ভরা মিষ্টি প্রেমের গল্প।

13. কেলোর কিত্তি 

রাজা চন্দ্র পরিচালনায় ২০১৬ সালে মুক্তি পায় কেলোর কিত্তি। যেটি ব্যাবসায়িক ভাবে সাফল্য মন্ডিত একটি হাসির ছবি।

14. হ্যাং ওভার 

প্রভাত রায় পরিচালিত ২০১০ সালে মুক্তি পায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত বাংলা ছবি হ্যাং ওভার। এই ছবির মাধ্যমে সমসাময়িক বাংলা হাসির চিবি যে এখনো মোর যায়নি তারই উদাহরণ বহন করে।

15. সাড়ে চুয়াত্তর 

নির্মল দে পরিচালনায় ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় উত্তম সুচিত্রার অভিনীত একটি উন্নত হাসির ছবি সাড়ে চুয়াত্তর। এই ছবিতে উত্তম সুচিত্রার জুটিকেও চাপিয়ে গেছে তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, এবং মলিনা দেবীর মতো অভিনয়ের মুন্সিয়ানার কাছে। এই ছবিটি দেশ  ভাগের কষ্টকে হাসির মোড়কে মুড়ে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল।

শেষ কথা  

ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণ যুগের সৈনিকদেড় প্রণাম জানাই আমার এই লেখার মাধ্যমে। যারা না থাকলে ভারতীয় সিনেমার একশো বছর গৌরবান্নিত মনে হয় হতো না। আমি গর্বিত আমি বাঙালি আর যার জন্যে আমার মাতৃ ভাষার মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগ উপলব্ধি করতে পারছি বাংলা ভাষার সিনেমার মধ্যে দিয়ে। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। আর পারলে এক একবার করে হলেও ছবিগুলো দেখতে ভুলবেন না।

লেখক – শান্তনু পাল