থানকুনি পাতা – Thankuni Pata

প্রথমেই জানবো  আমরা থানকুনি পাতা কি ? কি কাজে লাগে ? গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে।থানকুনি পাতা হলো গোল ছোট্ট সবুজ রঙের দেখতে একটি পাতা যা মাঠে ঘাটে পুকুর এর ধারে  আসে পাশে বা শ্যাওলার আসে পাশে হয়ে থাকে। এটির বাংলা নাম তো থানকুনিমপাতা কিন্তু অঞ্চলভেদে এটি টেয়া,মানকি,তিতুরা,থানকুনি,আদামনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি,ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে পরিচিত।থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। যাকে  ইংরেজিতে Centella asiatica নামে পরিচিত।  এটি এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এটি সাধারণত পাওয়া যায়  বাংলাদেশ, ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। ভেষজ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিকসহ অনেক দেশের চিকিৎসাবিদ্যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম আগে ছিল Hydrocotyle asiatica L. এবং Trisanthus cochinchinensis (Lour.)

আপনার চারপাশে এমন কিছু ভেষজ আছে যেগুলো শুধু আপনার ব্যয়ই কমাবে তাই নয়, সাথে সাথে রোগ থেকেও পরিত্রাণ দিবে আপনাকে। থানকুনি এমনি একটি উপকারী ভেষজ। চিকিৎসার অঙ্গণে থানকুনি পাতার অবদান অপরিসীম।  আয়ূর্বেদ চর্চায় থানকুনি ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই ৷ থানকুনি পাতার রস দিয়ে বহুকাল থেকেই তৈরি হয় বহু ওষুধ ৷ কিন্তু জানেন কি, থানকুনি পাতা আপনিও ব্যবহার করে থাকতে পারেন সুস্থ ৷  এরকমই এক প্রকৃতির উপাদান থানকুনি পাতা ৷ পুকুরপাড় বা জলাশয়ের আশপাশে দেখা যায় এই পাতা ৷ অনেকেই এই পাতা বেঁটে খান, রান্নায় ব্যবহার করেন ৷ আবার অনেকে জঙ্গল ভেবে একপাশে সরিয়ে ফেলেন এই থানকুনি পাতাকে ৷  ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ওষুধি সব গুণ।ভাবছেন এ আবার কেমন খবর ৷ পাতা খেলে যৌবন থাকবে অটুট ! অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমাদের প্রকৃতির ঢেলে দিয়েছে এমন অনেক কিছু যা দিয়ে সুস্থ থাকা খুবই সহজ হয়ে যায় ৷ আর যা পাওয়া একেবারেই কঠিন নয় ৷ কিন্তু থানকুনি পাতা তার মধ্যে এক অন্যতম একটি পাতা। থানকুনি পাতার ইংরেজি নাম হোলো Indian Pennywort .যৌবন ধরে রাখতেও থানকুনির পাতা একটি অন্যতম জিনিস।

বংশবিস্তার 

বসন্তকালে থানকুনি পাতার ফুল আসে এবং গীষ্ম কালে ফল পাকে। বীজের মাধমেও অঙ্গজ জনন উভয় ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট বা node থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড় সোহো লতা এনে আর্দ জমিতে রোপন করলেই থানকুনির জন্ম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এটি আর্দ মাটি পছন্দ করলেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। যে কোনো ছোট বা বড়ো নার্সারি তে খোঁজ নিতে পারেন ছাড়া গাছের জন্য তবে শহরাঞ্চলে এটি পাওয়া একটু কঠিন তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বদা পাওয়া যায়।

থানকুনি পাতার গুনাগুন 

  • মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষতে উপকারী।
  • সর্দির জন্য খুউব উপকারী
  • পেটের  অসুখে বা আমাশয় হলে থানকুনির পাতা কাঁচা বা থানকুনি পাতার রস খুব উপকারী।
  • সাময়িক ভাবে কাশি কমাতেও সাহায্য করে থাকে এই পাতা।
  • এই পাতা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • থানকুনি পাতার রস খেলে জ্বর ও আমাশয়ে উপকার হয়।
  • থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চুলপড়া কমবে
  • সকালে থানকুনির রস খেলে লিভারের সমস্যা ভাল হয়।
  • ঠাণ্ডা লাগলে থানকুনির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। 
  • পেটের রোগে যারা নিয়মিত ভোগেন, তারা রোজ থানকুনি পাতা খান ৷ সকাল বেলা খালি পেটে কয়েকটা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে ভাল ফল পাবেন ৷
  • কেবল পেটের ব্যথা ছাড়াও আলসার এবং বিভিন্ন চর্মরোগ থানকুনি দ্বারা নিরাময় করা সম্ভাব। থানকুনির ব্যবহার আরও বিভিন্নভাবে করা যায়। যেমন- স্কিনের উজ্জলতা এবং নতুন চুল গজাতে এর ব্যবহার বলে শেষ করা যায় না।
  •  ত্বকের জেল্লা বাড়াতে থানকুনি পাতার রস খুবই ফলদায়ক ৷ থানকুনি পাতা চামড়া মসৃণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
  • চুল পড়া আটকায় থানকুনি পাতা ৷ এমনকী, থানকুনি পাতার রস রোজ মাথায় লাগালে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে ৷
  • থানকুনি স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আধা কেজি দুধে ১ পোয়া মিশ্রি ও আধা পোয়া থানকুনির পাতার রস একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ১ সপ্তাহ খেলে পেটের গ্যাস্টিক ভাল হয়।
  •  দাঁতের ব্যথা কমাতে থানকুনি পাতা ভাল ফলদায়ক ৷
  • যারা অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তাদের জন্য মহৌষধি হতে পারে থানকুনি পাতা। ডায়াবেটিস রোগীরা দিনে দু’বার থানকুনির রস খেলে কার্যকরী ফল পাবেন।
  • বেগুন/পেপের সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে শুঁকতা রান্না করে প্রতিদিন ১ মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • এক গ্লাস দুধে ৫ থেকে ৬ ফোটা থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে লাবণ্য বাড়ে ৷
  • কোনো পুরাতন ক্ষত নিরাময় না করতে পারলে সেদ্ধ থানকুনি পাতার প্রলেপ দিলে অনেক বেশি উপকার হয়।
  • থানকুনি পাতার রস  স্নায়ুতন্ত্রকে অনেকভাবে সক্রিয় করে।
  • বাচাদের যদি ছোট থেকেই এই থানকুনি পাতা পরিস্কার করে ধুয়ে রস খাওয়ালে তাদের বুদ্ধির বিকাশ হবে ও স্মৃতি শক্তি অনেক খানি বেড়ে যাবে।
  • ত্বকের জেল্লা বাড়াতেও আমরা থানকুনি পাতার রস সেবন করতে পারি।
  • মৃত কোষকে জীবিত করার জন্যও আমরা থানকুনি পাতার রস সেবন করতে পারি।

শেষ কথা 

শেষ কথা বলতে আপনার যদি কোনো সমস্যা নাও থাকে তাহলেও আপনি থানকুনি পাতা খেতে পারেন। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে রুজ যদি বেশি মুখে বা খালি পেতে ৪ তে করে পাতা ভালো করে চিবিয়ে খান তাহলে আপনি আপনি এমনিই বুঝতে পারবেন এর উপকারিতা। থানকুনি পাতা যে শুধু শারীরিক কোনো অসুস্থতার জন্য খাওয়া হয় তা কিন্তু একদমই না। থানকুনি পাতা যদি বাড়িতে আনাচে কানাচে হয়ে থাকে দোয়া করে থানকুনি পাতার গাছ গুলিকে তুলে ফেলে দেবেন না। বলা যায় না আজ কোনো কাজ এ না লাগলেও কাল আপনার অবসসই কাজ এ লাগতে পারে। বা অন্য কারোরও কাজ এ লাগতে পারে। ওপরের থানকুনি পাতার গুনাগুন নিয়ে বলা আছে আপনি চাইলে লেখাটি ভালো করে পরে আপনি কারোর সাহায্য ও করতে পারেন। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আর হ্যা লেখাটি অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।