জিমের টুকিটাকি – Gym Tips Bangla

ব্যায়াম  হলো প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা একটি সুন্দর শারীরিক গঠন তৈরী করার ও সুস্থ সবল থাকার কার্য। আমরা ব্যায়াম করে থাকি আমাদের শরিরকে সুস্থ রাখার জন্য। তবে ব্যায়ামের ব্যাপারে অনেকের অনেক রকম মতামত আছে বা থাকে। তবে আপনি যাই করুন না কেনো আপনার প্রতিদিনের রুটিনের কথা মাথায় রেখে ব্যায়াম করার সময় নির্বাচন করুন। একেকদিন একেক সময় ব্যায়াম না না করে যেকোনো একটি নিদৃষ্ট সময়ে ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আর ব্যায়ামের সময়ের উপর নির্ভর করেই কি ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য উপযুক্ত তা নির্বাচন করুন। ব্যায়ামের সময় ও ধরনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হবে ফিটনেট প্ল্যানিং ও খাবার তালিকা। কারণ ব্যায়ামের সময়ের সাথে খাওয়ার সঠিক ভারসাম্য না থাকলে সুফল পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী দিনের তিনটা ভাগ হতে একটা নির্দৃষ্ট সময়কে ব্যায়ামের জন্য বেছে নিতে পারেন। আসুন দেখে নেই কোন সময় কি ধরনের ব্যায়ামের জন্য উপযোগী। শারীরিক ব্যায়াম(ইংরেজি:  Physical exercise, exercise অথবা workout) হল যেকোন শারীরিক কার্যক্রম যা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম করা হয়, যেমন- মাংসপেশী ও সংবহন তন্ত্র সবল করা, ক্রীড়া-নৈপুন্য বৃদ্ধি করা, শারীরিক ওজন হ্রাস করা বা রক্ষা করা কিংবা শুধু উপভোগ করা। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে, ইতিবাচক আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায়, ব্যক্তির যৌন আবেদন বৃদ্ধি, শরীরের সঠিক অনুপাত অর্জনে শারীরিক ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুস্বাস্থ্যের স্থূলতা একটি সমকালীন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ব্যায়াম শরীরের স্থূলতা রোধে কাজ করে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা শারীরিক ব্যায়ামকে “অলৌকিক” এবং “আশ্চর্যজনক” ঔষধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষার্থে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রমাণিত।

কখন ব্যায়াম করবেন, কখন করবেন না জেনে নিন:-

সাধারণত আমরা দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার মাধ্যমে সঠিক ভাবে ব্যায়াম করতেই পারিনা বা করা হয়ে ওঠে না। সাধারণত আমরা সকালে ভোর বেলা হলে ভালো হয় আর তা না হলে বিকেলে বা সন্ধে বেলায় আমরা ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু বর্তমান জীবনে আমাদের কাজ কর্মের মাধ্যমে ব্যস্ত থাকায় আমরা আমাদের সুবিধানুযায়ী আমরা ব্যায়াম করে থাকি। কথায় বলে ‘শরীর ফিট তো আপনি হিট’। আর তাই শরীরটাকে ফিট রাখতে দরকার শরীরচর্চার। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। তবে কখন করতে হবে আর কখন করা যাবে না, অনেকেই জানেন না। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা জরুরি। তবে ব্যায়ামের সময় নিয়ে অনেকেই পড়েন বিপত্তিতে। কেউ হয়তো ইচ্ছা থাকলেও সময় করে উঠতে পারেন না। আবার যখন সময় পান তখন এক্সারসাইজ করা ঠিক হবে কি না বুঝে উঠতে পারেন না। শুধু নিয়মিত এক্সারসাইজ করলেই যে শরীর সুস্থ থাকবে, সেটাও না। কোন সময়ে এক্সারসাইজ করা ভালো, আর কখন ব্যায়াম করা ঠিক নয় সে বিষয়ে জেনে নিন।

  • সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ঘুমের পর সকালে এক্সারসাইজ সারা দিন ফুরফুরে রাখতে পারে।
  •  এ ছাড়া সন্ধ্যার আগে বিকেলটাও এক্সারসাইজ করার জন্য উপযুক্ত সময়। যেহেতু এক্সারসাইজ করলে শরীরের ঘাম ঝরে, তাই নরম আবহাওয়াতেই এক্সারসাইজ করা ভালো।
  • দুপুরবেলা বা বেশি গরমে এক্সারসাইজ করলে সহজেই ক্লান্ত মনে হতে পারে। তাই এ সময়ে এক্সারসাইজ না করাই ভালো।
  • অনেকে ব্যস্ততার জন্য সারা দিন সময় করে উঠতে পারেন না, তাঁরা রাতে ব্যায়াম করেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।
  • যাঁরা সারা দিন বাসায় থাকেন, তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় এক্সারসাইজ করতে পারেন।
  • ব্যায়ামের সময় অনেক বেশি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। হালকা খাবার যেমন, একটা কলা বা বিস্কুট খেয়ে এক্সারসাইজ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • সকালে ব্যায়াম করতে গিয়ে অনেকে এক্সারসাইজ শেষে ভরপেট খেয়ে বাসায় ফেরেন। এতে ব্যায়ামের কোনো উপকারিতা থাকে না।
  • যাঁরা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন, তাঁরা বেশি দিনের অবসর কাটালে বা কোথাও ঘুরতে গেলে খাবারের দিকে নজর রাখা উচিত। ঘুরতে গিয়ে বেশি দিন থাকার পরিকল্পনা করলে সুযোগ থাকলে টুকটাক এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
  • ব্যায়াম করার আগে বা পরপরই বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া ঠিক নয়। ব্যায়ামের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর পানি খেতে পারেন।
  • খাবারের মেন্যু থেকে যতটা সম্ভব মিষ্টি, কোমলপানীয়, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাবার বাদ রাখাই ভালো। কারণ, এসব খাবার খেলে আপনার এক্সারসাইজ করা বৃথা হয়ে পড়বে।
  • নিজে অসুস্থ থাকলে এক্সারসাইজ করার দরকার নেই। বিশেষ করে গর্ভকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো এক্সারসাইজ করা উচিত নয়।
  •  যেকোনো ধরনের ব্যায়াম বা ডায়েট পরিকল্পনার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত।

মানব শরীরের উপর প্রভাবের ভিত্তিতে শারীরিক ব্যায়ামকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় :-

  • অ্যারোবিক ব্যায়াম: যেসব ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যক্রম শরীরের বড় মাংশপেশীগুলো ব্যভার করে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে সেগুলো অ্যারোবিক ব্যায়াম। এসব ব্যায়ামের লক্ষ্য শরীরের হৃদপিন্ডসহ সামগ্রিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। এধরণের ব্যায়ামের উদাহরণ হল সাইক্লিং, সাতার, হাইকিং, টেনিস, ফুটবল ইত্যাদি খেলা।
  • অ্যানেরোবিক ব্যায়াম: এসমস্ত ব্যায়াম শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মাংসপেশী ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া শরীরের ভারসাম্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এধরণের ব্যায়ামের উদাহরণ হল পুশআপ, বাইসেপ কার্লস, পুলআপ ইত্যাদি। ভারোত্তলন, ফাংশনাল প্রশিক্ষণ ইত্যাদি এ জাতীয় ব্যায়ামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
  • ফ্লেক্সিবিলিটি ব্যায়াম: এসব ব্যায়াম শরীরের মাংশপেশীর প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এধরণের ব্যায়ামের লক্ষ্য শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা যাতে ইনজুরি বা আঘাতের প্রবণতা হ্রাস পায়।

 

শেষ কথা 

সত্যি কথা বলতে জীবনে চলার পথে ব্যায়ামটাকেও আমাদের নিজস্ব সঙ্গী হিসেবে নেওয়া দরকার। অনেকের মতে  ব্যায়াম করাটা এখনকার আবার একটু স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু অনেকে মনে করেন যে ব্যায়াম  হলো শুধুমাত্র সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য  বা দেখতে ভালো লাগবে তার জন্য। কিন্তু আমি বলি তার সাথে সাথে আপনি শারীরিক দিয়ে অনেকটাই সুস্থ ও সবল থাকবেন এই ব্যায়াম এর মাধ্যমে। কিন্তু একটা কথা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে যে ব্যায়ামাগার বা জিম এ গিয়ে ভারী ভারী লোহা তুললেই যে তাড়াতাড়ি আপনার শারীরিক গঠন পাল্টে যাবে টয়া কিন্তু একদম নয়। আপনি যদি ব্যায়ামাগার বা জিম এ গিয়ে ব্যায়াম করেন তাহলে ওখানে যে প্রশিক্ষক আছেন তার সাহায্য অবসসই নেওয়া উচিত। অন্য কারোর ব্যায়াম থেকে একদমই করা উচিত না। যে কোনো একটা ছোট্ট ভুলের ফলে আপনার কঠিন চোট লাগতে পারে, যার ফলে এমনটাও হতে পারে যে ভপবিষ্যতে আপনি আর হয়তো ব্যায়াম এ যেতে পারবেন না। না না ভয় পাবার কিছু নেই আপনি শুধু আপনার প্রশিক্ষকের কাছ থেকেই একবার দুবার ভালো করে দ্যাখে নিন আপনার ব্যায়াম এর ধরণ গুলো, না বুঝতে পারলে বার বার জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত। ব্যায়াম এ যাবার আগে কাঁচা ছোলা খান কলা খান। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। পোস্ট টিকে শেয়ার করে ব্যামনিষ্ঠা কারীদের জানিয়ে দিন। ভালো থাকবেন। ধন্য বাদ।

লেখক – শান্তনু পাল