অমর্ত্য সেন রচনা ও অনুচ্ছেদ – Amartya Sen Essay & Paragraph

ভূমিকা 

আমাদের  দেশ ভারতবর্ষ আয়তন এবং জনসংখ্যাতে বিরাট । এই দেশের বৈচিত্র্য আমদের সকলেরই জানা। অর্থনীতিতেও এই বৈচিত্র্য স্পষ্টভাবে ধরা দেয়। এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদের জন্মভূমির নাম ভারতবর্ষ।  সেই মানুষটির নাম অমর্ত্য সেন। বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া মানুষটি দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা বুঝেছিলেন কাছ থেকে। তাঁর লেখাপড়া শিক্ষকতা জীবন আমাদের কাছে জীবন সাধনার এক অনন্য নজির। তাঁর জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছেন ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্বকে। তিনি আমাদের কাছে চিরপ্রণম্য। তিনি এই দেশের একজন গর্ব।

জন্ম ও ছেলেবেলা 

১৯৩৩ সালের ৩রা নভেম্বর তাঁর পিতা রসায়নের খ্যাতনামা অধ্যাপক শ্রী আশুতোষ সেন এবং মাতা  অমিতা সেন। অমর্ত্য সেনের জন্ম তাঁর মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের বাড়িতে। তাঁর পরিবারে প্রায় সকলেই ছিলেন শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। যার কারণে তাঁর মধ্যে মেধার বিকাশ দেখা যায় ছোট বয়সেই। পারিবারিক পরিবেশে এবং শান্তিনিকেতনের পরিবেশে তাঁর বড় হয়ে ওঠা।

শিক্ষাজীবন 

আলোকময় শিক্ষাজীবনের শুরু হয় ১৯৪১ সালে  সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে । কিন্তু দেশভাগের পর পরিবার ভারতে চলে এলে তিনি ভর্তি হন বিশ্বভারতীর স্কুলে। সেখান থেকে প্রাথমিক জীবনের শিক্ষার পাঠ শেষ করে।  উচ্চশিক্ষার জন্যে কলকাতার প্রেসীডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে সেখান থেকে তিনি বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বছরেই তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে তিনি প্রথম শ্রেনীতে সাম্মানিক বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীশের সান্নিধ্যে আসেন। ট্রিনিটি কলেজে পি.এইচ.ডি ডিগ্রির জনয়ে পড়াকালীন অবস্থায় তিনি ত্রিগুণা সেনের অনুরোধে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন। তিনি ভারতের ইতিহাসে সর্বকণিষ্ঠ বিভাগীয় প্রধান।১৯৫৯ সালে তিনি আবার ট্রিনিটি কলেজে ফিরে যান। সেখানে ফেলোশিপ পেয়ে আগামী চার বছর নিজের ইচ্ছামতো কাজের সুযোগ পান। তখন তিনি দর্শনশাস্ত্রে  নিজের পঠনপাঠন চালিয়ে যান। সেসময় থেকে তিনি অর্থনীতির নতুন পথের উপর আগ্রহ দেখান।

বৈবাহিক জীবন 

তিনি বিখ্যাত লেখিকা  নবনীতা দেবসেনকে বিবাহ করেন, তাঁদের দুই কন্যা অন্তরা এবং নন্দনা ১৯৭১ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।১৯৭৮ সালে তিনি বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ  ইভা কলোরনিকে বিবাহ করেন। তাঁদের দুই সন্তান পুত্র কবীর এবং কন্যা ইন্দ্রানী। ১৯৮৫ সালে ইভার মৃত্যু হয়। ১৯৯১ সালে তিনি ইতিহাসের অধ্যাপিকা  এমা জরজিনা রতসচাইল্ডকে বিবাহ করেন।

শিক্ষকতা জীবন 

যে মানুষটির পরিবারের অধিকাংশ মানুষ ছিলেন অধ্যাপণার সাথে যুক্ত সেই মানুষটি নিজেও যে বিরাট মাপের শিক্ষক হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশ্বের খুব কম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে অমর্ত্য সেনের পদধূলি পড়েনি। ত্রিগুনা সেনের সহায়তায় তিনি যুক্ত হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ট্রিনিটি কলেজে গবেষণায় যুক্ত থাকার সময় তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনার সুযোগ পান। সেখানে তিনি দুনিয়ার সেরা অর্থনীতিবিদদের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁরা হলেন পল স্যামুয়েলসন , নরবারট ওয়েইনার , রবার্ট সোলো প্রমূখ। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি বার্কলে ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী স্কুল অফ ইকোনমিকসে অধ্যাপকের পদ আলোকিত করেন। এই সময়  ভারতবর্ষের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তিনি ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল ।ভারতবর্ষের তামাম অর্থনীতিবিদ যেমন কে.এন.রাজ, জগদীশ ভাগবত তাঁর কাজের সঙ্গী ছিলেন। সমস্ত ছবিটা পাল্টাতে থাকে, যখন ১৯৭৭ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকসে অধ্যাপক রূপে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে পড়িয়েছিলেন। এরপর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন, এবং তিনি সেখানকার প্রথম অর্থনীতির বিষয়ের অধ্যাপক।তিনি ১৯৮৭ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি ট্রিনিটি কলেজের সাথে যুক্ত হন। ২০০৪ সালে তিনি বার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হন। নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তিনি যুক্ত হন এবং ২০১২ সালে তাঁর আচার্যপদে নি্যুক্ত হন।  

সদস্যপদ এবং সম্মাননা 

ইকোনমেট্রিক সোসাইটির তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৮৪ সালে। ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সংস্থাতে তিনি সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। চিনের মতো দেশও  তাঁকে নিজেদের অর্থনীতিশিক্ষার জন্য কাজ করতে আমন্ত্রণ জানান।তাঁকে বহুদেশের তরফ থেকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

পুরষ্কার 

 অমর্ত্য সেনের মতো মনীষাকে বিশ্ব সম্মান জানিয়েছে। তাঁর  প্রাপ্ত পুরস্কারের ঝুলির আয়তন সুবিশাল। ১৯৯৯ সালে তিনি ভারতরত্ন পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।তিনি ২০১৩ সালে লিজিওন ডি হন্যার পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি মোট ৯০ টি ডিগ্রি বা স্মমানের অধিকারী। ইউনেস্ক্যাপ তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর জ্ঞান পুরষ্কার দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।

রচনাবলী : তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে  ‘দা আরগুমেন্টিভ ইন্ডিয়ান’ অন্যতম জনপ্রিয়। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম বই ’চয়েস অফ টেকনিকস’ প্রকাশ পায়।তাঁর লেখা  পভার্টি অ্যান্ড ফেমাইন্স, রেশানিলিটি অ্যান্ড ফ্রিডম, আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স প্রভৃতি বইগুলি সর্বজন প্রশংসিত ।

উপসংহার 

একজন নাস্তিক মানুষ অমর্ত্য সেন। তিনি আপোষহীন। প্রথাগত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যেতেও তিনি ভয় পাননি । আজ এত সম্মানের পরেও তিনি আদ্যপান্ত মাটির মানুষ। শীতের ছুটিতে সোনাঝুড়ির বুক চিঁরে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়ান। ভারবাসীর কাছে তিনি গর্ব। তিনি ভারতবাসীকে চিনিয়েছেন আসল ভারতবর্ষ। তাঁর মতো মানুষ আমাদের সভ্যতার  অহংকার ।

অমর্ত্য সেন অনুচ্ছেদ রচনা 

ভারতবর্ষের মনীষীরা এসেছেন যারা তাঁদের কাজ দিয়ে আমাদের সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই তাঁদের মধ্যে অমর্ত্য সেন একটা স্তম্ভের নাম। বদলে যাওয়া ভারতীয় অর্থনীতির সময়ে দাঁড়িয়েও তিনি ভারতকে দেখেছেন অন্য চোখে। ৩রা নভেম্বর ১৯৩৩ সালে আশুতোষ সেন এবং অমিতা সেনের পুত্র অমর্ত্য সেন জন্মগ্রহণ করেন।১৯৪১ সালে সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে , কিন্তু দেশভাগের পর তিনি বিশ্বভারতীর স্কুলে ভর্তি হন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বছরেই তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  মজলিসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেখানে ট্রিনিটি কলেজে তিনি বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে শিক্ষাব্রতী ত্রিগুণা সেনের আনুগ্রহে তিনি দেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অধ্যাপক রূপে যোগদান করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখানে দুই বছর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।১৯৫৯ সালে তিনি পি.এইচ. ডি ডিগ্রি শেষ করতে ফিরে যান লন্ডনে। সেখানে আগামী বছর গুলিতে  নিজের ইচ্ছামত বিষয়ে লেখাপড়া করার অনুমতি পান। তিনি বিশ্বের নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তার মধ্যে হার্ভার্ড, ট্রিনিটি, এম.আই.টি, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, বারক্লে, যাদবপুর প্রভৃতি উল্লেখ্য। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকসে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থ নীতির জন্য নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে তিনি লিজিয়ন ডি হন্যার সম্মান লাভ করেন। তাঁর মুকুটে রয়েছে এমনই মোট ৯০ টি ডিগ্রি।১৯৯৯ সালে তিনি ভারতরত্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর মণীষার দ্যুতি আমাদেরকে জাগিয়ে রাখে সর্বক্ষণ। লেখা বই গুলির মধ্যে দা আরগুমেন্টিভ ইন্ডিয়ান, পভার্টি অ্যান্ড ফেমাইন ,আয়েডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স প্রভৃতি বইগুলি জনপ্রিয়। তাঁকে বাংলাদেশের তরফ থেকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তিনি আদ্যপান্ত একজন মাটির মানুষ তিনি আজও শীতকালীন ছুটিতে  শান্তিনিকেতনে আসেন সোনাঝুড়ির বুকে ঘুরে বেড়ান। তিনি ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের কাছে একজন অমূল্য সম্পদ। তিনি আমাদের দেশকে করেছেন গৌরবান্বিত।