পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা – Home Remedies for Piles

আমাদের ছুটোছুটির জীবন বিশেষত এই তৃতীয় বিশ্বে দেশে  যেখানে রোজকার মানুষের লড়াই পেটকে কেন্দ্র করে, সেই লড়াই লড়তে গিয়ে পেটের প্রতি আলাদা যত্ন নেওয়া হয় না। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে সব সময় নিয়ম মেনে, পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া সম্ভবপর হয় না। তাই কম বেশি প্রায় অর্ধেকের বেশি ভারতীয় পেটের সমস্যাতে ভোগেন।
প্রদাহজনিত এমন এক রোগের নাম নাম পাইলস বা অর্শ।এটি মলদ্বারের রোগ। এটি তীব্র বেদনাদায়ক এবং জটিল রোগ গুলির মধ্যে একটি। এই রোগের ক্ষেত্রে মলদ্বারের ভেতরে বাইরে, চারপাশে এক বা একাধিক গুটির ন্যায় অংশ দেখা যায় এগুলিকে ‘বলি’ বা গেজ।এই বলিগুলি অভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি করে, যার ফলে পায়খানা করবার সময় কারো স্বল্প বা কারো অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। অনেকের কেবল ব্যাথা দেখা যায় এক্ষেত্রে রক্ত পরিলক্ষিত হয় না।

পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা – Home Remedies for Piles


অ্যানাল বা রেক্টামের ব্লাড ভেসেল গুলি প্রসারিত হয়ে গেলে এবং সেই অংশে প্রদাহ দেখা দিলে অর্শের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর ফলে মলত্যাগের সময় মলের সাথে রক্ত পড়ে। অর্শের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।এখন আসুন জেনে নিই ঠিক কি কি কারণে আমাদের পাইলসের হতে পারে।
1.  কোষ্ঠ কাঠিন্যের  দীর্ঘকালীন সমস্যা এর জেরে পাইলস দেখা যেতে পারে।
2.  প্রস্রাবে বাধা বা সারাদিন দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলেও পাইলসের সমস্যা দেখা যায়।
3.  গর্ভধারণ কালীন অবস্থায় পাইলসের সমস্যা দেখা যেতে পারে।
4. দীর্ঘকালীন কাশির সমস্যা থাকলে পাইলসের সমস্যা দেখা যেতে পারে।
5. মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে পাইলসের সম্ভাবনা বাড়ে।
6. ডায়েরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের  মতো পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে পাইলসের সমস্যাকে তরান্বিত করে।
7. ভারি বস্তু বহন করতে হয় এমন কাজ, অতিরিক্ত ওজন, ইত্যাদি কারণে পাইলসের সমস্যা হতে পারে।

পাইলসের সমস্যার ক্ষেত্রে মলদ্বার ফুলে যাওয়া এবং  সেখান থেকে রক্ত পড়া এই রোগের মূল উপসর্গের মধ্যে অন্যতম। পাইলসের চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে রক্তপাতের জন্য দেহে রক্তাল্পতা, রক্তশূণ্যতা, দুর্বল ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। পাইলসের ব্যাথা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

উপসর্গ :


এক দুঃসহ যন্ত্রণার নাম পাইলস। এই সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে নানা ভাবে ক্ষতি করে। মলত্যাগের সময় ব্যাথাহীন রক্তপাত তার জন্য মলদ্বার ফুলে যাওয়া এই  রোগের মূল লক্ষণ । তাছাড়াও
1. মলত্যাগের সময় অল্প বা অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তক্ষরণ।
2. এই রোগের ক্ষেত্রে মাথাব্যাথা মাথায় ভার অনুভব করা রোগের অন্যতম মূল লক্ষণ
3. এই রোগের সময় মলদ্বারে কাঁটা বিঁধলে যেমন ব্যাথা হয় তেমন ব্যাথা অনুভূত হয়।
4. পাইলসের সমস্যার অন্যতম উপসর্গ হল উরু, বক্ষ, নাভি, এবং মলদ্বারে ব্যাথার অনুভূতি।
5. এছাড়াও গুহাদ্বারে ব্যাথা,জ্বালাভাব,টাটানি ,যন্ত্রণা প্রভৃতি হল এই রোগের উপসর্গ।

প্রতিরোধের  উপায় :


1.  কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না  হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।
2. সারাদিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার জলপান করা।
3. অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ  না করা।
4. রাতের পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম সবার দরকার। আর পাইলসের ধাত থাকলে নিয়মিত ঘুমানো খুবই জরুরি।
5.  খাদ্যাভাসের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। তরল ,সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে, তেমনই অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
6.  চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দৈনন্দিন জীবনকে শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হবে।

পাইলসের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে যেমন ডাক্তারী পরামর্শ মেনে চলাও বাধ্যতামূলক। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে সেই রোগ কতটা গভীর তার উপর। পাইলসের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একরকম। কিছু কিছু সময়ে কেবলমাত্র ডাক্তার স্বীকৃত ওষুধেই কাজ দেয়। আবার কিছু সময় অস্ত্রোপচারই হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র পথ। তবে সবক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ বাধ্যতামূলক। কারণ এর থেকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই এই রোগকে সমূলে উৎপাট করতে জীবনের ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি নেওয়া দরকার। তাই আপনার জন্যে দেওয়া হল পাইলসকে রুখে দেওয়ার কিছু ঘরোয়া সমাধান। যা আপনি পাবেন আপনার হাতের কাছেই।


1. মূলোর রস: মুলো বা র‍্যাডিশ পাইলসের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সব্জি। এটি একটি নিয়মিত অভ্যাস। প্রথমে ১/৪ কাপ তারপর আস্তে আস্তে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী বাড়াতে থাকুন। নিয়মিত ১/২ কাপ মূলোর রস খেলে পাইলসের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস পায়।

2.  বেদানা : বেদানার দানা জলে ফোটান। ততক্ষণ পর্যন্ত ফোটান যতক্ষণে না বেদানার দানা এবং জলের রং বদলে যায়। তারপর সেই জল ছেঁকে নিয়ে সেই জল দিনে দুবার করে খেলে পাইলসের সমস্যার থেকে মুক্তি পাবেন আপনি। বেদানা রক্তাল্পতার অব্যর্থ ওষুধ। গর্ভাবস্থায় বেদানা খুবই উপকারী।

3. ডুমুর : ডুমুর অত্যন্ত উপকারী । এই ডূমুর  রাতের বেলায় জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জল সকালবেলা অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক বিকাল বেলায় খান এতে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়।


4. আদা ও লেবুর রস : ডিহাইড্রেশন পাইলসের কারণগুলির মধ্যে অন্যতম। আদা ও লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। তাতে একচামচ মধু দিয়ে সেই মিশ্রণ নিয়মিত খান। দিনে দুইবার খেলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। এর ফলে শরীর হাইড্রেট হবে এবং পাইলসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।

5. কাঁচা পিঁয়াজ: তীব্র গরমের জায়গাতে কাঁচা পিঁয়াজ রোজের খাদ্যাভাসের অংশ । তীব্র গরমে পিঁয়াজ শরীরের জলকে ধরে রাখে। পাইলসের কারণে মলদ্বার থেকে রক্ত বের হয় । কাঁচা পিঁয়াজ ব্যবহারে সেই ব্যাথা অনেকটাই প্রশমিত হয়। অন্ত্রের যন্ত্রণা উপশমে পিঁয়াজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

 

6. প্রাতঃকর্মে বসার ধরণ: মলত্যাগের সময় মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ পড়লে পাইলসের সমস্যা বাড়ে। তাই কমোডে বসার ধরন ভুল হলে অতিরিক্ত চাপের প্রয়োজন হয়। তাই বসার সময় একটি টুল বা উঁচু কোনো জায়গা রাখলে বা একটু ঝুঁকে বসলে বৃহদন্ত্রের উপর চাপ পড়লে পাইলসের প্রতিকার সম্ভব।

 

7. ওয়ার্কআউট : ওয়ার্ক আউট করলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। তাতে  শরীর এবং মন দুইই ভালো থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা থেকেও দূরে থাকা যায়। কিন্তু ভারী কাজ করা উচিত নয়। সাইকেল চালানো হালকা সাঁতার কাটলে শরীর সুস্থ থাকবে, কমবে পাইলসের সম্ভাবনা।

8. হলুদ : কাঁচা হলুদ জলে ফুটিয়ে সেই জল নিয়মিত সেবন করলে  পাইলসের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় ।

9. ডাল: মুসুরি, খেসারী, তিসি, ইত্যাদি ডাল জাতীয় খাবার খেলে তা পাইলসের সমস্যা নিরাময়ে বেশ উপকারী

10. কলা : পাইলসের সমস্যায় কলা হল সবচেয়ে উপকারী। বিনা কষ্টে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে কলা । এর ফলে পাইলসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।কলা সোয়াবিনের দুধের সাথে কলা মিশিয়ে খেলে পাইলসের চিকিৎসায় তা সবচেয়ে ভালো কাজ করে।


ডাক্তারি সাহায্য : তবে পাইলসের মতো জটিল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ  নিয়মিত ভাবে রাখা অত্যন্ত জরুরি ।

আপনার জন্যে রইল পাইলসের কিছু ঘরোয়া ওষুধ। তাই বেশি ভয় না পেয়ে পাইলস থেকে মুক্তিন পান। শরীর এবং মন উভয়কেই ভালো রাখুন সুস্থ থাকুন, সুন্দর জীবন কাটান।  

লেখক – রাহুল পাঠক