টনসিলের চিকিৎসা – Home Remedies for Tonsil

আমাদের দেহ বিরাট একটা বাড়ি। তাঁকে সচল রাখবার জন্য অনবরত কাজ করে চলেছে তার প্রতিটা কুঠুরি । দেহকে প্রতিনিয়ত কাজ করিয়ে চলেছে তার প্রতিটা কোষ ,কলা, তন্ত্র। কোনো অঙ্গই আমাদের কাছে কার্যকারিতা হারায় না। আর কার্যকারিতা হারালে শরীরে নেমে আসে অসুস্থতার কালো মেঘ। আমাদের শারীরিক কাঠিন্যের পাশাপাশি খোয়া যায় মানসিক শান্তি। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানিয়ে নিতে হয় আমাদের শরীরকে রাখতে হয় সুরক্ষিত, তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় ঝড় জল রোদ্দুর থেকে।

টনসিলের চিকিৎসা – Home Remedies for Tonsil


টনসিল শব্দের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে ধারণা এবং ভ্রান্ত ধারণা উভয়ই ভিড় করে আছে সমান পরিমাণে। গলা ব্যাথা শব্দটা কানে এলেই আমরা বলে দিই তোমার তো টনসিল হয়েছে এই টনসিল আসলে কি? আমাদের রোজের গৃহীত খাদ্য  আমাদের গৃহীত বাতাস এর মধ্যে থাকে নানান রকমের অশুদ্ধি। সেই সকল জীবাণু নাশে আমাদের মুখ এবং গলার ভেতর থাকে অনেক গুলি গ্রন্থি তারা হল যথাক্রমে, লিঙ্গুয়াল, টীউবাল, অ্যাডেনয়েড, প্যালাটাইন এই গ্রন্থিগুলিই শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এই গ্রন্থি গুলির একটি আক্রান্ত হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটাইস। টনসিলাইটাইস যে শুধুমাত্র শিশুদের মধ্যেই বিরাট ভাবে দেখা যায় তা নয়।যেকোনো বয়সের মানুষেরই এই সমস্যা হতে পারে। শতকরা ৫০ জনের টনসিলাইটিস এর কারণ হিসাবে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশানকে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট আমাদের দেহের টনসিলাইটিসের কারণ তীব্র গরম বা তীব্র ঠান্ডা।এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগের লক্ষণ গুলি ঠিক কি কি। কারণ উপসর্গই রোগ নির্ধারণের অন্যতম পথ। আর তারপর আমরা আপনাকে বলব টনসিল এর চিকিৎসার কথা, যা আপনারা খুব সহজেই করতে পারবেন।  

1.তীব্র গলা ব্যাথা এই রোগের প্রধানতম লক্ষণ ।
2. উচ্চ তাপমাত্রা এবং মাথাব্যাথা এই রোগের উপসর্গের মধ্যে অন্যতম।
3.এই সময় খাবার খেতে অসুবিধা হয়, মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়।
4.এই রোগের ক্ষেত্রে কানে ব্যাথা হতে পারে, এই লক্ষণ সহজেই জানান দেয় টনসিলাইটিস দরজায় কড়া নাড়ছে।
5.ছোটদের ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা বের হতে দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে এই সময় স্বরভঙ্গের প্রবণতা দেখা যায়।
6.এইসময় মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া সাধারণ একটি সমস্যা।


রোগের উপসর্গ জানা যেমন জরুরি তেমনই দরকারি সেই রোগের কারণ গুলি জেনে রাখা। কি প্রকার জীবনযাপণ আমাদের জীবনে টনসিলাইটিসের মতো তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি করে। সেই জীবনযাপন এড়িয়ে চলাই আমাদের কর্তব্য হোক। তাহলে আসুন জেনে নিই এই রোগের কারণ সমূহ।

1.পুষ্টির অভাব এই রোগের অন্যতম কারণ বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে, যার ফলে দেহ সহজেই এই সময় ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়।
2.আইসক্রিম , ঠান্ডা জল বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে এই রোগের কড়াল ছায়া নেমে আসে আমাদের ওপর।
3.স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বসবাস করলে এই রোগ হতে পারে।
4.আবহাওয়ার পরিবর্তনে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকলে টন্সিলাইটিস দেখা যায়।
5.রোদ থেকে এসে ফ্রিজের জল খেলে টনসিলের প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
6. গরমে ঘাম বসে এই রোগ দেখা যেতে পারে।

টনসিলাইটিস রোগ হিসাবে আমরা অনেকেই হালকা ভাবে নিয়ে থাকে। কিন্তু এই রোগের বিশালতার কারণে চিকিৎসকেরা অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমাদের ভাবতে হবে একমাত্র অস্ত্রোপচারই টনসিল এর চিকিৎসার একমাত্র রাস্তা। প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোড়ালো করে এই রোগের প্রতিকার সম্ভব। রইল কিছু টনসিলের চিকিৎসার খোঁজ। 

চিকিৎসা-


1. প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে।নিতে হবে পূর্ণ বিশ্রাম। বারংবার মাউথ ওয়াশের মাধ্যমে ওরাল হাইজিনকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। সাধারণত গারগেলের মাধ্যমে ঠিক রাখতে হবে গলার গ্রন্থির স্বাস্থ্যতা।

2. যদি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশান এর কারণে  এই রোগ হলে ডাক্তারি পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে। এই রোগের ক্ষেত্রে জ্বর হয় সেকারণে জ্বরের ওষুধ নিতে হবে। ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগের থেকে নিরাময় সম্ভব খুব দ্রুততায়।

3. দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করতে হয়। বারংবার টনসিলাইটিস হলে টনসিল কেটে বাদ দেওয়া হয়।  

4. আদা দিয়ে লেবু  চা , ঠান্ডা না লাগালে এই রোগ থেকে দ্রূত মুক্তি সম্ভব।

টনসিল এর প্রদাহ হলে ইনফেকশান হলে চিকিৎসা করালে রোগমুক্তি সম্ভব। কিন্তু দীরঘমেয়াদি হলে বা বার বার এই রোগ হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু এই অস্ত্রোপচার অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কমিয়ে দেয় অনেকটাই। তাই ডাক্তারের পরামর্শে থাকুন সুস্থ থাকুন, নিয়মমাফিক ভাবে জীবন কাটান। ভালো থাকুন, মন খুলে বাঁচুন জীবনভর।