চুল ঘন করবার উপায় – How to Add Volume to Your Hair

আমাদের মাথার চুল আমাদের মুখমণ্ডলকে পরিপূর্ণতা দান করে। আমাদের যৌবনকাল থেকেই আমাদের চুল এবং মুখ মণ্ডলের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর আমরা সবাই দিয়ে থাকি। চুল আমাদের ব্যক্তিত্বের বহিঃ প্রকাশ ঘটায়। আমাদের না বলা অনেক কথা বলে যায়। বয়ঃ সন্ধি কালে আমরা চুলের প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে থাকি। তার পরিচর্যাতে আঠারো থেকে আটত্রিশ সব্বাই খুবই ব্যস্ত। সবাই নিজের চুলের চর্চা করতে সারাদিন ব্যস্ত। আমাদের সাজগোজের অন্যতম বস্তুু হল চুল।

আমরা প্রায়ই শুনি আমাদের মা কাকীমারা বলেন, “ দেখেছো মাথাটা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে, ছোটবেলায় কি সুন্দর একমাথা চুল ছিল।”আর মাথার চুল পড়া একটা সমস্যা।এই ইঁদুর দৌড়ের জীবনে আমরা সবাই ছুটছি, আর ছুটতে গিয়েই আমরা আমাদের খাওয়া দাওয়া , রাতের ঘুম সবটাই আমাদের জীবন থেকে চলে যেতে বসেছে।আর এই বেহিসেবী খাদ্যাভ্যাসের দরুণ আমাদের চুলের ক্ষতি আমরা নিজেরাই করি। আমাদের শরীরে কেরাটিন নামক প্রোটিনের জন্য চুলের বৃদ্ধি। আমাদের মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ঢেকে রাখে করোটি, সেই করোটির উপরিভাগে কেরাটিনের যে আবরণ থাকে যা কিনা আমাদের করোটিকে নানা রকম আঘাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের চুল কেবল মাত্র আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না । রোদ ,ঝড়, জল বৃষ্টি থেকে আমাদের চুল আমাদের রক্ষা করে।  
এই বাড়তে থাকা ফাস্ট ফুডের যুগে আমাদের খাবারের তালিকাতে বাড়ছে বেহিসেবী খাবারের ছড়াছড়ি। আমাদের টেনশন, অনিদ্রা, নানান কারণে চুল পড়তে পারে।

চুল ঘন করবার উপায় – How to Add Volume to Your Hair


তাহলে আসুন জেনে নিই চুল পড়ার সমস্যা আমাদের কেন হতে পারে। চুলের বৃদ্ধি এবং পরিচর্যা নির্ভর করে আমাদের জীবনশৈলীর উপর। পৃথক পৃথক মানুষের ক্ষেত্রে তাদের চুল পড়ার কারণও সেকারণে ভিন্ন হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে চুল পড়ার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ।

ছেলেদের চুল পড়ার কারণ-

 

1. বিভিন্ন অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টাস্টেরন , অ্যান্ড্রোস্টেন্ডিয়ন , ডিএইচটি হরমোনগুলি মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি নিঃসৃত হয় তাই জন্য এই হরমোনগুলি হেয়ার ফলিকলের উপর কাজ করে। তাই জন্যে ছেলেদের চুল , মেয়েদের থেকে বেশি পড়ে।

2.  ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ৯৫% ক্ষেত্রে বংশগত। বাবা ,কাকাদের চুল পড়ার ধাত থাকলে পরবর্তীকালে সেই বংশের ছেলেদেরও চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।

3. খুস্কির কারণে চুল পড়ে। এছাড়াও নিয়মিত শ্যাম্পু না করা, অতিরিক্ত স্টাইল বা কালার করা হলে চুল পড়তে পারে।

4. অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল করলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায় ।

5. ছেলেদের মধ্যে একপ্রকার ধারণা রয়েছে যে টুপি পড়লে চুল পড়া হ্রাস পায়। কিন্তু তা সত্যি নয়। কারণ টুপি পড়ে থাকলে চুলের কূপে ঘাম জমে , ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়।

মেয়েদের চুল পড়ার কারণ-

1. মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে মাসিক বন্ধ থাকলে অর্থাৎ মেনোপজ চলাকালীন অবস্থায় প্রচুর চুল পড়ে।

2. বর্তমানে অধিকাংশ ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ  একটি সমস্যা। এছাড়াও বিভিন্ন অটোইমিউন ডিসিজ যেমন লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, আয়রন ডেফিসিয়েন্সীর কারণে চুল পড়া দেখা যায়।

3. গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন অবস্থায় বা প্রসবের পরে মেয়েদের চুল পড়ার সমস্যা দেখা যেতে পারে।

4. ভারতীয় সমাজে মেয়েদের চুল পড়ার কারণ হিসাবে যে কারণটি আমাদের চোখের সামনে ধরা দেয় তার মধ্যে প্রোটিনের অভাব অন্যতম। তাদের দৈনিক খাদ্য তালিকাতে আরো বেশি করে ডিম , মাংসের বিভিন্ন প্রোটিনযুক্ত খাদ্যের   অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন।

5. অতি পরিচর্যাও চুলের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। চুল কার্ল করা, চুল স্ট্রেট করা, অধিক তাপে তাকে ড্রাই করা ইত্যাদি কারণে চুল পড়ার প্রকোপ দেখা যায়।

প্রতিরোধের উপায়

1. সুষম খাদ্য গ্রহণ- রোজের খাদ্যতালিকাতে প্রোটিনযুক্ত খাবার থাকলে চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। এই খাদ্যতালিকাতে ডিম, মাংস, মৌসুমী ফল , মাছ, সবুজ শাকসব্জি ইত্যাদি আবশ্যিক। চুলের কেরাটিনকে অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করাই এই খাদ্যতালিকার মূল কাজ।

2. পরিমিত ঘুম- নিয়ম মাফিক ঘুম আমাদের সবার খুবই প্রয়োজন। ঘুম ঠিক না হলে চুল পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

3. প্রসাধনী- চুলের নিয়মিত পরিচর্যা করলে , চুলের ক্ষেত্রে নানান প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করলে চুল পড়ার সম্ভাবনা কমে অনেকটাই।

4. চুলের যত্ন- মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করলে চুল পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এছাড়াও  স্নানের পর চুল মোছার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে চুল পড়ার সম্ভাবনা কমে।

5. চুলের রক্ষা- বেশি জোরে চুল বাঁধলে চুলের আগা পাতলা হয়। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আলগা করে চুল বেঁধে ঘুমোতে গেলে এবং আলগা করে চুল বাঁধলে চুল সুস্থ থাকে।

6.  চুলের পরিচর্যাতে নারকেল ,সরিষা, বাদামের তেল সপ্তাহে দুদিন করে লাগালে চুলের পুষ্টি বাড়ে।

আমাদের জীবনে তবু দৌড় থামে না। এই ২৪ ঘণ্টার জীবনে ২২ ঘণ্টা জীবনযুদ্ধে লড়তে গিয়ে আমরা বহু সময়ে আমাদের চুলের যত্ন নিতে পারিনা কারণ তা সম্ভব  হয় না। তাই সহজে চুল ঘন করতে আমরা সবাই চাই।অসময়ে মাথা ভরা টাক কেউই পছন্দ করেন না। তাই আপনার জন্য রইল সহজে চুল ঘন করবার পদ্ধতি।

1. আদার তেল – আদার সাথে নারকেল তেল এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রন চুলের পক্ষে খুব উপকারী। ৫০ গ্রাম আদা ভালো করে কুচি করে থেতলে নিয়ে নারকেল তেল গরম করে ।এই মিশ্রণকে গরম করে ঠান্ডা করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে  স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন । ১ মাসের মধ্যে চুল ঘন হবে।

2.  জবার তেল – ১২-১৫টি জবা ফুলের পাপড়ি, কারি পাতা, ১কাপ নারকেল তেল  জবার তেল বানালে তা চুলের পক্ষে খুব উপকারী । পাপড়ি এবং কারি পাতা এমন ভাবে গরম করতে হবে যাতে তা পুড়ে না যায়। এবার তেল গরম করে তাতে পাপড়ি এবং কারি পাতার মিশ্রণটি দিন। তেল ঠান্ডা হয়ে এলে তা রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্যাল্পে মেখে ঘুমোতে যান। এতে আপনার চুলের ঘনত্ব বাড়বে এক নিমেষে।

৩। অ্যালোভেরার তেল – অ্যালোভেরা চুল গজানো এবং তার গোড়াকে শক্ত করতে খুবই উপযোগী। নারকেল তেল গরম করে তার সাথে অ্যালোভেরা জেল বা জুস মিশিয়ে ঠান্ডা করে তাকে বোতলে পুড়ে দুই সপ্তাহ মাখলে  চুল আগের থেকে ঘন হয়।


4. মিনোক্সিডিল- বাজারে মিন্টপ ট্রপিকাল লোশন বা ৫% মিনোক্সিডিল নামের এক ওষুধ পাওয়া যায়। এই ওষুধ সপ্তাহে দুবার করে ব্যবহারে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।

5. অ্যান্টিফাংগাল ড্রাগ- অনেক সময় ফাংগাসের কারণে চুল পড়া বৃদ্ধি পায় । তাই অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ খেলে এই চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়। যেমন- ফ্লুকানোজল নামের শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে।

6. অন্যান্য উপায়- আজকাল বিজ্ঞানীর অগ্রগতিতে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট, স্ক্যাল্প রিডাকশান ইত্যাদি পদ্ধতি সহজলভ্যতার আওতায় আসায় চুলের পরিচর্যার উপায় বেড়েছে মানুষের কাছে।

 

7. ট্যাবলেট ফিনেসটারাইড ৫ মি:গ্রা:– এই ওষুধ সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নিলে চুল পড়া প্রায় ৬৬% কমে যায়।

ডাক্তারি পরামর্শ- চুল পড়ার কারণ যেহেতু সবার জন্যে আলাদা সেকারণে ডাক্তারের পরামর্শ মতোই ওষুধ খাওয়া উচিত।

সবাই সুস্থ থাকুন, চুলের যত্ন নেওয়ার আগে , মনের এবং পেটের যত্ন নেওয়া দরকারি। তাই সুস্থ বাঁচুন। চুলের যত্ন নিন, নিজের যত্ন নিন।