নেতাজী রচনা ও অনুচ্ছেদ – Netaji Essay & Paragraph

ভুমিকা

ভারতবাসী প্রায় দুশো বছর বৃটিশ সরকারের অধীনে ছিল।এর মধ্যে প্রচুর মনীষা এসেছেন যারা ভারতীয়দের জীবনবোধ এবং দেশকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি , সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিয়েছিলেন।এইসব মহাপুরুষ আমাদের হৃদয়ে এক বিশাল জায়গা জুড়ে আছেন। আর এদের মধ্যে যিনি আমাদের শিরদাঁড়াকে শান দেওয়ার পাঠ দিয়ে গেছেন তাঁর  নাম সুভাষচন্দ্র বসু। সুভাষচন্দ্র বসু , যিনি নিজের শিক্ষকের ভারতবিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন কৈশোরেই।সুভাষচন্দ্র বসু সেই স্বপ্নের নাম যা গোটা দেশকে ভাবতে শিখিয়েছিল ভারতীয়রা যদি চায়, গোটাদেশে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করতেই পারে। নিজস্ব সেনা বাহিনী গড়েও যে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে ভারতীয়রা, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। একজন দক্ষ প্রশাসক, আদর্শবাদী নেতা, সর্বোপরি একজন সাহসী মানুষ। চোখের তারায় আগুন জ্বালানো, দাপটকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেলে, মানুষ যে সবার হয়ে যায় তাঁর জ্বলন্ত নজির  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু । মানুষের মতো মানুষের একটা নাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

জন্ম ও ছেলেবেলা

১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি কটক শহরে আইনজীবী  জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র  বসু। জানকীনাথ বসু ছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত আইনজীবী। তাঁর মেজ দাদা ছিলেন শরৎকুমার বসু। নেতাজী ছোট্ট থেকেই মেজদার খুব কাছের এবং প্রিয় ছিলেন। তাঁর পড়াশোনার শুরু কটকের একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে।ষষ্ঠ শ্রেনী অবধি তিনি সেখানেই লেখাপড়া করেন । তারপর তিনি ভর্তি হন র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে সেখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষাতে কলকাতা থেকে প্রথম হন, সালটা ১৯১১। তারপরের তাঁর যাত্রা কলকাতা শহর জুড়ে। ছোট থেকে বই পড়তে ভালবাসতেন, বিতর্কতে অংশগ্রহণ করতেন ।তিনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের গুণমুগ্ধ ভক্ত। কলকাতাতে এসে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন।

পড়াশোনা ও কর্মজীবন 

স্কুলে পড়াশোনা করবার সেসময়ই তিনি তাঁর শিক্ষকের হাত ধরে  পরিচিত হন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে । তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন । পরবর্তীকালে তাঁর হাতেই নেতাজীর রাজনীতির  হাতেখড়ি। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি এক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ,তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে সেখান থেকে তিনি ১৯১৮ সালে  বি. এ পাশ করেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতে ভালো ফল করেও তিনি সেই চাকরী নেননি । বৃটিশ সরকারের দাস না হয়ে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করাকেই শ্রেয় মনে করায় যোগদান করেন সক্রিয় রাজনীতিতে।

রাজনৈতিক জীবন

১৯১৯ সালে রাউলাট আইন চালু হলে বিদেশে থাকা সুভাষ দেশে ফিরে আসেন । দেশে ফিরে তিনি স্বরাজপত্র নামে  এক পত্রিকার সাথে যুক্ত হন। ১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কলকাতার মেয়র ,সেইসময় সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর অধীনে কর্মরত। সেখানেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি ,তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর রাজনীতির জীবনে ২০ বছরের মধ্যে ১১ বার গ্রেফতার হন। ১৯৩০ সালে তাঁকে নির্বাসিত করা হয় ইউরোপে । শুধুমাত্র পিতার অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়ার জন্য তিনি দেশে ফেরেন। মনিপুর, মান্দালয়ের মতো বহু জায়গাতে তিনি নির্বাসিত হয়েছেন।

১৯৩৮ সালে গান্ধীজীর বিরোধীতা করেন তুলে ধরেন পূর্ণস্বরাজের দাবী । জহরলাল নেহেরুর মতো নেতারা তাঁকে সমর্থন করেন। গান্ধিজীর বিরোধীতার মুখে দাঁড়িয়ে, লড়াই করেন নির্বাচিত হন কংগ্রেসের সভাপতিপদে।১৯৩৯ সালে ত্রিপুরা অধিবেশনে তিনি পুনরায়  সভাপতিপদে নির্বাচিত হন। কিন্তু অধিকাংশ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা পদত্যাগের দাবি তোলেন, তিনি নিজে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন এবং গঠন করলেন ফরওয়ার্ড ব্লক।
ইতমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘণ্টা বেজে গেছিল। তাঁর বক্তব্য ছিল,এই যুদ্ধের  সুযোগ ভারতীয়দের নিতে হবে । ভারতীয়রা চাইলে নিজেদের সেনাবাহিনী গড়তেই পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন,  ভারতের স্বাধীনতার লড়াইতে অংশ নিতে হবে সবাইকে, তাতে রক্ত দিতে হবে সবাইকেই।

দেশত্যাগ ও আজাড হিন্দ ফৌজ গঠন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন গৃহবন্দী। যুদ্ধতে ভারত বৃটিশদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। তিনি দেশত্যাগ এর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দলের একজন সদস্যকে নিয়ে তিনি জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আফগানিস্তান ও সোভিয়েত রাশিয়া হয়ে তিনি গেলেন জার্মানি। এই পলায়ন ছিল সম্পূর্ণরূপে ছদ্মবেশে। হিটলার স্মমতি দেননি, সাহায্যের হাত বাড়াননি। ১৯৪৩ সালে তিনি জার্মানি ত্যাগ করেন। সাবমেরিনে চেপে নেতাজি পৌঁছে গেলেন  জাপান।
রাসবিহারি বসু জাপানে গড়ে তুলেছিলেন ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী তিনি ১৯৪৩ সালে তাঁর দায়িত্ব তুলে দেন  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে। একটি নারী বাহিনী সহ এতে ছিলেন মোট ৮৫০০০ সেনা। এর দায়িত্ব ছিল একটি প্রাদেশিক সরকারের হাতে ।
এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আইন ও বিচারব্যবস্থা ছিল।  মোট ৯ টি দেশের সরকার একে স্বীকৃতি দেয়। এই বাহিনী ইংরেজদের উপর আক্রমণ করে। ভারতীয় সেনা এই বৃটিশদের উপর আক্রমণের পরও বিপুল ভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দেননি।

জীবনবোধী জ্ঞান

নেতাজি উপাধি পাওয়া তাঁর ইম্ফলে। রবি ঠাকুর তাঁর তাসের দেশ নাটকে নেতাজীকে “দেশনায়ক”  উপাধি দেন। তাঁর করা উক্তি “জয় হিন্দ” আজ ভারতের এক হওয়ার স্লোগান। তিনি বলেছিলেন , “ তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”তাঁর ব্যক্তিত্বের সামনে হিটলার, তোজোর মত একনায়কতন্ত্রী শাসকেরাও তাঁর সামনে মাথানত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর আদর্শে ছিলেন অনুপ্রানিত। তাঁর লেখা বিখ্যাত বই গুলির মধ্যে তাঁর আত্মজীবনী ‘Indian Pilgrim’ এবং ‘India’s struggle for freedom’ বইগুলি সবার পড়া উচিত।
তাঁর দৃড়তা তাঁকে করেছিল দেশের নেতা ,দশের নেতা।
মৃত্যুঃ তাঁর মৃত্যু নিয়ে আজও জলঘোলা হয়।  ১৮ই আগস্ট , ১৯৪৫ তাইহকু বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় প্লেন দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েন। এখানেই তাঁর মৃত্যু  হয় বলে অনেকে মনে করেন। তবে সেই মৃত্যু নিয়ে আজও মানুষের মধ্যে অনেক রকম মতান্তর রয়েছে।

উপসংহার

তিনি আমাদের মাঝে আছেন। আজও যখন মানুষ আপোষহীন ভাবে জীবনের লড়াই চালিয়ে যায়, নেতাজীর কথা আমাদের উদবুদ্ধ করে। আজও আমাদের আড্ডার ঠেকে আলোচনাতে ভেসে ওঠে “ নেতাজী থাকলে দেশটাই অন্যরকম হত।” আমরা আমাদের নেতাজীকে বাঁচিয়ে রেখেছি আমাদের শ্বাসের প্রতি অণুতে। নেতাজী আছেন আমাদের প্রত্যেকের জীবন, যৌবন, আদর্শের লড়াইতে।

নেতাজী অনুচ্ছেদ 

বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এসেছে। এই বিপ্লবীদের দলে আগুন ঝরানো একটা নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারী উড়িষ্যার কটক শহরে জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর সন্তান সুভাষ জন্মগ্রহণ করেন। কটকে ছোটবেলার লেখাপড়া শেষ করে তিনি র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন ।
সেখানকার লেখাপড়া শেষ করে তিনি আসেন কলকাতাতে।১৯১১ সালে কলকাতা থেকে ম্যাট্রিকে প্রথম হন। ১৯১৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি দর্শনে বি.এ পাশ করেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতে ভালো ফল করেও সে চাকরী করেননি।স্কুলে পড়াকালীন মাস্টারমশাই এর থেকে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পর্কে  জানতে পারেন।১৯২৪ সালে যখন চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার মেয়র তখন তিনি তাঁর অধীনে কাজ করতেন। তাঁর ২০ বছরের রাজনীতির জীবনে তিনি মোট ১১ বার গ্রেফতার হন। মনিপুর, মান্দালয়ে ইত্যাদি জায়গায় তিনি,বহু বার থেকেছেন নির্বাসিত। ১৯৩৮ সালে গান্ধীজীর তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর দাবী ছিল পূর্ণ স্বরাজের । নেহেরুর মতো নেতারা  পাশে দাঁড়ান নেতাজীর। ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরা অধিবেশনে তিনি আবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। দলের মধ্যেকার ক্রমাগত চাপে তিনি পদত্যাগ করেন, গঠন করেন ফরওয়ার্ড ব্লক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশদের ওপর আক্রমণ তীব্রতর করার ডাক দেন। এইসময় একদিন রাতে নিজের বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে এদেশ ছেড়ে যাত্রা করলেন জার্মানির উদ্দেশ্যে। আফগানিস্তান , সোভিয়েত রাশিয়া হয়ে গেলেন জার্মানি। সেখান থেকে সাবমেরিনে জাপান চললেন  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৪৩ সালে জাপানে রাসবিহারী বসুর প্রতিষ্ঠা করা আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নেন। মোট ৮৫০০০জনের সৈন্যবাহিনী তে নারীরা ছিল সামনের সারিতে। এই বাহিনী ইংরেজদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।ভারতীয় সেনাবাহিনী বিপুলভাবে যোগ দেয়নি এই জেহাদে।তবে এই সময় তিনি বলেন সেই বিখ্যাত উক্তি “তোমরা আমায় রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” ১৯৪৫ সালে ১৮ আগস্ট তাইহকু যাবার পথে প্লেন দুর্ঘটনাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন, তবে এ নিয়ে আজও রহস্য আছে। তাঁর লেখা কিছু বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে  indian pilgrim আর india’s struggle for freedom বিখ্যাত। তাঁকে রবি ঠাকুর তাঁর “তাসের দেশ” নাটকে “দেশনায়ক “আখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর কথা , তাঁর জীবন আমাদের সারা জীবন মাথা উঁচু করে লড়াইয়ের প্রেরনা দেয়।