ওজন কমানোর খাবার তালিকা – Food to Loose Weight

“আমাদের শরীর হল একটা মন্দির।” আর বাইসেপ,ট্রাইসেপ ইত্যাদি হল সেই মন্দিরের গায়ে থাকা কারুকার্য। এই জেট গতির যুগে আমাদের এই দেহ সুস্থ রাখার পাশাপাশি, সেই শরীরকে ফিট রাখার প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করি। দশটা পাঁচটার টেবিল জব আমরা সবাই চাই। শারীরীক পরিশ্রমের থেকে মানসিক পরিশ্রম আমাদের সবার কাছে হয়ে ওঠে অতি আকর্ষণীয়। এই একুশ শতাব্দীর ছুটে চলা জীবনে ফাস্ট ফুড আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তার কারণ তার নিজস্ব গতি। যার কারণে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা একটি জলন্ত সমস্যা। এই স্থূলতার কারণেই আজ মানুষের দেহ আর মন্দির নয়, পরিণত হচ্ছে রোগের আঁতুড়ঘরে।
ওজন কমানোর জন্য কোন শক্ত ডায়েট বা অনাহারে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আমাদের যেমন করে তোলে অসুস্থ, তেমনই কমিয়ে দেয় আমাদের কর্মক্ষমতা।  অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে ওঠে শরীর ও মন। এই ওজন কমানোর নেশায় , হাজারো চেষ্টা এমনকি অপারেশনও বিফল হয়ে যায়। ওজন কমাতে কোনো চেষ্টাই বাদ রাখেন না, স্থুল মানুষরা। বিভিন্ন ক্ষতিকারক ঔষধের সাহায্য নিয়েও লাভ হয় না।

ওজন কমানোর খাবার – Food to Loose Weight

অনাহারে থাকা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। কিন্তু দৈনিক খাদ্যতালিকাতে এমন কিছু খাদ্য আমরা জুড়ে দিতেই পারি যাতে আমাদের শরীরের স্থূলতা হ্রাস পাবে অনেকাংশেই। আসুন জেনে নিই এই স্থূলতার কারণ কি? নিজের উচ্চতা অনু্যায়ী আদর্শ ওজনের ২০% বেশি ওজন দেখা দিলে সেই লোকটিকে স্থূল বলে গণ্য করা হয়।

কারণ-

 

1. অতিরিক্ত তেল, ঘি, বা অন্যান্য ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পায় খুব তাড়াতাড়ি।
2. মানসিক সমস্যা যেমন- অকৃতকার্যতা, হতাশা, একাকীত্ববোধ ইত্যাদি কারণে খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে ওজন বাড়ে।
3. প্রত্যেক মানুষের নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করা উচিত, এবং তা করা উচিত , খাদ্যগ্রহণ তার থেকে বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা দেখা যায়।
4.বংশানুক্রমে অনেকের মধ্যেই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার প্রবণতা দেখা যায়।
5. নাচ , খেলাধূলা নানান কায়িক পরিশ্রমের কাজ হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকে।

ওজন কমানোর খাদ্য-

 

1. দারুচিনি-

প্রতিদিন আমাদের খাদ্যতালিকাতে আমরা অনেক রকমের মশলা দেখতে পাই। এর মধ্য দারুচিনি এমন এক খাদ্য যা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে আগ্রহী যে কোনো মানুষের অন্যতম পছন্দ হওয়া উচিত এই মশলা। প্রতিদিনের খাবারে চিনির পরিবর্তে দারুচিনি গুড়ো ব্যবহারে মেলে প্রচুর উপকারিতা। এক থেকে চার চা চামচ দারুচিনি গুড়ো ব্যবহার করলে তা দেহের ২০% শর্করা বিপাকে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে শক্তির যোগান দেওয়ার সাথে সাথে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে ।


2. সামুদ্রিক মাছ-

সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, বা নানান প্রকারের সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন ইত্যাদি এই সকল মাছের মধ্যে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এই অ্যাসিড দেহের চর্বিগুলিকে বিপাকে সাহায্য করে। এই অ্যাসিডের কারণে আমাদের দেহে হেলদি  ফ্যাট সঞ্চিত হয়। যার ফলে দেহের ওজন বৃদ্ধিকারী চর্বিগুলি নষ্ট হয়। এই প্রকারের মাছ থেকে যে প্রকারের অ্যাসিড পাওয়া যায় তা হল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই কারণেই বাদাম তেল , জলপাই তেল শরীরে ফ্যাটের বিপাকে সাহায্য করে।

3.সবুজ চা/ গ্রিণ টি-  

সবুজ চায়ের ওজন কমানোর উপযোগীতা আমরা সকলেই জানি। এর প্রতিটি দানায় রয়েছে পলিফেনল ও কোরোজেনিক অ্যাসিড। এই পদার্থগুলি আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায়, যার ফলে ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দৈনিক ২-৩ কাপ গ্রিণ টি পান করলে তা বছরে  কোনো ব্যায়াম ছাড়াই ১৫ পাউণ্ড করে ওজন কমাতে সহায়ক। এক পরীক্ষাতে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাতে ভুগছেন এমন ১৬ জনকে ২২ সপ্তাহ ধরে গ্রিন টি পান করানো হলে তাদের ওজন গড়ে ৩.৮৫ কেজি পর্যন্ত কমে যায়। এর থেকে বোঝা যায় সুস্থ জীবনের জন্য গ্রিন টি আদর্শ পানীয়।

4. কুসুমবিহীন ডিম-

কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই মনে করেন ডিম এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু সাম্প্রতিককালের এক গবেষণাতে জানা গেছে সকালের খাবারে একটি কুসুমবিহীন ডিম থাকলে তা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা ভিটামিন বি -১২ চর্বির জারণে সহায়ক। তাই কুসুমবিহীন ডিম আমাদের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দেবে।

 

5. অলিভ ওয়েল-  

আমাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার মূল কারণের মধ্যে অন্যতম মেটাবলিজমের হার হ্রাস পাওয়া। অলিভ অয়েল হল আসলে ৮৫% অয়েলিক অ্যাসিড যা আমাদের শরীরে বিপাকক্রিয়াকে সচল রাখে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ অলিভ ওয়েল খেলে তা যেমন শরীরে মেটাবলিজম রেট বাড়াবে তার সাথে সাথে শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবন্টাকে হ্রাস করে অনেকাংশেই।

6. লেবু-

লেবু শরীরের মেদ কমাতে বিশেষ ভাবে সহায়ক। খাদ্যগ্রহণের পর যে ক্যলোরি মেদে পরিণত হয়, লেবু সেই মেদ জমা হতে বাধা দেয়। লেবুর মধ্যে উপস্থিত সাইট্রিক অ্য্যাসিড আমাদের শ্বসনে বিরাট ভূমিকা নেয় আমাদের দেহে শক্তির যোগান দেয় লেবু। সকালে গরম জলের সাথে লেবু এবং মধু ওজন কমানোর ওষুধ হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত।

7. যব বা ওটস-

অনেকেই যব বা ওটসকে নিজের খাদ্তালিকাতে রাখতে চান না কারণ তা সুস্বাদু নয়। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে প্রচুর ফাইবার এই ফাইবার আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভূগছেন তারা সকালের জল খাবারে ওটস রাখতেই পারেন এতে ফল মিলবে চটজলদি।

8. আপেল –

আপনি যদি চান ওজন কমাতে এবং তার জন্যে যদি ডাক্তারের কাছে না যেতে চান তাহলে দৈনিক একটি আপেল আপনাকে রাখবে সুস্থ। আপেলে থাকে ৪-৫ গ্রাম ফাইবার। আপেল চর্বির জারণে সাহায্য করে। আপেল খিদের উদ্রেক কমায়। তাই আপেল খান  ওজন কমান সুস্থ থাকুন।

9.আখরোট –

আখরোট আমাদের সবার খুব প্রিয়। আখরোটে আছে  প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাট আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। এটি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।

10. ঝাল মরিচ-

খাবারে ঝাল অনেকেই পছন্দ করেন। এবং ঝাল মরিচের প্রতি টান কম বেশি সকলেরই আছে। ঝাল মরিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ক্যাপ্সাইসিন নামক যৌগ যা আমাদের দেহে ওজন কমাতে সহায়ক। ঝাল মরিচ গ্রহণের পর দেহে ক্যাপ্সাইসিন থারমোজেনিক প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব যতক্ষণ স্থায়ী হয়, অর্থাৎ যতক্ষণ আমাদের ঝাল লাগে ঠিক ততক্ষণই আমাদের দেহে মেদ কমে বিনা পরিশ্রমে। ওজন হ্রাস পায় অনেকটাই।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন , খাবারের তালিকাতে জুড়ে দিন এই খাদ্য গুলি শরীরকে রাখুন ঝরঝরে ও মেদহীন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না একদম। 

 লেখক – রাহুল পাঠক