এলার্জির ভেষজ চিকিৎসা – Ayurvedic Anti-allergy Treatment

এই গ্লোবালাইজেশনের ঘূর্ণিপাকে এগিয়ে যাওয়াটাই পথ। এগিয়ে যাওয়ার আরেকনাম বড় বড় বিল্ডিং ,ঝকঝকে রাস্তা আর তাতে অবিরাম গতিতে ছুটে চলা গাড়ি। গ্লোবালাইজেশনের নামে গ্রাম আস্তে আস্তে শহর হচ্ছে। কাটা পড়ছে গাছ। যার ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। গ্লোবালাইজেশন আমাদের উপহার দিচ্ছে গ্লোবাল ওয়ারমিং। চারিদিকে বাড়ছে ধূলো। দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে বাড়াতে হচ্ছে উৎপাদন , খাবারে মিশছে রাসায়নিক। মানুষ হচ্ছে অসুস্থ।

এলার্জি একটি এমন শব্দ যার সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। এলার্জি সাধারণত কোনো একটি বিশেষ খাবার থেকে হতে পারে। আলাদা মানুষের ক্ষেত্রে সেটি আলাদা হয়। মানে কারো ডিমে এলার্জি থাকলে অন্য মানুষের ক্ষেত্রে তা না ও  হতে পারে। আমাদের কাছে এলার্জির সাধারণ ধারণা হল কোনো বিশেষ খাবার খেলে আমাদের গায়ে চাকা চাকা দাগ দেখা যায়, চুলকানি হয়, অনবরত হাঁচি কাশি দেখা যায় এবং তা চলে বেশ অনেকটা সময় ধরে। ধুলো ,বালি, ফুলের পরাগ থেকেও এলার্জির লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
এলার্জির কারণকে হাইপার সেনসিটিভিটি বলা হয়। আমাদের দেহে ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এর ভূমিকা অপরিসীম। এই ইমিউনো গ্লোবিউলিন আমাদের অর্জিত অনাক্রম্যতা। মোট পাঁচ ধরনের ইমিউনোগ্লোবিউলিন আমাদের শরীরে উপস্থিত। আমাদের অনেকের শরীরে বিশেষ কিছু খাদ্যবস্তুর ক্ষেত্রে এই ইমিউনোগ্লোবিউলিনের বিক্রিয়াতে আমাদের শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

আমাদের শরীএলার্জির ভেষজ চিকিৎসা – Ayurvedic Anti-allergy Treatment

রের পক্ষে ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুকে ক্ষতিকর ধরে নিয়ে তাকে প্রতিরোধ করার যে চেষ্টা তার থেকেই এলার্জির উদ্ভব হয়। ডিম,বেগুন, মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ প্রভৃতি খাবার থেকে যে এলার্জি  দেখা যাতা মূলত বংশগত। কিন্তু ধুলো বালি থেকে যে এলার্জি তা সাধারণত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা। এমনই এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থকে বলা হয় এলার্জেন। কোনো ক্ষেত্রে এলার্জি যেমন হয় সাধারণ আবার অনেক সময়ে এলার্জি মানুষের প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাহলে এখন জেনে নেওয়া যাক এলার্জি কত প্রকারের এবং তার উপসর্গগুলোই বা ঠিক কি।


এলার্জি যেহেতু ব্যাক্তিভেদে বিভিন্ন হয় সেকারণে বিভিন্ন এলার্জির উপসর্গের উপর ভিত্তি করে তাদের নামকরণ আলাদা হয়।


1. এলার্জিজনিত সর্দি :

এই প্রকার এলার্জিকে বৈজ্ঞানিক ভাষাতে বলা হয় এলার্জিক রাইনাইটিস। এর প্রধান উপসর্গগুলি হল
চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে জল পড়া, অনবরত হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া , নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ।
এলার্জিক রাইনাইটিস আবার দুই প্রকার- সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস এবং পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস।

সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস-  বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এলার্জির প্রভাব পরিলক্ষিত হলে সেক্ষেত্রে তাকে বলা হয় সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস।
এর উপসর্গগুলির মধ্যে প্রধানত- চোখ দিয়ে জল পড়া, নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি।
পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস-  এইপ্রকার রাইনাইটিসের স্থায়ীত্বকাল বেশি এবং অধিক প্রভাব যুক্ত। এর উপসর্গগুলি সিজনাল রাইনাইটিসের মতোই।

2. এজম্যা বা হাঁপানি –

এই রোগের ক্ষেত্রে ঘনঘন কাশি , হাঁচি, শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো শব্দ হওয়া। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগলে এই প্রকার এজম্যার ভাব দেখা যায়।

3. আর্টিকেরিয়া

আর্টিকেরিয়ার ফলে ত্বকের ওপর লালচে ভাব দেখা যায়। যার ফলে ত্বকের ওপরের অংশ ফুলে যায়। এবং চুলকানি দেখা যায়। ত্বকের অতি গভীর স্তরে হলে হাত মুখ ফুলে যেতে পারে। এই রোগ প্রধানত স্বল্পস্থায়ী হয়। কিন্তু কখনো কখনো এই রোগ দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আর্টিকেরিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়।  শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ স্বল্পস্থায়ী। 

 


4.  এলার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস :

চামড়ার কোনো কোনো অংশ খোসা উঠে ছোট ছোট দানার মতো উপাদানের উদ্ভব হয়। কোনোপ্রকার এলার্জেনের সংস্পর্শে ত্বক এলে এই প্রকার এলার্জির প্রভাব দেখা যায়।
এই রোগের ক্ষেত্রে চামড়া উঠে গিয়ে খসখসে হয়ে যায়। এছাড়াও ত্বক আঁশটে হয়ে যায়।  এই রোগের ফলে ত্বকে ফোসকা দেখা যায়।

5. এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস –

চোখ চুলকানো, চোখ লাল হয়ে যায় এই ক্ষেত্রে।

6. খাদ্য থেকে এলার্জি-

ডায়েরিয়া, বমি বমি ভাব এই রোগের উপসর্গ।

7. সাধারণ এলার্জি উৎপাদক সমূহ –

ফুলের রেণু, অতিরিক্ত ঠান্ডা,  ধুলো, বালি, ময়লা, পোকামাকড়ের কামড়, প্রসাধণী দ্রব্যের তীব্র গন্ধ  থেকে এইপ্রকারের এলার্জির উদ্ভব হয়।

8. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত  এলার্জি –

এই প্রকার এলার্জি জীবননাশী এক্ষেত্রে রোগীর হাঁচি , কাশির পাশাপাশি, রোগীর রক্তচাপ কমে যায়,অনেক ক্ষেত্রে রোগী অনেক সময় শকে চলে যায়। আগে ধারণা ছিল এলার্জি একবার হলে তা আর সাড়ে না। কিন্তু ধীরে ধীরে এই ধারণা বদলাচ্ছে। ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে এখন এলার্জির নিরাময় সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন এলার্জির চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশেষ এলার্জির ক্ষেত্রে বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরনেরও পরিবর্তন হয়।
আমাদের ঘরের রোজাকার জীবনে আমরা যা ব্যবহার করি তা থেকেই আমরা এলার্জির ওষুধ পেতে পারি। কারণ সবার ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপীর সু্যোগ নেওয়া সম্ভব না। তাই ভেষজ উপায়ে কিছু টোটকা খুঁজে আমরা নিতে পারি । তাই আপনাদের জন্য দেওয়া হল কিছু ভেষজপন্থা যার দ্বারা এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।

1. নিম পাতা 

এলার্জির ক্ষেত্রে অব্যর্থ ওষুধের নাম নিম পাতা। নিম পাতার দ্বারা এলার্জি নির্মূল সম্ভব।
নিম পাতা রোদে শুকিয়ে , তাকে গুড়ো করে রাখতে হবে। এক চামচ নিম পাতার তিন ভাগের একভাগের সাথে, এক চামচ ভূষি মিশিয়ে তাকে সকালে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ৩০ মিনিট কেটে গেলে চামচ দিয়ে নেড়ে দিনে তিনবার খেতে হবে। সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে, এবং রাতে শোয়ার আগে খেতে হবে। ২১ দিন ধরে এই সেবনের ফলে উপকার মিলবে।


2. রসূন –

রসূনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে । যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক টুকরো রসূন খেলে সংক্রমণ জাতীয় কোনও রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।


3. কলা –

কলা খুবই দরকারি একটি খাদ্য। দেহে লাল ছোপ দেখা দিলে কলা খুবই কাজে দেয়। কলা দেহের মেটাবলিসম বৃদ্ধি করে। তাই কলা এমন একটি খাবার যা খেলে এলার্জির উপদ্রব কমবে।এতে এলার্জি না কমলেও, এলার্জি দেখা দিলে তা কমাতে সাহায্য করে।  


4. ভিটামিন-সি [ কমলা লেবু]-

অনেকসময় শরীরে পাকস্থলীতে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে এলার্জি হতে পারে। সেক্ষত্রে  অ্যাসিড জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে এলার্জির প্রভাব কমবে। মধু, জল, এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেলে দেহ এলার্জিমুক্ত হবে।


5.শশা এবং  গাজর-

শরীরে কোনো খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলার্জি দেখা দিলে শশা এবং গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে খেলে এলার্জির প্রভাব দ্রুত কমবে। শশা ও  গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি এলার্জিক উপাদান থাকে।


6. আদা এবং আদা চা-

বমি ভাব, ডায়েরিয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যাতে আদা খুবই জরুরি উপাদান । এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। কিছু আদা কুচি গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে তার সাথেও  কিছুটা আদার রস এবং মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে।


7. ক্যাস্টার অয়েল –

এলার্জি জনিত খাবার খেলে শরীর অসুস্থ হয়। প্রতিদিন সকালে এক কাপ গরম জলে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টার অয়েল মিশিয়ে খেলে এলার্জির সমস্যা দূর হয়।


8. গ্রীণ টি-

এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটি এলার্জি রোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়।

ডাক্তারী পরামর্শ- এলার্জি মাঝে মাঝে জীবন নাশক রূপ নেয় তাই ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যিক হয়ে পড়ে।

এলার্জি জাতীয় খাবার থেকে এড়িয়ে যাওয়াই এলার্জির একমাত্র প্রতিরোধক উপায় ।কিন্তু ভুল করে খেয়ে নিলে এলার্জি দেখা দিতে পারে। উপরোক্ত কোনো খাবার খেলে এলার্জির প্রভাব কমবে অনেকটাই । সেক্ষেত্রে আপনিও সুস্থ থাকুন। এলার্জি থেকে দূরে থাকুন।