“জন্মিলে মরিতে হইবে, অমর কে কথা কবে” –কবিগুরুর ভাষা থেকে যদি ধার নি তাহলে বলা ভালো “ আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু”। যে শিশু আজ জন্মেছে , যে বৃদ্ধ আজ সিগনাল পার করছেন, যে ছোকরা আজ রাস্তায় শিষ দিয়ে গান গাইছে সেও জানে মৃত্যু আসবেই, আর যেদিন আসবে কোনো রকম নোটিশ পিরিয়ড না দিয়েই আসবে। আর সেই কপালের ফের ঘোরানোর সাধ্যি অমর চিত্র কথা ছাড়া, কোথাও নেই। তবুও বাস্তবটা কঠিন, রুক্ষ। যতই আমরা লজিকাল সাজি না কেন আমরা পারিনা সেই শোক, এই বুক ভারী করা সত্যকে এড়িয়ে যেতে। আমাদের চোখ লাল হয়, চোখের তলায় নোনা জলের ধারাকে আটকানো যায় না।
-
1
Quotes on Death in Bengali – মৃত্যু সম্বন্ধে কোটস
- 1.1 1. মৃত্যুঞ্জয় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- 1.2 2. সবাই – অঞ্জন দত্ত
- 1.3 3 . রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সে চলে গেল বলে গেল না
- 1.4 4. সুবোধ সরকার – রজনীগন্ধা কফিন
- 1.5 5. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – সেই সব স্বপ্ন
- 1.6 6. স্মৃতি – পুর্ণেন্দু পত্রী
- 1.7 7. “তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম” – রবি ঠাকুর
- 1.8 8. আমাকে পোড়াও – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
- 1.9 9. আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু – রবি ঠাকুর।
- 1.10 10. মৃত্যুর পরে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- 2 শেষ কথা
Quotes on Death in Bengali – মৃত্যু সম্বন্ধে কোটস
আমরা যতই বলি না কেন, আমরা নিরপেক্ষ। আমরা দিনের শেষে বায়াসড। মানে আর কিছুই না আমাদের ভালোবাসা সবার জন্য না। তাই সব মৃত্যু আমাদের মুখ থেকে “আহা রে” , “ইসস’ ,”হায় ভগবান” ইত্যাদি শব্দ বেরোলেও সব মৃত্যু চোখের জল বের করতে পারে না। কারণ সবাই তো প্রিয়জন হতে পারে না। যারা আমাদের সুখ, দুঃখ, কান্না, হাসি , ভালোবাসা, মন্দবাসার গপ্পো গুলো যাদের ঘিরে তারা যখন চলে যায়। তা আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়, মাঝরাতে ভয়ে চমকে উঠি আমরা, খাবার গলা দিয়ে নামতে চায়না। আমাদের জীবন এক বিন্দুতে থমকে যায়। আমাদের আশপাশ জুড়ে থাকে অন্ধকার, থাকে বিরাট শূন্যতা।তবে মৃত্যুতেই কি সব শেষ? না । জীবনের আকার বৃত্তের মতো তাহলে যেখান থেকে এক অংশের শুরু সেখানেই শেষ হয়ে যায়, পূর্ববর্তী অংশ। মৃত্যু মানে মানুষটার যে শরীর তার শেষ হয়ে যাওয়া। মানুষটার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো সেগুলো কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা নেই কারোরই। তারা বেঁচে থাকে আমাদের বুকের মাঝে। আর জীবন যদি কারো ভালোতে না লাগে তাহলে, তার পরবর্তী মৃত্যুও ব্যর্থ হয়ে যায়। বিখ্যাত লেখক শঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “আমি আমার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ফিরে আসতে চাই, জানতে চাই মানুষ আমায় নিয়ে কি বলছে বা আদৌ কিছু বলছে কিনা ।” লালন সাঁই এর কথাতে “মানুষ মরলে পরে বিচার হবে তার।” তাই বেঁচে থাকতে থাকতে এমন কিছু করতে হবে যাতে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যু আসবেই তার রাশ আমাদের হাতে নেই কিন্তু মৃত্যুর পর বাঁচতে চাইলে মানুষের মতো মানুষ হওয়াটা জরুরী। যাতে যেতে যেতে না মনে পড়ে “ কত কি করার আছে বাকি।” মৃত্যু কঠিন, আর এতক্ষন ধরে আপনি অনেক ভারী ভারী প্রচুর কথা পড়ছেন। কিন্তু কোন মানুষ যিনি মৃত্যু শোকে লড়াই করছেন তার পাশে থাকার চেয়ে বড় কাজ কিছু হয় না আর দিনের শেষে মানুষ হয়ে মানুষের দুঃখটাকে না ছুঁতে পারলে তার ব্যাথায় আদর না দিতে পারলে মানুষ হয়ে জন্মানোর সার্থকতা থাকে না। তাই নিচে আপনার জন্য থাকল এমন কিছু লাইন যা আপনাকে সেই দুঃখটাকে ছুঁতে শেখাবে, আপনাকে বোঝাবে মৃত্যু ভয় কে জয় করতে পারলে শান্তি আসবেই, আপনাকে শিখিয়ে দেবে “বাবুমশাই, জিন্দেগি লাম্বি নাহি বরি হোনি চাহিয়ে।”
1. মৃত্যুঞ্জয় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“আমি মৃত্যু চেয়ে বড়, এই কথা বলে যাব আমি চলে”
মৃত্যু আমাদের কাছে সেই অজানা দেশটার মতো যার অনেক গপ্পো আমরা শুনেছি, কাছ থেকে দেখেছিও হয়ত কিন্তু নিজের শরীরে তার অনুভুতি পাইনি। আর আমরা তাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পাই যাকে আমরা কোনোদিন চোখে দেখিনি, আমরা তাকে দেখে থমকে যাই হরবক্ত। কবিগুরু জীবনে মৃত্যু দেখেছেন প্রচুর কিছু তাকে ভেঙে চুরমার করেছে কিছু করেছে নির্বাক। এতকাছ থেকে মৃত্যুকে দেখতে দেখতে তার সেই ভয় দূর হয়েছে। তিনি মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে বলেছেন আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়। আমি মৃত্যুঞ্জয়ী।
2. সবাই – অঞ্জন দত্ত
“আমি অন্যকারো হাতের ভেতর এক মুঠো ছাই
আমি অন্য কিছু নই, আমি সবাই।”
আমাদের যেতে হবে একদিন, আমাদের সকলের দেহই শেষ হয়ে যাবে একদিন। রাজা, সেপাই, কোটাল সবাইকে মিশতে হবে মাটিতে। ওই একজায়গাতে এসে সবাই সমান। ভেদাভেদ গুলো একনিমেষে শেষ হয়ে যায়। আমরা সবাই সমান। আমাদের সবার জীবন রেলগাড়ি একটাই প্ল্যাটফর্মে এসে ঘুমিয়ে পড়ে , চিরতরে।
3 . রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সে চলে গেল বলে গেল না
“সে চলে গেল বলে না —
সে কোথায় গেল ফিরে এল না।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল
কি যেন গেয়ে গেল —
তাই আপন- মনে বসে আছি কুসুম বনেতে”
আমাদের আশে পাশের মানুষরা আমদের রোজকার বাসন পত্র, জলের বোতল, বিছানা, মাদুর, মশারিতে লেপ্টে থাকে। তারা চলে যায় তাদের ছোঁয়া , গন্ধগুলো থেকে যায়। সেগুলো আমাদের কাঁদায়, আমাদের ভিড়ের মাঝে একলা করে। আমাদের কলজেকে করে দেয় অবশ। আমরা হয়ে যাই পাথর। কিন্তু আমরা সেই মানুষ গুলোর গন্ধটুকু নিয়ে বাঁচতে পারি সারাজীবন। এবার আমরা কোন পথে হাঁটা লাগাবো সে পছন্দ একান্ত আমাদের।
4. সুবোধ সরকার – রজনীগন্ধা কফিন
“তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি দামিনী
মোমবাতি গুলো একটু একটু গলছে, গলে যাওয়া মোমবাতি থেকে ভারতবর্ষ জ্বলছে
তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি দামিনী, তোমাকে আমরা মারতে পারিনি দামিনী।”
কিছু মৃত্যু গোটা জাতিকে তার মানবিকতাকে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করায়। এই মৃত্যুটাও খানিকটা তাই। এই মৃত্যুশোক গোটা ভারতবর্ষকে বইতে হয়েছিল। এই মৃত্যু এতটাই বড়। সে চলে যায়নি, থেকে গেছে আমাদের ভারী করে দিয়ে রেখে গেছে আমাদের এমন এক দেশে যেখানে ভয় হয় নিজের ছায়াকেই।
5. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – সেই সব স্বপ্ন
শোনা যায় নিঃশ্বাসের শব্দ
আর সব মরে স্বপ্ন মরে না
অমরত্বের অন্য নাম হয়
কানু, সন্তোষ, অসীম রা…
জেলখানার নির্মম অন্ধকারে বসে
এখনও সেরকম স্বপ্ন দেখছে”
কিছু মানুষ মারা যান না। তারা বেঁচে থাকে যুগ যুগ ধরে। তারা থেকে যায় মনের মধ্যে, তারা বেঁচে থাকে, তাদের স্বপ্নেরা বেঁচে, কারণ মৃত্যু শারীরিক, স্বপ্নরা চিরসবুজ।
6. স্মৃতি – পুর্ণেন্দু পত্রী
”আমার স্মৃতিরা বড় উচ্ছৃঙ্খল,
দমকা হাওয়া যেন
লুকোচুরি, ভাঙাভাঙি,
ওলোটপালটে মহাখুশি
দুঃখেরও দুপুরে গায়,
গাইতে পারে, আনন্দ-ভৈরবী ।”
যারা চলে যায় তাদেরকে খুব সোহাগে আমরা স্মৃতির নাম দি, কিন্তু স্মৃতির সমস্যা এটাই , এরা বড্ড বেয়াদপ। কখন যে আসে পাশে বসে গলার কাছটাতে হাত বুলিয়ে ভাসিয়েনিয়ে চলে তার ইয়ত্তা মেলে না।
7. “তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম” – রবি ঠাকুর
“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”
রবি ঠাকুর
এই গানটি মৃত্যু বিষয়ক যেকোন কথাতেই বলা হয়। কারণ সে বেঁচে থাকে আমাদের হৃদয়ে প্রতি অলিন্দে প্রতি নিলয়ে।
8. আমাকে পোড়াও – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
”অশ্রুপাত শেষ হলে , নষ্ট করো আঁখি ।
কুঁড়িয়ো না ফুলো মালা
স্তবক সুগন্ধে আলু থালু প্রিয় কর স্পর্শ
ওর গায়ে লেগে আছে
গঙ্গা জ্বলে ভেসে যেতে দিও ওকে মুক্ত ,স্বেচ্ছাচারী
ও চির প্রনম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও ।”
জন্ম মৃত্যু শব্দের চেয়ে বেশ খানিকটা, নিজেকে নতুন করে ভেঙ্গে আবার করে গড়ার দিন কে জন্মদিন বলা যেতেই পারে, জীবন সায়াহ্নে এসে আত্মগ্লানিতে ডুবে আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে দেবার নাম মৃত্যু হতে পারে। মৃত্যু থেকে তার ছাই থেকে জন্ম নিতে পারাকে ফিনিক্স পাখি বলা যেতেই পারে।
9. আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু – রবি ঠাকুর।
“আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে
তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,
বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥”
মৃত্যু জাগতিক নিয়ম, এই নিয়মে চলছে সব্বাই তবু, পরদিন সকালে সূর্য ওঠে পাখি গান গায়। সেই আনন্দে জীবন বাঁচতে হয়।
10. মৃত্যুর পরে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
“যত কিছু ভালোমন্দ
যত কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব
কিছু আর নাই ।
বলো শান্তি , বলো শান্তি ,
দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
হয়ে যাক ছাই ।”
মৃত্যুতে জীবনের যবনিকা, মৃত্যুতে সব শেষ যেমন সেখানেই বিরাজ করে অনন্ত শান্তি।
সেখানেই থাকে পার্থিব জগতের সব রহস্যের শেষ বিন্দু।
শেষ কথা
আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই কারণ আমরা জানি, একবার চলে গেলে আর ফিরে আসা যায় না। যতই জীবনানন্দবাবু বলুন না কেন “আবার আসিব ফিরে” , ফেরার পথ কিন্তু নেই। আমাদের এই ভাবনার কারণ আমরা আমাদের নিজেকে নিজের আশপাশ, আমাদের সাথে লেপ্টে থাকা বন্ধুদের বড্ড ভালবাসি। যতই রাগ হোক না কেন আমরা জানি “ বারে বারে আর আসা হবেনা।” আমরা জানি আমরা মানিও। তবু মৃত্যু আসে আমাদের কাঁদায় একলা করে। আমাদের বন্দি করে এক নিশ্চুপ নিরালায়। আর আমরা মেনে নিয়ে লড়াই করি সবটার সাথে মানিয়ে নেওয়ার।এগিয়ে যাওয়ার। আর নতুন ভাবে শেখার তাই দুঃখ এলে লেখা গুলোতে চোখ বোলান। যা হারিয়েছেন তা হয়ত পালটে দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু জানবেন আপনি একলা নন। আপনার মতো অনেকে আছে। তাই জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে মৃত্যুর সাথে আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যাই, আমি আপনি সক্কলে। তাই এখানে রইল কিছু Bengali Sad Quotes About Death.
লেখক – রাহুল পাঠক