জন্ডিসের চিকিৎসা – Bilirubin Treatment at Home

আমাদের রোজের লড়াই আমাদের পেটের জন্য। কথাটার মধ্যে কোনো সাহিত্যিক রোমান্টিসিজম নেই, আছে কঠোর কঠিন বাস্তবতা। আমরা সবাই উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলি আমাদের প্রিয়জনদের কিছু  আনন্দের মুহুর্ত উপহার দিতে,আমাদের কাছের মানুষের মুখে দুবেলা দুমূঠো তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই লড়াইতে লড়তে গিয়ে আমরা আমাদের নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হতে পারি না।তাই আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে নানানপ্রকার রোগ।

বেশিরভাগ ভারতীয়ই ছোট বড় নানান ধরনের পেটের রোগে ভোগেন এর কারণ বেহিসেবী খাওয়া দাওয়া, আবার কখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না খাওয়া। আজও ভারতের বহু জায়গাতে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়নি। যার কারণে আজও জলবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে অনেকাংশেই।

জন্ডিসের চিকিৎসা – Bilirubin Treatment at Home


আমাদের দেহ কোটি কোটি কোষ নিয়ে গঠিত কতকগুলি কোষ নিয়ে একটি কলা তৈরি হয়, আবার কতগুলি কলা নিয়ে গঠিত হয় অঙ্গ এবং কতগুলি অঙ্গ একটি তন্ত্র গঠন করে। আমাদের দেহের দরকারি অনেক তন্ত্রের মধ্যে পৌষ্টিক তন্ত্র আমাদের দেহের চালিকাশক্তি প্রদান করে। এই তন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল যকৃৎ। আমাদের দেহে পাকস্থলীর পাশে একটু ওপরের দিকে যকৃৎ থাকে। যকৃতের মধ্যে থাকে পিত্তাশয়, পিত্তথলি, পিত্তনালী। পিত্তাশয় থেকে নিঃসৃত পিত্ত আমাদের দেহে পাচিত খাদ্যের অম্লত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন ফ্যাট জাতীয় খাদ্যকে এমালসিফায়েড করে তার পাচনে সাহায্য করে। পিত্ত বা বাইলের মধ্যে কোনো উৎসেচক থাকে না,  এর মধ্যে থাকে কিছু রঞ্জক পদার্থ থাকে। বিলিরুবিন, বিলিভারডিন, ইউরোবিলিনোজেন। বিলিরুবিন আমাদের মুত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়। বিলিভারডিন আমাদের মলকে তার নিজস্ব রং প্রদান করে।
দেহে যকৃতের বিপাকে অংশ নেওয়ার ক্ষমতা সর্বাধিক। দেহে বিলিরুবিনের পরিমাণ প্রতি ডেকালিটারে ২ মিলিগ্রামের থেকে বেড়ে গেলে আমাদের চোখ, হাতের পাতা, এবং মিউকাসের পর্দা হলুদ রঙ ধারন করলে । আমরা বলতে পারি জন্ডিস হয়। আমাদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকার অতিরিক্ত ভাঙনই এই রোগের প্রধান উৎসগত কারণ।

জন্ডিস প্রধানত পাঁচ প্রকারের হয়,
1. হেপাটাইটিস এ
2. হেপাটাইটিস বি

3. হেপাটাইটিস সি
4.  হেপাটাইটিস ডি
5. হেপাটাইটিস ই
এর মধ্যে  হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস ডি, হেপাটাইটিস ই এই রোগগুলি প্রাণঘাতী রূপ নেয়।এইসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্য কর্তব্য। এইসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।  
হেপাটাইটিস এ জন্ডিসের মূল উপসর্গগুলি হল-

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ

1. এই রোগের ক্ষেত্রে হাতের পাতা চোখের স্ক্লেরা হলুদাভ বর্ণ ধারন করে।
2. এই সময় বমি বমি ভাব, অবসাদ, খিদের প্রতি অনীহা জন্মায়।
3. এই রোগের ক্ষেত্রে মুত্রের বর্ণ হলুদ হয়ে যায়, এবং সারা শরীরে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
4. বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শরীরে নানা অংশে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
5. এই রোগের সময় লিভারের আকার বৃদ্ধি পায়।

হেপাটাইটিস বি (ক্রনিক) সাধারণত বংশগত কারণে হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি, সি, ডি, ই এর ক্ষেত্রে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এবং উপসর্গগুলি খুবই প্রাণনাশী রূপ নেয়।

জন্ডিসের উপসর্গগুলি সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। জন্ডিস নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকরকমের ধারণা থাকলেও, কারণ গুলি আমাদের জানা থাকলে সেই রোগ নিরাময়ের থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি সহজেই। কারণ কথাতেই আছে, “prevention is better than cure”। তাহলে এখন দেখে নেওয়া যাক কি কি কারণে আমাদের জন্ডিস হতে পারে।

জন্ডিস হওয়ার কারণ  

1.  জন্ডিস প্রধানত জলবাহিত রোগ। অপরিষ্কার জলপান করলে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
2.  অতিরিক্ত মদ্যপান করলে জন্ডিসের মতো রোগ হয়। কারণ এর ফলে যকৃতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
3.  জন্ডিসের প্রধান কারণ হিমোলাইসিস। হিমোগ্লোবিনের হিমের বিয়োজন ঘটে। হিমোলাইসিস প্রধানত দেহে জীবানু ঘটিত আক্রমণের ফলে দেখা যায়।
4.  শিশুদের জন্মের সময় লোহিত রক্ত কণিকা গঠন এবং ভাঙনের মধ্যদিয়ে যায় ফলে  শিশুদের জন্মের সময় জন্ডিস দেখা যায়।
5.  বেহিসেবী খাদ্যগ্রহণ এই রোগের অন্যতম মূল কারণ।
6.  রিফাম্পিসিনের মতো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রূপে জন্ডিস দেখা যায়।
7. এছাড়াও লিভারে টিউমার, লিভারে , অগ্ন্যাশয়ে বিষক্রিয়া ঘটলে জন্ডিসের দেখা  মেলে।

জন্ডিস এর প্রতিরোধ 

এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় সঠিক  সময়ে রোগের নিশ্চিত রূপে রগ নির্ণয় করলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব।  এছাড়াও খাওয়া দাওয়ার প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। ডাক্তারের  নিয়মিত রক্ষণা বেক্ষণের মধ্যে থাকতে হবে।

প্রতিকার-
1.  এই রোগের ক্ষেত্রে বিশ্রাম নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। কারণ বিশ্রাম ছাড়া এই রোগ প্রতিকার সম্ভব নয়।
2. যথা সম্ভব হালকা খাবার খাওয়া, ফলের রস, এবং সহজপাচ্য খাদ্যগ্রহণ করা উচিত।
3.  এই সময় প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ব্যাথার ওষুধ, ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। যথা সম্ভব চিকিৎসকের কথা মতো জীবন যাপন করা উচিত।
4. বেশি করে জল খাওয়া উচিত , এবং আয়রন যুক্ত সব্জি খাওয়া উচিত।
5. হেপাটাইটিস বি এর টীকা নিলে এই রোগের সংক্রমণ হয় না।
6. ফ্যাট জাতীয় খাওয়ার ত্যাগ করা উচিত।


ডাক্তারের পরামর্শ ও শেষ কথা 

এই রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের রেগুলার চেক আপে থাকা উচিত। এই রোগে ডাক্তারের কথামতো  ওষুধ খাওয়া উচিত। এই রোগ সেরে গেলেও ডাক্তারের কথা মতো চলা উচিত। হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে রোগ সেরে গেলেও প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যা ভবিষ্যতে লিভার সিরোসিসের কারণ রূপে দেখা দিতে পারে।

জন্ডিসের প্রকোপ নিয়ে অনেক ধারণা আছে । তাই কোনো টোটকাতে ভরসা না করে। ডাক্তারের কাছে যান। আর সুস্থ থাকুন , আনন্দে বাঁচুন। খাবার খাওয়ার আগে তাঁকে চিনে নিন। জন্ডিসকে ভয় না পেয়ে চিকিৎসা করান। সুস্থ বাঁচুন।